ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন অরিত্রী অধিকারীর বাবা।
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে অরিত্রি অধিকারীর বাবা দিলীপ অধিকারী রাজধানীর পল্টন থানায় মামলাটি করেন বলে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে।
পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন তালুকদার জানান, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণিশিক্ষিকা হাসনা হেনার বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে মাম্লাটি করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার তাদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। অরিত্রী ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নিহতের বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘মেয়ের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। গত রবিবার পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। সেখানে তার কাছে শিক্ষিকা মোবাইল ফোনসেট পান। স্কুল শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন, অরিত্রী নকল করেছে। ওই সময় শিক্ষিকা মোবাইল ফোনসেট রেখে দেন এবং আমাদের সোমবার বিদ্যালয়ে যেতে বলেন। পরে মেয়েকে নিয়ে আমরা স্কুলে যাই।’
দিলীপ অধিকারী আরো বলেন, 'আমরা ভাইস প্রিন্সিপাল ও প্রিন্সিপালের রুমে গিয়ে তাঁদের ওই অভিযোগ শুনি। জোর হাত করে ক্ষমা চাই। মেয়েও পায়ে ধরে ক্ষমা চায়। কিন্তু তাঁরা কোনো কিছুই শুনতে রাজি না হয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘বের হয়ে যান, কাল এসে টিসি নিয়ে যাবেন।’
'এ সময় দ্রুত বাসায় চলে যায় অরিত্রী। পেছনে পেছনে আমরাও যাই। বাসায় গিয়ে দেখি সে নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকেল সাড়ে ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
এদিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার সকাল ১১টার দিকে বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে যান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সেখানে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এরপর বেলা ১২টার পর স্কুল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তোপের মুখে পড়েন মন্ত্রী। আন্দোলনরতরা প্রায় ১০ মিনিট তার গাড়ি আটকে রাখেন।
অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে প্রভাতী শাখার অধ্যক্ষ জিন্নাত আরাকে।
অরিত্রীর ঘটনায় জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, 'এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা খুব মর্মাহত।'
এদিকে অরিত্রীর আত্মহত্যার বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতেও। গণমাধ্যমে খবরটি দেখে অরিত্রীর আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করতে বলেছে হাই কোর্ট।
পাঁচ সদস্যের কমিটিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের নিচে নয় এমন একজন প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, মনোবিদ ও আইনবিদকে রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ঠেকাতে একটি জাতীয় নীতিমালা করতেও কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।