Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরপ্রতীক তারামন বিবির দাফন

বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০০ PM
আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০০ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় একাত্তরের রণাঙ্গনের বীরকন্যা বীরপ্রতীক তারামন বিবির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রাজীবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামে তার পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।

এর আগে শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে বাদ জোহর মরহুমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অর্নার প্রদান করা হয়।

এসময় উপস্থিত থেকে বীর প্রতীক তারামন বিবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন, পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম, রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত আলী বীর বিক্রম, মুক্তিযোদ্ধা মেজর তাজ, মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম টুকু, গণজাগরন মঞ্চের উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার, সাবেক এমপি জাকির হোসেনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

বীর প্রতীক তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, ডায়েবেটিস আর শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছিলেন। গত ৮ নভেম্বর রাজীবপুর থেকে নিয়ে ময়মনসিংহ সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) ভর্তি করা হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয় তারামন বিবিকে। সেখানে চিকিৎসা শেষে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সপ্তাহখানেক আগে তাকে রাজীবপুরের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তারামন বিবির শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়। তখন তাকে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন বাড়িতেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন তারামন বিবি।

বীর প্রতীক তারামন বিবি কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে ১৯৫৭ সালে জন্মগ্রহন করেন। বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি। তার স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে।

১৯৭১ সালে তারামন বিবি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। তখন ১১নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।

তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্নাবান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিল মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনা শেখান।

একদিন দুপুরে খাবারের সময় তারামন ও তার সহযোদ্ধারা জানতে পারেন পাকবাহিনীর একটি গানবোট নিয়ে তাদের দিকে আসছে। তারামন তার সহযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন এবং শত্রুদের পরাস্ত করতে সক্ষম হন।

এরপর তারামন অনেক সম্মুখ যুদ্ধে পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অংশ নেন। অনেকবার তাদের ক্যাম্প পাকবাহিনী আক্রমণ করেছে, তবে ভাগ্যের জোরে তিনি প্রতিবার বেঁচে যান।

যুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালিন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।

পরে একই সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাকে খুঁজে বের করেন। নারী সংগঠনগুলো তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়।

অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালিন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবির হাতে বীরত্বের পুরস্কার তুলে দেন।

Bootstrap Image Preview