Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট আজ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:১০ AM
আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৭:১৭ AM

bdmorning Image Preview


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে আজ ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর কিছু সংঘাতে উত্তেজনা ছড়ানোর মধ্যে প্রচার শেষে ভোটের সরঞ্জাম পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুত সব স্থানে, সব মিলিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ।

এ নির্বাচনে ভোটাররা দেশ শাসনের গণরায় দেবেন আজ। তাদের এ রায়ে নির্ধারিত হবে আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল বা জোট সরকার গঠন করছে। গণরায় জানাতে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে নানা অনিশ্চয়তা পেরিয়ে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেও ভোটের আগের দিন সন্দেহ আর আশঙ্কাই ফুটে উঠল দুই প্রধান দলের কথায়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, ভোটের দিন দেশজুড়ে নাশকতা চালাতে পারে বিএনপি জোট। সেই রকম `তথ্য রয়েছে’ বলেও দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠে সন্দেহ, সরকার আর ইসির ‘যোগসাজশে কারচুপির দিকে যাচ্ছে’ নির্বাচন। তার ভাষায়, নির্বাচন প্রক্রিয়াটি `অর্থহীন’ হয়ে এসেছে।

আবার দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি কামাল হোসেনকে সঙ্গী করে ভোটে এলেও থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ফুটেছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কথায়।

দীর্ঘ দশ বছর পর সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ায় তীব্র শীতেও সারা দেশে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন ঘিরে যেমন উৎসবের আবহ তৈরি হয়েছে, তেমনি শঙ্কাও কাজ করছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা শনিবার সংবাদ সম্মেলনে নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভোটারদের নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

এ নির্বাচনে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে আছে। এতে সবমিলিয়ে ১ হাজার ৮৬১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৭৩৩ জন ও বাকি ১২৮ জন স্বতন্ত্র। দীর্ঘ দশ বছর পর সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করায় প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও সারা দেশে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ ও পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পরস্পরের বিরুদ্ধে ভোটের মাঠ অস্থির করার অভিযোগ তুলেছেন। এর পাশাপাশি কয়েকদিন ধরে সারা দেশে নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরা সভা-সমাবেশের মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছেন।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রায় এক দশক পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ২৭২ জন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ২৮২ জন লড়ছেন। এর মধ্যে সরাসরি আওয়ামী লীগ দলীয় ২৬০ জন ও বিএনপির ২৫৭ জন প্রার্থী রয়েছেন।

দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা বাকিরা জোটভুক্ত শরিক দলের। এ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলে থাকা ৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন। পক্ষান্তরে মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটে থাকা ৪টি দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মাঠে রয়েছেন। কারাগারে থাকায় এবারই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভোটে অংশ নিতে ও ভোট দিতে পারছেন না।

ইসি সূত্রে আরও জানা গেছে, এবার তিনশ’ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭। এতে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোট কেন্দ্র ও ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এবারই প্রথম ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে। আসনগুলো হচ্ছে- রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২, ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩ ও চট্টগ্রাম-৯। এসব আসনের ৮৪৫টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৩৮ ভোটকক্ষে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে। এ ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ২২ হাজার। যদিও এ মেশিন ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

ইসির তথ্য অনুযায়ী দেশের তিনশ’ আসনে ভোট কেন্দ্র ৪০ হাজার ১৮৩টি ও ভোটকক্ষ ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২টি। ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ ও নারী ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন। অংশগ্রহণকারী রাজনৈতি দলের সংখ্যা ৩৯টি। তবে জোটের আড়ালে বেশ কয়েকটি অনিবন্ধিত দলের নেতারা নিবন্ধিত দলের প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন। এ নির্বাচনে সব মিলিয়ে প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৮৬১ জন; এর মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৭৩৩ জন ও স্বতন্ত্র ১২৮ জন।

এর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিল। এরপর তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল বর্জন করে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১২টি দল অংশ নিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। ২০০৮ সালের পর এবার নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়ায় দেশ ও বিদেশে এ নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। সুষ্ঠু ও নির্ভয়ে ভোটগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইতিমধ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন।

৮ নভেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিএনপি, যুক্তফ্রন্টসহ কয়েকটি দলের দাবির মুখে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করা হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৩ আসনে আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোটের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, নানান ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে টানা ১৯ দিন প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। প্রচার ঘিরেই মূলত উৎসবের আবহ তৈরি হয়। শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ রয়েছে। শনিবার দেশের সব ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল পৌঁছে গেছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আজ সকাল ৮টায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু করবেন।

এ নির্বাচনের নিরাপত্তায় প্রায় সাত লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। এতে সেনা সদস্যসহ নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখ ৭৩ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন ৬ লাখ ৮ হাজার ও বাকি ৬৮ হাজার ৬১০ জন কেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স, মোবাইল টিমসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবেন।

ভোট কেন্দ্রে নিয়োজিত বাহিনীগুলোর মধ্যে পুলিশ এক লাখ ২১ হাজার, আনসার ৪ লাখ ৪৬ হাজার, গ্রামপুলিশ ৪১ হাজার সদস্য রয়েছেন। আর ভোট কেন্দ্রের বাইরে মোতায়েন করা বাহিনীর মধ্যে ৩৮৯টি উপজেলায় সেনাবাহিনী ৪১৪ প্লাটুন (১২ হাজার ৪২০ জন), নৌবাহিনী ১৮ উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন, কোস্টগার্ড ১৮ উপজেলায় ৪৮ প্লাটুন (এক হাজার ২৬০ জন)/বিজিবি ৯৮৩ প্লাটুন (২৯ হাজার ৪৯০ জন); র‌্যাব ৬০০ প্লাটুন (১৮ হাজার) এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স দুই হাজার প্লাটুন (প্রায় ৬৫ হাজার)। এছাড়া নির্বাচনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬৪০ জন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এক হাজার ৩২৮ জন (এর মধ্যে ৬৫২ জন আচরণ বিধি প্রতিপালনের জন্য) মাঠে রয়েছেন।

রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা : দেশের সব সংসদীয় আসনের নির্বাচন শেষ করতে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় সমসংখ্যক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই বিভাগীয় কমিশনার এ দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।

এ নির্বাচনে ওআইসি, কমনওয়েলথসহ কয়েকটি সংস্থার ইসির আমন্ত্রিত ও স্বেচ্ছায় ৩৮ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক এসেছেন। এছাড়া কূটনৈতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের দূতাবাস, হাইকমিশন ও বিদেশি সংস্থায় নিয়োজিত ৬১ জন বাংলাদেশি কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। অপরদিকে দেশীয় ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৩৪ হাজারের বেশি পর্যবেক্ষক আবেদন করলেও অনুমোদন দেয়া হয়েছে ২৫ হাজার ৯০০ জনকে।

Bootstrap Image Preview