Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ 

আসাদ গাজী, শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:১৬ PM
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৫:১৬ PM

bdmorning Image Preview


শরীয়তপুর মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের প্রয়াত জাতীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

এ উপলক্ষে রবিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে দোয়া মাহফিল, স্মরণ সভা ও বর্ণাঢ্য র‍্যালির আয়োজন করা হয়। 

তিনি ১৯৪২ সালের ১ আগস্ট তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের আলহাজ আমিন উদ্দিন বেপারীর ঘরে আরমাতা বেগম আকফতুন নেছার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। তার ৭০ বছর জীবনের ৫৫ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শেষে ২০১১ সালের এই দিনে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কিংস কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৫৮ সালে ডামুড্যা মুসলিম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা কলেজে ভর্তি হন আব্দুর রাজ্জাক। এরপর ১৯৬০ সালে ঢাকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। তার রাজনৈতিক জীবনে তিনি বেশ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছিলেন।

পরাধীন বাংলায় ৫০ এর দশকের মধ্যমভাগ থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন মরহুম আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৬০-৬২ সাল পযন্ত র্পূব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্র সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিএস নির্বাচিত হন (এতে শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ডঃ ওয়াজেদ আলী মিয়া ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন)।

১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধু আব্দুর রাজ্জাককে কাজী আরেফ আহমেদ ও সিরাজুল আলম খানের সমন্বয়ে নিউক্লিয়াস অব বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বাবিএফএল গঠন করে চূড়ান্ত মুক্তির লক্ষ্যে সংগঠিত হওযার নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি ৬৩-৬৫ সাল পযন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫-৬৬ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বাকির সাথে এবং ৬৬-৬৭ সালের কমিটিতে ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর সাথে পর পর দুইবার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৯-৭২ সাল পর্যন্ত আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি (বঙ্গবন্ধু ছিলেন সভাপতি)। 

১৯৭৫-৭৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ কৃষকশ্রমিক আওয়ামী লীগ বাকশালের সম্পাদক ছিলেন, আব্দুর রাজ্জাক (বঙ্গবন্ধু ছিলেন চেয়ারম্যান)। ১৯৭৮ থেকে ৮১ সাল পর্যন্ত পর পর দুইবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় প্রথমবার সভাপতি ছিলেন, আব্দুল মালেক উকিল ও পরের বার শেখ হাসিনা।

১৯৮৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেড়িয়ে গিয়ে পুনরায় বাকশাল গঠন করে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯১ সালে বাকশাল বিলুপ্ত করে আবার আ'লীগে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৯২-২০০৯ সাল পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আব্দুর রাজ্জাক পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সফল মন্ত্রী হিসেবে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতিও ছিলেন তিনি। এ ছারাও ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। যুদ্ধকালীন মুজিব বহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে ভারতের দেরহাদুন ও মেঘালয়ে একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক। এর আগে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সাহসী দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি পঞ্চাশের দশক থেকে ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর একজন স্নেহভাজন, বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট রাজনৈতিক সহচর হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ  করেছিলেন। ৭৫ ট্রাজেডির পরে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের জন্য কাজ করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার তাকে কারারুদ্ধ করেছিল।

আব্দুর রাজ্জাক প্রথম ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তৎকালিন ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট থানা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-১৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য বিজয়ী হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের তৎকালিন একাংশ (মাদারীপুরের কালকিনি ও গোসাইরহাট) নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত ২য়, ৩য় ও ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারণে তিনি অংশগ্রহণ করেন নি। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ এর ৫ম, ৭ম, ৮ম ও ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে পর পর ৪ বার তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯১ সালে আব্দুর রাজ্জাক শরীয়তপুর-৩ ও মাদারীপুর-২ আসন থেকে, ১৯৯৬ সালে শরীয়তপুর-১ ও শরীয়তপুর-৩ আসন থেকে, ২০০১ সালে শরীয়তপুর-৩ ও ফরিদপুর-৪ আসন থেকে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি প্রতিটি আসন থেকেই সম্মানের সাথে বিজয় লাভ করেন। আব্দুর রাজ্জাকের জৈষ্ঠ্য পুত্র নাহিম রাজ্জাক বর্তমান নেতার পিতার আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আব্দুর রাজ্জাকের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ তার নির্বাচনী এলাকার ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলা এবং শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের ব্যাপক কর্মসূচি পালনের প্রস্ততি গ্রহণ করেছেন। এই জ্যোতির্ময় পুরুষের প্রয়াত দিবসে শরীয়তপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ তার বিদ্রেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন। 
 

Bootstrap Image Preview