সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ছোট্ট এক গ্রাম বওড়া দক্ষিণ পাড়া। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই শ্রমিক শ্রেণীর। তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ বেলকুচিতে শিক্ষার হার জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কম। সেই সাথে শিশুশ্রমের আধিক্য থাকার কারণে এখানকার বাচ্চারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই ঝড়ে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন আগে থেকেই ভাবছিলেন গ্রামের এক যুবক জাহিদ হাসান মিঠু ও তার বাড়ির পাশের ভাগ্নি শিউলি খাতুন। কিন্তু তারা কোথা থেকে শুরু করবেন এবং কিভাবে গ্রামের শিক্ষার হার বৃদ্ধি করবেন, সেটা নিয়ে চিন্তা -ভাবনা করতে থাকেন।
পরবর্তীতে তারা সিদ্ধান্ত নেন, বর্তমানে গ্রামে যেসব ছোট ছোট বাচ্চা রয়েছে তাদের নিয়ে একটি ফ্রি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। তাদের ভাবনা ছিল এই স্কুলের মাধ্যমে একই সাথে বাচ্চাদের পড়াবেন এবং তাদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করবেন। সেই ভাবনা থেকে জাহিদ ও শিউলি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘শিশু নিকুঞ্জ’ নামে বাচ্চাদের একটি ফ্রি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
এরপর তারা চিন্তা করতে থাকেন, কিভাবে বাচ্চাদের মজার সাথে পড়ানো যায়। সেটা থেকে সিদ্ধান্ত নেন, তারা বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইন্টারনেটের সহায়তা নেবেন। প্রথমে তারা ইউটিউবের বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিওগুলো বাচ্চাদের শেখানো শুরু করেন। এরপর তারা কিছু ভিন্ন ধরনের শিক্ষা সরঞ্জাম কিনে বাচ্চাদের বিভিন্ন বিষয় শেখাচ্ছেন। তবে তারা সবকিছুই করেছেন নিজস্ব অর্থায়নে। অল্প কিছু সাহায্য ফেসবুকের মাধ্যমে আসলেও, স্কুলের জন্য নিজ গ্রাম বা নিজ উপজেলার কেউ এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেনি।
শিশু নিকুঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও শিক্ষক জাহিদ হাসান মিঠু বিডিমর্নিংকে জানান, তারা বর্তমানে বাচ্চাদের জন্য কিছু আধুনিক শিক্ষা সরঞ্জাম কিনতে চাচ্ছেন, যাতে তারা বাচ্চাদের আরো ভালোভাবে শিক্ষাদান করতে পারেন। তবে এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের তারা ব্যবস্থা করতে পারছেন না।
জাহিদ হাসান মিঠু বলেন, আমরা চাই বাচ্চারা সব সময় আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহণ করুক। তারা যেন কখনো বিরক্তবোধ না করে, সে জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কার্টুনের মাধ্যমে শিশু নিকুঞ্জের বাচ্চাদের শিখিয়ে যাচ্ছি। তবে বর্তমানে আমরা এমন কিছু খেলনার ব্যবস্থা করতে চাচ্ছি, যার মাধ্যমে বাচ্চারা একই সাথে খেলতে পারে ও শিখতে পারে। তবে এর জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন, যেটা আমরা ব্যবস্থা করতে পারছি না।
উল্লেখ্য, বর্তমানে শিশু নিকুঞ্জে চার বছর থেকে শুরু করে দশ বছর পর্যন্ত প্রায় অর্ধ শতাধিক বাচ্চা পড়াশোনা করছে। তাদের শিক্ষা কার্যক্রম আরো বেশি গতিশীল করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের নিকট ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন স্কুলটির দুই প্রতিষ্ঠাতা।