Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনী ইশতেহারের লড়াইয়ে আ.লীগের জয়ে বিএনপির পরাজয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:১৬ PM
আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:১৬ PM

bdmorning Image Preview


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১০ দিন। যথারীতি আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। দুই দলের নির্বাচনী ইশতেহারের সাথে যুক্ত হলো ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার। তিন দলের ইশতেহারে কে বেশি এগিয়ে সেই প্রশ্ন যেমন ঘুরপাক খাচ্ছে ভোটারদের মাথায়, তেমনি ইশতেহারের উল্লেখিত বিষয়গুলোকে বিজয়ী দলগুলো পরবর্তীতে কতটুকু পালন করতে পারবেন সেটি নিয়েও ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

দুই রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার এই মুহুর্তে ঘুরে ফিরে আলোচনায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে। তবে সবার আগে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে বামফ্রন্ট। চুলছেড়া বিশ্লেষণ করে নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনায় অন্যান্য দলগুলোর চেয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারকে অনেক যৌক্তিক, বাস্তব সম্মত, প্রয়োগিক এবং সময়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করেছেন বেশিরভাগ মানুষ।

এবারের ভোটে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে দুইকোটির অধিক তরুণ ভোটারকে। দুদলের কাছেই এরা সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ইশতেহারে ‘ইয়ুথ প্ল্যান’ চালুর অঙ্গীকারে করেছে তুরণ ভোটারদের সাথে।অন্যদিকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত তরুণদের স্বার্থসংরক্ষণের জন্য ইয়ুথ পার্লামেন্ট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতে অধিকতর বিনিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রাধিকার, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি, ‘যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’স্থাপন, ‘তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা, তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিরর কথা বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে।

২০২৩ সাল নাগাদ অতিরিক্ত এক কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া ওই সময়ে নতুনভাবে এক কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে।তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজশর্তে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতিমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে।

বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০০১-০৬ সাল পর্যন্ত যে বিভৎস নারকীয়তা করেছিল এবং তাণ্ডব করেছিল। জনবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছিল। সেটার জন্য জাতীর কাছে ক্ষমা চায়নি। বরং বিএনপি বলেছে, এই নির্বাচন খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার সম্মান রক্ষার নির্বাচন। তারেক জিয়ার মত এমন একজন বিতর্কিত ব্যাক্তিকে নির্বাচনী ইশতেহারে নিয়ে আসার ফলে জনমনে আশংকা তৈরী হয়েছে, বিএনপি এবং জামাত যদি নির্বাচনে আসে তাহলে কি ২০০১-০৬ এর মত পরিস্থিতি আবার তৈরী হবে?

বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের ভাতা প্রদান করা হবে। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা ব্যবস্থা বিলোপ করা হবে। ৫ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী কোটা ব্যতিরেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। এসবই বিএনপির অতীত আচরণের সাথে অনেকটা হাস্যকর বলে মনে করে ভোটার ও বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যে নির্বাচনী ইশতেহার যতটা না মানুষের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, অগ্রযাত্রার কথা বলা হয়েছে। তার চেয়ে বেশি করা হয়েছে সমলোচনা এবং নানা রকম শুদ্ধি অভিযানের গল্প। নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বেশি জোর দিয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, চাকুরিতে বয়সসীমা তুলে নেয়া,  সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার মত বিষয়গুলোকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের এইসব ব্যাপারে তেমন উৎসাহ নেই।

সাধারণ মানুষ মনে করে, সংসদ দ্বি-কক্ষ হলো না এক-কক্ষ হলো সেটা মূল বিষয় না। মূল বিষয় হলো জনগনের কল্যান কতটুকু হলো। জনগনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কতটুকু হলো। সেই বিবেচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি যে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ঠ সংসদের প্রস্তাব করেছে এবং রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাব করেছে, তা তেমন ইতিবাচক হয়নি।

বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এই ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার কথা বিএনপি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিল। ২০০১ এর নির্বাচনী ইশতেহারেও বলেছিল। কিন্তু বিএনপি বাস্তবে তা করেনি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির নির্বাচনে অনেক কিছুই করা হবে, অনেক কিছু দেয়া হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু এ সুনির্দিষ্ট রুপরেখা এবং রুপপরিকল্পনা বলা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ কিছু সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী প্রয়োগ করেছে। বিশেষ করে তরুনদের আত্নকর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি। নতুন নতুন প্রশিক্ষনের মত বিষয়গুলো জনমনে আশার সঞ্চার করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ইন্টারনেট সুবিধা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন তরুন বান্ধব কর্মসূচী এই নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ অন্যদের কে পিছিয়ে ফেলেছে।

দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া এখন আর স্বপ্ন নয়। ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। যা, ২০০৯ সালের আগে ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সরকার সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৬২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারিত হয়েছে ১১ হাজার ২৯৩ সার্কিট কিলোমিটার। বর্তমানে বিতরণ লাইনের সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার এবং গ্রিড সাব স্টেশন (এমভিএ) এর ক্ষমতা ৩৬,৯১২-তে পৌঁছেছে।

সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে এবং বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৬৪ কিলোওয়াটে পৌঁছেছে। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও নিরলস প্রচেষ্টার ফলে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ ২০০৯ সালের ১৭.৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ২৭.০০ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে এবং গ্যাস ক্ষেত্রের সংখ্যা ২৩টি থেকে বেড়ে ২৭টিতে দাঁড়িয়েছে। সরকার তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ১৬ হাজার ৬৯৬ লাইন কিলোমিটার, দ্বিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা করেছে এবং ৫ হাজার ২৩৬ বর্গ কিলোমিটার ত্রিমাত্রিক জরিপ এবং ১৯ হাজার ৪১২ লাইন কিলোমিটার ভূতাত্ত্বিক জরিপ সম্পন্ন করেছে।

বর্তমানে সরকার ১২ কেজি পর্যন্ত এলপিজি’র মূল্য ১৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৫০-৯০০ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এলপিজি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচটি থেকে ১৮ টিতে বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন গবেষণা সংস্থা দ্য স্ট্যাটিসটিক্স। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এ স্বীকৃতিকে সরকারের অর্জন হিসেবে মন্তব্য করে জনগণকে উৎসর্গ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

নির্বাচনী লড়াইয়ের ইশতেহারেই আওয়ামী লীগই জয়ী হলো। এবার ইশতেহারের মতো চূড়ান্ত বিজয়ের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ ডিসেম্বরের জন্যে। 

Bootstrap Image Preview