নিজস্ব প্রতিবেদক
শনিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ৮ টায় মহাস্থানগড়ের ভাসু বিহারে দু'দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত প্রত্ননাটক মহাস্থান-এর মঞ্চায়ন শেষ হয়েছে।
ড. সেলিম মোজাহার-এর রচনায় এবং লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় প্রযোজনাটির উদ্ধোধনী মঞ্চায়ন শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) বগুড়ার মহাস্থানগড় ভাসু বিহারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৪ নভেম্বর একই স্থানে ২য় মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় মঞ্চায়নের উদ্ধোধন করেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী'র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মঞ্চসারথি নাট্যজন আতাউর রহমান, বিশিষ্ট নাট্যজন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, প্রতœতত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, বগুড়া জেলার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূইঞা বিপিএম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমি প্রযোজিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই প্রত্ননাটকটি ৩শতাধিক শিল্পী-কলাকুশলীর অংশগ্রহণে নির্মিত প্রত্ননিদর্শন মহাস্থানগড়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের শৈল্পিক উপস্থাপন। নাটকটির মঞ্চায়নকে কেন্দ্র করে দুই দিনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে ভাসু বিহারে।
মহাস্থান নাটকে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাসকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই নাটকে প্রাচীন শিকারযুগ থেকে শুরু করে বৈদিকযুগ, আদিবাসি পর্ব, রামায়নের গীত, কালিদাসের কাব্য, চর্যাপদ, সুফিসামা, বৈষ্ণব পদাবলী, ব্রাহ্মসংগীত, লোকগান, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ব্রতচারীদের গান, পঞ্চকবির গান, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস, কাব্য-গীত ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা পালাগানরূপে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ পরাক্রমশালী মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা এখানে রাজত্ব করেছিলো। মহাস্থান নাটকের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন সময়ের শাসন শোষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এই নাট্য প্রযোজনা নির্মাণের অংশ হিসেবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ১০ জন চিত্রশিল্পীর অংশগ্রহণে দিনব্যাপী মহাস্থানের ১০টি স্থানে প্রত্ন আর্ট ক্যাম্প ২০১৮ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর্ট ক্যাম্পে শিল্পীরা মহাস্থানগড়ের বিভিন্ন স্থাপনার ক্যানভাস পেইন্টিং ও স্কেচ করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ইতোপূর্বে নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার এবং নরসিংদীর উয়ারী বটেশ্বর স্থাপনা নিয়ে দুইটি প্রত্ননাটক মঞ্চস্থ করেছে। গত ২০ এপ্রিল,২০১৪ নওগাঁস্থ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দেবাশীষ ঘোষের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হয়েছিলো দেশের প্রথম প্রত্ননাটক সোমপুর কথন। নরসিংদী জেলার উয়ারী বটেশ্বর খননের মাধ্যমে যে আড়াই হাজার বছরের পুরনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কার হয়েছে। সেই নিদর্শনকে উপজীব্য করে নির্মিত মঞ্চনাটক উয়ারী-বটেশ্বর এর উদ্বোধনী মঞ্চায়িত হয় ৬ জুন,২০১৪।