Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কার্ল মার্কসের সমাজচিন্তাঃ অর্থই যেখানে অস্ত্র

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৪২ PM
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:২৬ PM

bdmorning Image Preview


পৃথিবীটা কিসের ওপর ভিত্তি করে চলছে? প্রশ্নটা অনেক জটিল। কেননা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ আলাদা, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের চিন্তা-ভাবনা আলাদা, প্রতিটি মানুষের দেখার ভঙ্গি আলাদা। বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল সকল কিছুর ভিত্তিকে খুঁজে পেয়েছিলেন ক্ষমতার মধ্যে, চিকিৎসাবিজ্ঞনী ফ্রয়েড পেয়েছিলেন ‘যৌনতা’র মধ্যে। অনেকেই আবার পৃথিবীর ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন রাজনীতির মধ্যে, অনেকই আবার আশা-আকাঙ্খা বা ভালোবাসার মধ্যে। কিন্তু বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী বিপ্লবী কার্ল মার্কস সকল কিছুর ভিত্তিটাকে খুঁজে পেয়েছিলেন অর্থনীতির মধ্যে। তিনি মনে করতেন- অর্থের চাকায় ঘুরছে পৃথিবীটা।

কিন্তু কথা হচ্ছে অর্থের চাকায় পৃথিবীটা কিভাবে ঘুরছে? কোন দিকে ঘুরছে? কে বা কারা ঘুরাচ্ছে অর্থের চাকা? যে দিকে পৃথিবীটা ঘুরছে সেই দিকটা কি সত্য? চাকাটা কি সুষ্ঠুভাবেই ঘুরছে? আদিম সাম্যবাদ সমাজ থেকে বর্তমানের পুঁজিবাদী সমাজ পর্যন্ত কিভাবে অর্থ সমাজ কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে? নিয়ন্ত্রকেরা কিভাবে অর্থকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে? এরকম নানা জটিল প্রশ্নের খোলাসা করেছেন কার্ল মার্কস।

কার্ল মার্কস সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং আদর্শ ব্যক্তিত্ব। বিংশ শতাব্দীতে সমগ্র মানবসভ্যতা মার্কসের তত্ত্ব দ্বারা প্রবলভাবে আলোড়িত হয়। বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন তার মতাদর্শে রাষ্ট্র পরিচালনা কার্যও চালায় এক সময়। তিনি মার্কসবাদের প্রবক্তা। অনেক বড়বড় রাজনৈতিক দল তার তত্ব দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হন। তিনি সকল কিছুর ভিত্তি বলেছেন অর্থনীতিকে। মার্কস সেই পৃথিবীর আদিকাল থেকে বর্তমানে সকল কিছুর মূলে (পরিবর্তন) ব্যখ্যা করেছেন অর্থনীতি দিয়ে।

সংক্ষিপ্তভাবে মার্কসের রাষ্ট্রচিন্তা; হেগেলের ধারণার উল্টো ব্যখ্যা; ভিত্তি অর্থনীতিঃ

প্লেটো, রবার্ট ওয়েন, সেন্ট সাইমন, চার্লস ফুরিয়ার এর লেখায় কাল্পনিক রাষ্ট্র ও সমাজতন্ত্রের একটা ছাপ থাকলেও কার্ল মার্কসই প্রথম বাস্তব সমাজতন্ত্রের ধারণা দেন। সমাজতন্ত্রকে কল্পনার রাজ্য থেকে ইতিহাস ও অর্থনীতির বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত করেন মার্কস ও বন্ধু এঙ্গেলস। তারা সমাজতন্ত্রকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এটিকে চিন্তার জগৎ থেকে বের করে মানুষের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন। তাদের সকল কিছুর ভিত্তিটা ছিল অর্থনীতি।

মার্কসের দর্শন তথা সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা দ্বান্দ্বিক পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের ভাবধারায় দ্বান্দ্বিক একটা ভাব থাকলেও তিনি ভাবজগতের অবিশ্বাসের কথা বলেননি। এমনকি মার্কস দ্বন্দ্ববাদ মূলত হেগেল থেকেই পান। কিন্তু হেগেল এক সময় তা দ্বন্দের মধ্যে না রেখে ভাবজগতের সাথে সম্পৃক্ত করে ফেলেন। হেগেলের দ্বন্দ্ববাদের জগৎ ছিল চিন্তার জগত বা মনের ওপর নির্ভরশিল, কিন্তু মার্কসের দ্বন্দ্ববাদ ছিল বস্তুজগৎ নির্ভর।

মার্কস মনে করেন, বস্তুর অস্তিত্ব মনের উপর নির্ভরশীল নয় বরং মনের অস্তিত্বই বস্তুর উপর নির্ভরশীল। মার্কস ইতিহাসের যে বস্তুতান্ত্রিক ব্যখ্যা দিয়েছেন তাতে তিনি ইতিহাসের বিকাশ ও বিবর্তন সম্পর্কে হেগেলের উল্টো ব্যখ্যা দিয়েছেন। মার্ক্স মনে করেন, ইতিহাস তথা মানব জীবনের যাবতীয় ঘটনা একমাত্র অর্থনৈতিক বিচার-বিবেচনার দ্বারা পরিচালিত হয়।

মার্কস রাষ্ট্রের সংজ্ঞাও ঠিক উল্টো দিয়েছেন। এখানেও তিনি অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে তার সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র অভিন্ন কল্যাণের লক্ষ্যে নিবেদিত কোন সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান নয় বরং তা যে কোন সমাজের প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শ্রেণীর হাতে গড়া একটি সংগঠন এবং অন্যান্য শ্রেণীর উপর এই শ্রেণীর শাসন ও শোষণকে মজবুত করাই এর প্রধান লক্ষ্য। এটি প্রভাবশালী বুর্জোয়া শ্রেণীর একটি নির্বাহী কমিটি ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইতিহাসগতভাবে রাষ্ট্রের জন্ম শ্রেণী শত্রুতার প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। কিন্তু কালক্রমে এই রাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবস্থার ফলশ্রুতি হিসাবে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শ্রেণীর সংগঠন হিসেবে পরিণত হয়। প্রভাবশালী শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকেই রাষ্ট্র তার পবিত্র দায়িত্ব বলে গণ্য করে। পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে রাষ্ট্র কেবলমাত্র পুঁজিপতিদের শোষণ এর হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মার্কসের মতে, রাষ্ট্রের এই শ্রেণীচরিত্রের কথা বিস্মৃত হয়ে কেউ যদি মনে করেন যে, সকল নাগরিকের অভিন্ন কল্যাণ ত্বরান্বিত করাই রাষ্ট্রের কাজ তাহলে জানতে হবে তিনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।

আদিম সাম্যবাদ-- পুঁজিবাদের উদ্ভব; কিভাবে অর্থ কাজ করে তখনঃ

মানুষ একসময় ছিল অত্যান্ত সহজ সরল। তারা একসাথে দলবদ্ধ হয়ে পশু শিকার করত। পশু এনে তারা তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে খেয়ে ফেলত। এক সময় মানুষ শিকারের কৌশল ভালোভাবে রব্ধ করে ফেলল। এক সময় নতুন নতুন হাতিয়ার তারা আবিস্কার করতে শুরু করল। যার কারণে দিনদিন পশুও বেশি বেশি শিকার হতে লাগল। এভাবে একসময় তাঁদের পশু শিকার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাগ-বাঁটোয়ারা করে খেয়েও কিছু অংশ বেঁচে যতে লাগল। এই বেচে যাওয়া অংশই হচ্ছে উদ্বৃত্ত। আর এই উদ্বৃত্তটা কে নেবে তা নিয়ে তাঁদের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হল।

দেখা গেল যার জোর বেশি সেই এই উদ্বৃত্ত নিয়ে গেল। তখনই মানুষের আঝে আমিত্ববোধ জন্মাল। যারা উদ্বৃত্ত নিয়ে গেলো তারা এক সময় হাতিয়ারেরও মালিক হল। তারা দেখল যে হাতিয়ার থাকলে তাদের আর কষ্ট করে শিকার করে খেতে হয় না। তখন সেইসকল শক্তিশালীদের মঝে ডমিনেট করার একটা মনোভাব তৈরি হল। তারা বসে থেকে অস্ত্র ও হাতিয়ার অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে ভাগ নিত। এখানেই তৈরি হলো শ্রেণী। এক শ্রেণী হলো হাতিয়ারহীন, আরেক শ্রেণী হলো হাতিয়ারের মালিক। হাতিয়ারের মালিকদেরই কার্ল মার্কস বর্তমানের পুঁজিবাদ বলে আখ্যায়িত করেছে, আর নির্জাতিতদের শ্রমিকশ্রেণী।

এমতাবস্থায় আদিম সাম্য (তাদের মাঝের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব) ভেঙে শ্রেণী তৈরি হল বিভাজনের মধ্যদিয়ে। আর এই শ্রেণী তৈরি হওয়ার ফলে একসময় এভাবে চলতে চলতে দাশ প্রথা মাথাচাঁড়া দিয়ে উঠল। যারা হাতিয়ারের মালিক হল তারা অন্য সকল মানুষদের ইচ্ছেমতো কাজে লাগালো। তাঁদের দিয়ে যতদূর সম্ভব কাজ করিয়ে নিতে শুরু করল। ধীরে ধীরে এভাবে চলতে চলতে কৃষি আবিস্কার হল। মানুষ পশু শিকারের পাশাপাশি ফসল ফলাতে শুরু করল। আর হাতিয়ারের সেই মালিকরা দাশদের দিয়ে সকল কাজ করাতে শুরু করল। কাজের বলতে তাদের কিছু অর্থ (বর্তমানে যা খাদ্য) দিত। তারাই নির্ধারণ করে দিত সেসকল দাশদের জীবন কেমন হবে।

দেখা গেলো এক সময় দাশরা নির্যাতিত হতে হতে বিপ্লব ঘটালো। তার পরেই শুরু হলো সামন্তবাদ। অর্থাৎ পুঁজিবাদীরা (হাতিয়ার, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রের মালিক, দাশের মালিক) দাশদের চাপে পরে কিছু শক্তিশালী জমিদারদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দিল। অর্থাৎ তারা বলল এখন থেকে সবাই মুক্ত। তারা অবাধে ফসল ফলাতে পারবে। তাদের স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু তাদের জমির মালিক থাকবে জমিদাররা। এক এক জমিদারকে এক একটা স্টেট ভাগ করে দেওয়া হল। শ্রমিকরা কাজ করত মাঠে, ফসল ফলাত এবং দেখা যেত তার সিংহভাগই জমিদারের গোলায় যেত। তবুও এভাবে অনেকদিন চলল কেননা দাশেরা মুক্ত হয়েছে। এভাবে চলতে চলতে তারা দেখল তাদের নিজেদের তো কছু নেই। সিংহভাগ ফসল জমিদাররা নিয়ে যায়। তাই তারা আবার আন্দোলন বা বিপ্লব শুরু করল। এরই মধ্যে অনেক ধরণের কল কারখানা, পোশাক তৈরির কল আবিস্কার হল। ইউরোপে শিল্প বিপ্লব হলো। একসময় তারা সামন্ত জমিদারদের বীরুধে বিপ্লব ঘটিয়ে তাদের পতন ঘটালো।

তাদের পতন ঘটানোর পর আসল আধুনিক পুঁজিবাদ। নির্যাতিতরা ভূমি পেল, স্বাধীনতা পেল। কিন্তু এরই মাঝে পুঁজিবাদরা আগেই নতুন ফন্দি এটে রাষ্ট্র নামক এক নতুন জিনিস উদ্ভাবন করে রেখেছিল। যদিও রাষ্ট্রের ধারণা মানুষের মধ্যে অনেক আগে থেকেই ছিল। তবুও কর্পোরেটভাবে আধুনিক রাষ্ট্র তৈরি হল কিছু নতুন ফন্দি নিয়ে। পুঁজিবাদীরা তখন তাঁদের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসালো। আবারো চলতে থাকল শোষণ-শাসন।

বর্তমানে মানুষ যে উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদী করে, তৎকালে সেই উদ্দেশ্যই ছিল। বর্তমানের পুঁজিবাদের সাথে তৎকালের সেই হাতিয়ারের মালিকদের বিষয়টাকে মেলালে একই দাঁড়ায়। কিন্তু আদিম সাম্যবাদী সমাজে টাকা-পয়সার ব্যপার যেহেতু ছিল না তবে তখন ছিল খাদ্য ও হাতিয়ার। এই খাদ্য হাতিয়ারই বর্তমানে টকা পয়সায় দাঁড়ায়। তাহলে বলা যায় আগে মানুষ খাদ্যের জন্য হাতিয়ারের দ্বারা পুঁজিবাদী করত আর এখন টাকার জন্যে বিভিন্ন ধরণের ম্যাটারিয়েল দিয়ে করে। দু'টোই যদি পুঁজিবাদ হয় আর পুঁজিবাদের অর্থ যদি ম্যাটারিয়েল দিয়ে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তবে বলা যায় আদিম সমাজের মানুষ পুঁজিবাদী করেছে। আদিম সময়ে মানুষের উদ্দেশ্য ছিল খাওয়া আর বাঁচা। আর একটু আগেই প্রমাণিত হলো সেসকল খাদ্যগুলো ছিল পুঁজিবাদের উদ্দেশ্য অর্থাৎ বর্তমানে তা টাকা বা অর্থ।

এই খাদ্য (বর্তমানে অর্থ) মানুষের জীবনকে পরিচালিত করতে থাকে। তাদের জীবন নির্ভর করত এই খাদ্যের ওপর। আর তাদের জীবন যেহেতু খাদ্যের উপর নির্ভর করতে শুরু করল তখন মানুষের জীবন, চিন্তা-ভাবনা, দর্শন ছিল খাদ্যনির্ভর। আর এই খাদ্যই যেহেতু বর্তমানে অর্থ (টাকা) তাই বলা যায় তাঁদের সকল কিছুই নির্ধারণ করত অর্থনীতি।

দাশপ্রথায় পুঁজিবাদঃ কিভাবে সে সময় অর্থ কাজ করেঃ

দাশপ্রথা মূলত সামাজিক ও আইনানুগ একটি ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় বাজারে মানুষের আনুষ্ঠানিক বেচা-কেনা চলত এবং ক্রীত ব্যক্তি ক্রেতার ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে কাজ করতে বাধ্য থাকত। দাশ দুই ধরণের থাকত- গার্হস্থ্য ও কৃষিকার্যাধীন। দাশপ্রথায় সামান্য কয়েকজন লোক দাশদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত। তারা কৃষিকাজের জন্য দাশদের কৃষিযন্ত্র দিল। অর্থাৎ কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে ফসল ফলিয়ে নিত। শুধু কৃষি নয় সকল কাজই করে দিত দাশেরা। দাশরা পরিচালিত হত পুঁজিবাদীদের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে। তখন পুঁজিবাদী চলতো দাশদের পীঠের চামড়া উঠিয়ে!

দাশপ্রথার সময়ে পুঁজিবাদীদের (দাশদের মালিক) উদ্দেশ্য থাকত খাদ্য উৎপাদন ও দাশদের দিয়ে সকল কাজ করিয়ে নেওয়া। সেই খাদ্য বা অন্য কাজ পুঁজিবাদের ফসলস্বরূপ যা অর্থে পরিমাপ করা যায়। সেগুলোকে বর্তমানের অর্থের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে না। কারণ শ্রমের একটা আর্থিক মূল্য আছে। তখন হয়তো বিনিময় প্রথা ছিল বা কোথাও কোথাও মূদ্রার ব্যাবহার চালু হয়েছিল। যাই হোক না কেন সবকিছুর মূলে অর্থ উপার্জনই ছিল। আবার আমরা অনেক বইতে পড়েছি- দাশদের টাকা পয়সার বিনিময়ে বিক্রি করা হতো। যাই হোক সকল কিছুর মূলে ছিল অর্থ। দাশদের জীবনের সকল কিছুই নির্ধারণ করে দিত মালিকরা। আর এই মালিকেরা ছিল পুঁজিবাদী।

সামন্তবাদে পুঁজিবাদঃ কিভাবে সেসময় অর্থ কাজ করেঃ

মূলত মধ্যযুগকে সামন্ততন্ত্রের যৌবনকাল বুঝায়। এক প্রকার ভূমি ব্যবস্থাপনা এটি। সহজ কথায় সামন্তবাদ বলতে জমিদার প্রথার সময়কে বুঝায়। সে সময় ভূমি থাকত জমিদারদের দখলে। ভূমিই ছিল ক্ষমতার মূল উৎস। কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে তার সিংহ ভাগ জমিদারদের দিত। বিনিময়ে তারা দাশের বেড়াজাল থেকে স্বাধীন হল মাত্র। কিন্তু এখানে জমিদাররা নানাভাবে আবারও কৃষককে শোষণ করতে লাগল। দেখা যায় রোদে পুরে, বৃষ্টিতে ভিজে কৃষকরা কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করত, কিন্তু সেই ফসল তার নিজের ঘরে তা না উঠে জমিদারের গোলা বোঝাই হচ্ছে।

এ সময় জমিদারের পুঁজি ছিল ভূমি আর কৃষক ছিল ভূমির শ্রমিক। এখানে জমিদাররা নির্ধারণ করে দিত কৃষকের জীবন। কারণ কৃষকের একমাত্র লক্ষ ছিল উৎপাদন। সে সময়ের সমাজ নির্ধারণ করত সামন্তরা (জমিদার), আর এই নির্ধারণের ভিত্তি ছিল ফসল। ভূমি হচ্ছে সেই সময়ের পুঁজি, আর ফসল হচ্ছে ভূমি থেকে উৎপাদিত পণ্য। এই পণ্যর একটা আর্থিক মূল্য আছে, শ্রমেরও। পুরো ব্যবস্থাটাই ধরতে গেলে পুঁজিবাদী। এ ছাড়া এই সমাজ ব্যবস্থায় কৃষক যা চাইত তা করতে পারত না। কারণ দিনশেষে তাঁদের খেয়েই বাঁচতে হবে। আর বাঁচতে হলে জমিদারদের ভূমিতেই কাজ করতে হবে। তাই তারা জমিদারদের ভূমি নামক অস্ত্রের শিকার হয়ে ছিলেন।

আধুনিক পুঁজিবাদঃ কিভাবে অর্থ সর্বত্র কাজ করে এখানেঃ

যখন কৃষকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে তারা জমিদারদের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটালো তখন আধুনিক পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটল। সব যায়গাই পুঁজিবাদ ছিল তবে তা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন রুপ পেয়েছে। আর পুঁজিবাদের সর্বশেষ রূপ হচ্ছে আধুনিক পুঁজিবাদ। বর্তমান সমাজ আধুনিক পুঁজিবাদের সমাজ।

ইউরোপে শিল্প বপ্লবের মধ্যদিয়ে মূলত আধুনিক পুঁজিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রবলভাবে। শ্রমিকশ্রেণীকে দমিয়ে রাখার জন্য পুঁজিবাদীরা নতুন নতুন পন্থা সেই আগে থেকেই উদ্ভাবন করে আসছে। কার্ল মার্কসের মতে রাষ্ট্রও তারই একটি অংশ। পুঁজিবাদীরা তাঁদের নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্র গঠন করে। তাঁদের নিজেদের ইচ্ছেমতো প্রতিনিধি ঠিক করে তাঁদের নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বার্থে।

যে দেশে কল কাঁরখানা, পুঁজিবাদের প্রভাব বেশি সে দেশ এর অর্থনৈতিক অবস্থা তত উন্নত। যেমন চীন, যুক্তরাষ্ট্র। এদের পুঁজিবাদীরা সারা বিশ্বে বিস্তর প্রভাব বিস্তার করে আছে। তাই তাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নত। নানা ব্যবসায়ীক পন্থায় তারা দখল করে আছে বিশ্ববাঁজার। আর অর্থনৈতিকভাবে তারা উন্নত হওয়ার তাঁদের সমাজ, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি বেশি উন্নত। এখানে মানুষকে অর্থই প্রভাবিত করছে। শ্রমিকশ্রেণীর মাথায় কাঠাল ভেঙে খাচ্ছেন পুঁজিপতিরা।

 

লেখকঃ মো. সবুজ খান

সহ-সম্পাদক, বিডিমর্নিং

Bootstrap Image Preview