Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যেভাবে সামরিক জান্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন সুচি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৩৪ PM
আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৩৪ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


মিয়ানমারে ২০১২ সালের উপনির্বাচনে অংশ নেয় অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি সুচি নিজে। তাবে তার দল নিরঙ্কুশ জয় পায়।

সে বছর অনির্বাচিত সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন তিনি। তবে তার বছরখানেক আগে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের সে সময়ের শীর্ষ জেনালের থেইন সেইনের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে সুচির।

মূলত তখন থেকেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়েছিল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর এমনটাই বলছে। এক সময়ের বিশ্ব নায়ক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সুচি বিরুদ্ধে এখন নিন্দার ঝড় বাইছে।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে তিনি শান্তিতে নোবেলও জয় করেছিলেন।

জান্তা সরকারের সঙ্গে সখ্য শুরু হলে তখন সেনা কর্তৃপক্ষ সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করে। যার নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান থেইন সেইন।

এর কয়েকদিন পরেই সু চিকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হয়। তার এ মুক্তিকে বিশ্বজুড়ে অভিনন্দন জানানো হয়েছিল। ২০১১ সালের আগস্টে সু চি প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করেন।

এর মাধ্যমে শুরু হয় সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত সরকারের সঙ্গে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা অং সান সুচির এক কৌশলী মিথস্ক্রিয়া।

সে বছর নভেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন যান মিয়ানমার সফরে। অর্ধশত বছরের মধ্যে সেটাই ছিল মার্কিন কোনও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফর।

২০১২ সাল নাগাদ দেশটির ওপর থাকা সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। অন্যদিকে সাবেক সেনাপ্রধান ও তখনকার প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনও সেন্সরশীপ তুলে নেয়ার আদেশ দেন। এছাড়াও মুক্তি দেন শত শত রাজবন্দিকে।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড ২০১১ সালে সু চির সঙ্গে দেখা করেন ইয়াঙ্গুনে। সু চি ও তার সহযোগীরা দুইটি ভাঙাচোরা গাড়িতে করে উপস্থিত হন সাক্ষাতের জন্য। ওই দুইটি গাড়িই তাকে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

সু চি ২০১২ সালের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যদিও আশঙ্কা ছিল, তার নির্বাচনে অংশগ্রহণে এমন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বৈধতা পেয়ে যাবে, যা সামরিকতন্ত্রের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট।

প্রচার চালানোর সময় ভোটারদের কাছ থেকে বিপুল সমাদর পেয়েছিলেন সু চি। উপনির্বাচনে তার দল এনএলডি ৪৪ আসনের মধ্যে ৪৩টিতে বিজয়ী হয়। সু চি ইয়াঙ্গুনের ছোট গ্রাম কামুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড মনে করেন, সু চি রাজনৈতিক প্রক্রিয়াটির ভেতরে ঢুকে তার পরিবর্তন ঘটাতে চেয়েছিলেন।

২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৮০ ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। তখন কয়েক হাজার লোকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল।

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করছিলেন রোহিঙ্গারা। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ মৌলিক অধিকারগুলোতে তাদের প্রবেশাধিকার ছিল না বললেই চলে।

একই বছর জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, দুই লাখ ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সহিংসতা ও দারিদ্রের কারণে তাদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল।

২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে সুচির দল। বিশ্ববাসী আশা করেছিলেন, তিনি দেশটিতে স্বাধীনতা ও স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন।

কিন্তু গত বছরে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন অভিযানের মুখে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। হত্যা, ধর্ষণ, অঙ্গহানি, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার বিভৎসতার বিবরণ পাওয়ায় যায় বাংলাদেশে আসা এসব রোহিঙ্গাদের ভাষ্যে।

এভাবে তিন বছরের মাথায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে এক বিচ্ছিন্ন নেতায় পরিণত হন সুচি।

জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে বলেছে, সুচি ও তার সরকার এসব অসহায় মানুষকে রক্ষায় কোনো ভূমিকা নেয়নি।

Bootstrap Image Preview