Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হৃদে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা এইডস রোগীর, সব পানি বদলে দিল গ্রামবাসী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৫০ AM
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৫০ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ভারতের কর্নাটক রাজ্যের একটি ছোট্ট গ্রাম মোরাব। এই গ্রামেই রয়েছে ৩৬ একরের একটি বিশাল হৃদ। আকারে প্রায় ২৫টা ফুটবল মাঠের সমান সেটা। এই হ্রদটি নাবালগুন্ড তালুকের মধ্যে সবচেয়ে বড়। একে মোরাব গ্রামের ‘লাইফলাইন’ও বলা যেতে পারে! কারণ পুরো গ্রামের বাসিন্দারা পানির জন্য এই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল। এই হ্রদের পানি গ্রামবাসীরা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করেন।

আনন্দবাজার জানায়, সপ্তাহখানেক আগে এই হ্রদেই ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন গ্রামেরই ৪০ বছর বয়সী এক নারী। গত ২৯ নভেম্বর নারীর দেহ হ্রদের জলে ভাসতে দেখেন কয়েকজন গ্রামবাসী। দাবানলের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়ে গোটা গ্রামে। গোটা গ্রাম জানত ওই নারী এইডস-এ আক্রান্ত। ফলে তার দেহ যখন হ্রদের জলে ভাসতে দেখেন গ্রামবাসীরা, তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নারীর মৃত্যুর জন্যই কি এই আতঙ্ক? গ্রামবাসীদের মুখে কিন্তু এ ব্যাপারে অন্য কথাই শোনা গেল। এবং তারা যে কথাগুলো বললেন তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। নারীর মৃত্যুতে নয়, তার শরীরে বাসা বাঁধা জীবাণুই গ্রামবাসীদের মনে আতঙ্কের কারণ। তাদের ধারণা, ওই নারীর শরীরে থাকা এইডস-এর জীবাণু হ্রদের জলে মিশে গেছে। ফলে সেই পানি দূষিত হয়েছে। কোনওভাবেই ওই পানি আর পানের যোগ্য নয় বলেই মনে করছেন তারা।

উপায় অবশ্য বের করে ফেলেছেন গ্রামবাসীরা নিজেই। হ্রদের সব পানি সব তুলে ফেলতে হবে এখনই। তারা গোঁ ধরে বসেন এই পানি আর খাবেন না। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে দরবারও করেন গ্রামবাসীরা।

প্রশাসনের কানে খবরটা পৌঁছাতেই কর্মকর্তাদের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ে। বলেন কি গ্রামবাসীরা! এত বড় একটা হ্রদের জল ফেলবেন কীভাবে? প্রশাসনিক কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এইচআইভি আক্রান্ত ওই নারী হ্রদে আত্মহত্যা করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার শরীরের জীবাণু কোনওভাবেই পানিতে মেশেনি। আর এইচআইভির সংক্রমণ ও ভাবে হয় না। শুধু তাই নয়, পানির পরীক্ষা করারও আশ্বাস দেয় প্রশাসন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! গ্রামবাসীরাও নাছোড়।

এক গ্রামবাসীর জানান, এইচআইভি আক্রান্ত ওই নারীর বদলে অন্য কোনও ব্যক্তি যদি ওই হ্রদে ডুবে মরতেন, তাহলে আমাদের এত আপত্তি থাকত না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনওভাবেই ওই পানি খাওয়া সম্ভব নয়। গ্রামবাসীদের জীবন বাঁচাতে হ্রদের জল পাল্টে ফেলাটাই শ্রেয়।

আরও এক গ্রামবাসী প্রদীপ হানিকেরে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, ‘নিজেদের জলের বোতলে কোনও নোংরা থাকলে সেই পানি কি খান কর্মকর্তারা? তাহলে আমাদের ওই হ্রদের জল খেতে বলছেন কী ভাবে?’

অগত্যা গ্রামবাসীদের জেদ আর গোঁ-এর কাছে নতিস্বীকার করতেই হয়েছে প্রশাসনকে। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য লক্ষ্মণ পাতিল জানান, গ্রামবাসীদের কিছুতেই বিষয়টা বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই পাম্প লাগিয়ে ওই পানি বের করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

পাতিল বলেন, ‘গত পাঁচ দিন ধরে দিন-রাত এক করে ৫০টি লোককে দিয়ে পানি বের করার কাজ চালানো হচ্ছে। এখনও ৬০ শতাংশ পানি বের করা বাকি।’

এইআইভির জীবাণু কি সত্যিই জলে মিশে যাওয়া সম্ভব? কেন ভয় পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা?

ভারতের বেসরকারি সংস্থা আশা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. গ্লোরি আলেকজান্ডার এমন সম্ভাবনার কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন। এই সংস্থাটি এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করে। আলেকজান্ডার জানান, সমাজে এইচআইভি-কে যতটা না কলঙ্ক হিসেবে দেখা হয় তার চেয়ে এটা একটা আতঙ্ক হিসেবেই সমাজে ছড়িয়ে গেছে বেশি। আর এর জন্য শুধুমাত্র অসচেতনতাকেই দায়ী করেছেন তিনি।

আলেকজান্ডার বলেন, ‘যখন কোনও এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি মারা যান, তার সঙ্গে সঙ্গে সেই জীবাণুরও মৃত্যু হয়। সেই জীবাণু দেহের বাইরে কোনওভাবে এলেও পানির সংস্পর্শে কোনও ভাবেই বাঁচে না। তাই পানিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।’

Bootstrap Image Preview