Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শেষ প্রচার যুদ্ধ, ভোটের অপেক্ষায় সারা দেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:১৬ AM
আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:১৬ AM

bdmorning Image Preview


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদেই সারাদেশে শুরু হবে ভোট উৎসব। টানা ১৯ দিন বিরামহীনভাবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে চষে বেরিয়েছেন প্রার্থীরা। শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি সম্পন্নে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

গত ১০ ডিসেম্বর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয় প্রচারণা উৎসব। এবারের নির্বাচনে মূলত দুটো জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দুই জোটের প্রার্থীর বাইরে আরো কিছু দল নিজ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। জেলায় জেলায় ব্যালট পেপার পাঠানো শেষ হয়েছে। আশা করছি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে এবারের ভোট সম্পন্ন হবে। ভোটারদের মাঝে যথেষ্ট উত্সাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। আমরা আহবান জানাব, আগামী ৩০ তারিখ সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা তাদের ভোটরাধিকার প্রয়োগ করবেন।

এবারের নির্বাচন বিভিন্ন দিক থেকে আলাদা। যেমন এবারই প্রথম সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রথম বারের মতো বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পরিবারের কেউ নির্বাচনে মাঠে নেই। তাছাড়া প্রথম বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহৃত হচ্ছে।

নানা অভিযোগ ও শঙ্কার মধ্যে দিয়ে প্রচার-প্রচারণা শেষে প্রার্থীরা এখন ভোটের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছেন। আগামী রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।

যদিও শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা এখনো শঙ্কিত। প্রচারণার শেষ দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সারাদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে গেছেন।

প্রচার প্রচারণার বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনার আলোকে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ‘১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টা ও ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অর্থাৎ, ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল, শোভাযাত্রা করা যাবে না।’

নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র ও কক্ষের নিয়ন্ত্রণে আজ শুক্রবার থেকে মাঠে নামছেন ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ-আনসার সদস্যরা। এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর র‍্যাব, ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী ও ২০ ডিসেম্বর বিজিবি মাঠে নামে। তিন স্তরের নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবমিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পাঁচ লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকবেন।

এবারের নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৪ থেকে ১৫জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওড় এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি থাকবে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে মোতায়েন করা হবে।

এদিকে, আজ মধ্যরাত থেকে সারাদেশে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ এবং ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সড়ক ও নৌপথের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ২৯ তারিখ মধ্যরাত থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা সব ধরণের বাস, টেম্পু ও নৌযান বন্ধ থাকবে। সাংবাদিকদের নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহারের উপরে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা শিথিল করেছে ইসি। এখন নির্বাচন কমিশনের অনুমতি সম্বলিত গাড়ির স্টিকার নিয়ে তারা মটরযান ব্যবহার করতে পারবেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৩০০ আসনে ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার। নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোট কেন্দ্র ও ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এছাড়া সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা মনিটরিংয়ে আজ ইসিতে ‘আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং’ কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে।

নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম রোধে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে ২৪৪জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছে। আজ থেকে আরো ৬৪০জন প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামছেন। ভোটগ্রহণের আগে-পরে ৫দিন মাঠে থাকবেন। এছাড়া প্রার্থীদের আচরণ বিধি লঙ্ঘনের কারণে ৬৭৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব বন্ধ করতে এবং অবৈধ অর্থ লেনদেন বন্ধ করতে বিকাশসহ দেশের সকল মোবাইল ব্যাকিং বন্ধ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২৮ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এই আদেশ কার্যকর থাকবে।

Bootstrap Image Preview