ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য 'নিয়ম' অরিত্রি অধিকারীর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হয়েছে- এমনতাই দাবি করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। তবে সেই নিয়মটা কি তাই বলতে পারলেন না প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার।
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) অধ্যক্ষের কার্যালয়ে নাজনীন ফেরদৌস ও আশরাফ তালুকদারকে প্রশ্ন করা হলে তারা 'নীতিমালা' জানেন না বলেই জানান সাংবাদিকদের।
অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারীর ভাষ্যে, অরিত্রীর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার (২ ডিসেম্বর) পরীক্ষা দেওয়ার সময় তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের স্কুলে যেতে বলে। স্কুলে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ জানায়, অরিত্রী পরীক্ষার হলে মোবাইলের মাধ্যমে নকল করছিল। তাই তাকে টিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ খবর শোনার পর স্কুল থেকে অরিত্রী বাসায় ফিরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দিলীপ বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ মেয়ের সামনে আমাকে অপমান করেছে এবং জানিয়েছে অরিত্রী পরীক্ষা দিতে পারবে না। এ মানসিক আঘাত সইতে না পেরে সে বাসায় ফিরে আত্মহত্যা করেছে। আর সহপাঠীর আত্মহত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার ও অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
নাজনীন ফেরদৌস বলেন, পরীক্ষার হলে ওই ছাত্রীর সঙ্গে এমন কোনো ব্যবহার করা হয়নি যাতে সে আত্মহত্যা করবে। শাখা প্রধান (প্রভাতী শাখার প্রধান জিন্নাত আরা) আমাকে বলেছেন, অন্য শিক্ষার্থীর বেলায় যে নিয়ম তার বেলায়ও একই নিয়ম প্রয়োগ করা হয়েছে। নিয়মটা কী? প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, আসলে নিয়মটা আমার জানা নেই। পরীক্ষায় কেউ নকল করলে তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ এটা আমার জানা নেই। তবে আমরা অভিভাবককে ডেকে তার সামনে এ বিষয়ে কথা বলি। ওই দিনের পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়।
পরের দিন কেনো অরিত্রীর পরীক্ষা নেওয়া হলো না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করেননি। নাজনীন ফেরদৌস বলেন, শাখা প্রধান আমাকে বলেছেন, নকল পাওয়া গেলে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয় না। এর বেশি আমার জানা নেই। এটা প্রচলিত নিয়ম। একই প্রশ্ন করা হলে প্রায় সমান উত্তর দেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার।
তিনি বলেন, নিয়মটা আমার জানা নেই। তবে পাবলিক পরীক্ষার বিষয়টা আমার জানা আছে। পরীক্ষায় শাস্তি কী, সে নীতিমালার ব্যাপারটিতে আমি স্পষ্ট নই। তবে কেউ নকল করলে তার ওই দিনের পরীক্ষা নেওয়া হবে না। পরের দিন পরীক্ষা দিতে পারবে।
মেয়েটিকে পরের দিনও পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোলাম আশরাফ বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, সেদিন সময় ছিল না। এটা শিক্ষকরা জানেন।
তিনি বলেন, আমরা তদন্ত কমিটি করেছি, অধ্যক্ষ বা অন্য কেউ দোষী হলে সাত দিনের মধ্য তার বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা শাখা প্রধানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।