রাহমান চৌধুরী।।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বহুজন একপক্ষের হয়ে আর একপক্ষের কুৎসা রটনা করে বেড়াচ্ছেন। বহুজন মিথ্যা গালগল্প তৈরি করছেন। বহুজনের নিজ মার্কার পক্ষে ভোট চাওয়ার কায়দা দেখে মনে হয়, দেশের সব ভোটাররা নির্বোধ বা অন্ধ, যেন কাকে ভোট দিতে হবে সে ব্যাপারে ভোটারদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। তিনি তাদের ভোট দেয়ার ব্যাপারে পাঠদান করছেন। নিজের ছাত্র মনে করছেন।
এগুলি হচ্ছে নিজেকে পণ্ডিত মনে করে সাধারণ মানুষকে বোকা ভাবা, কারণ সাধারণ মানুষকে এরা সম্মান করতে জানে না। বহুজন আমাকে ম্যাসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে বিশেষ মার্কায় ভোট দিয়ে গণতন্ত্র রক্ষার দায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। যেন তার কাছ থেকে আমাকে গণতন্ত্রের পাঠ গ্রহণ করতে হবে। বিরাট আত্মবিশ্বাস নিয়ে তারা অনেকে আমাকে এমন সব তথ্য পাঠিয়েছেন যে, তা পাঠ করলেই যেন আমি তার পক্ষে চলে যাবো। আর তার পছন্দের মার্কাকে ভোট দিয়ে বসবো, যেন আমার মধ্যে কোনো মতামত গড়ে ওঠেনি।
সত্যি বলতে আমি মনে করি এসব প্রচারে লাভ খুব কম। নির্বাচনের একটা হিসাব নিকাশ আছে, মানুষ তার ভিত্তিতেই ভোট দেবে। বহু সময়ে একজন ভোটার হিসেব মিলাতে গিয়ে তার কাছে যে ভালো মানুষ তাকে আর ভোট দেয় না। ভোট দেয় তার হিসেবে যাকে ভোট দেয়া দরকার। ভোটের হিসাবটা ভিন্ন। ধরা যাক ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিএনপি থেকে নির্বাচন করলে যারা বিএনপিকে ভোট দিতো, তাদের মধ্যে কিছু মানুষ এখন আর বিএনপিকে ভোট দেবে না, তাহলে দলীয় আদর্শ আর সবসময় বড় ব্যাপার থাকছে না। ইনাম আহমেদ ভয়াবহভাবে প্রমাণ করেছেন এদেশের দলীয় রাজনীতির রূপটা কেমন! তিনি যখন রাতারাতি আর একটা দলে জায়গা পেলেন, তখন তা প্রমাণ করলো, দলগুলির আদর্শ, সেখানে সদস্যপদ লাভ করার যোগ্যতা, দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রকৃত চেহারাটা কী?
অতএব যিনি বিএনপির সদস্য হতে পারেন, তিনি আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারেন। আওয়ামী লীগের সদস্য আর বিএনপির সদস্যদের মধ্যে কোনো আদর্শগত পার্থক্য আছে এমন ভাবার কারণ নেই। তা থাকলে এনাম আহমেদ রাতারাতি আওয়ামী লীগের সদস্য হতে পারতেন না। অতএব যারা বুঝাতে চান, আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মধ্যে নীতিগত পার্থক্য আছে তার কোনো প্রমাণতো পেলাম না। বরং দেখলাম, বিএনপির আদর্শ নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগাদান করা যায়। ফলে যারা একে অপরের বিরুদ্ধে সত্যমিথ্যা কুৎসা রটাচ্ছেন তারা মনে হচ্ছে এনাম আহমেদ চৌধুরীর মতো সজ্জ্বন, সুবিধাবাদী। এনাম আহমেদ ছিলেন শেষজীবনে পরামর্শক, মানে বুদ্ধি দিতেন। মানে বুদ্ধিজীবী। তারমানে বুদ্ধিজীবীরা দল পাল্টায়। প্রয়োজনে এরা দেশ বিক্রি করে, জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
আইয়ুব, মোনায়েম খানের সময় একদল লোক, একদল বুদ্ধিজীবী শিল্পীরা শাসকদের দালালী করতেন, সরকারের কালাকানুনের পক্ষে দাঁড়াতেন। এখনো তা ঘটে। মানুষ সুবিধা মতো একটি ঘটনায় প্রগতিশীল সাজে আবার সুবিধা মতো আর একটি ঘটনায় প্রতিক্রিয়াশীল শাসকদের সাথে হাত মেলাতে পারে। আমরা সকলেই ঘটনার স্রোতে ভেসে বেড়াই। সুযোগ-সুবিধা মতো নানা চরিত্রে অভিনয় করি। একদল যখন পাকিস্তানের কাছে দেশ বিক্রি করে, তখন যেসব প্রগতিশীলরা তারা বিরুদ্ধে লড়াই করে, সে প্রগতিশীলদের কেউ কেউ পরে নির্দ্বিধায় আবার অন্যের কাছে দেশ বিক্রি করে নিজের ভাগ্য পাল্টাবার জন্য।