শহরের অলিতে গলিতে আক সময় দেখা যেত লাল রঙের, গোল মাথাওয়ালা ছোট থামের মতো দেখতে ডাক বাক্স। তবে এখন আর দেখা যায় না। বর্তমানে সমুদ্রের গভীরে থাকা গোল মাথাওয়া এই ডাক বাক্স হয়ে উঠেছে হাজার হাজার পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। নিয়মিত হাজার হাজার চিঠি জমা পড়ে এই ডাক বাক্সে।
জানা গেছে, সমুদ্রের গভীরে ওই ডাক বাক্স রয়েছে জাপানের সুসামি শহরে। প্রতি বছর কয়েক শো পর্যটক ‘ডিপ সি ডাইভিং’-এর ছুতেয় এই ডাক বাক্সের টানেই ছুটে আসেন এখানে। জাপানের এই শহরে মূলত মৎস্যজীবী মানুষের বাস। প্রায় পাঁচ হাজার মৎস্যজীবী এখানে বসবাস করেন। ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে এখানে ‘কুমানোকোদো’ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে পর্যটন প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর সেই সময় এক প্রবীণ পোস্ট মাস্টারের পরামর্শ অনুযায়ী ‘ডিপ সি ডাইভিং’-এর পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়। আর এরই প্রধান অঙ্গ হিসেবে সমুদ্রের গভীরে বসানো হয় এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্ট বক্স’।
আরো জানা গেছে, সমুদ্র সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে এবং ৩২ ফুট গভীরে ডাক বাক্সটি বসানো হয়। ১৯৯৯ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৬ হাজার চিঠি পড়েছে এই ডাক বাক্সে। কিন্তু ভাবছেন, পানির তলায় চিঠিপত্র টিকবে কী করে? স্থানীয় দোকানে পাওয়া যায় বিশেষ ওয়াটারপ্রুফ কাগজ, খাম আর বিশেষ মার্কার পেন। এই মার্কার পেন দিয়ে ওয়াটারপ্রুফ কাগজে চিঠি লিখে পানির নীচে গিয়ে নিজেদের চিঠি পোস্ট করেন পর্যটকরা। নির্দিষ্ট সময় পর পর পোস্টাল ডাইভাররা সেই চিঠিগুলি তুলে এনে সেগুলিকে পাঠিয়ে দেন স্থানীয় ডাকঘরে। এর মোটামুটি এক সপ্তাহের মধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয় চিঠিগুলিকে।
ছয় মাস পর পর রং ও মেরামতের জন্য ডাক বাক্সটি তুলে আনা হয়। দুইটি ডাক বাস্ক এভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সমুদ্রের তলায় রেখে আসা হয়।
২০০২ সালে ‘ডিপেস্ট আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ হিসেবে গিনেস রেকর্ডের বইয়ে জায়গা করে নেয় সুসামির এই ডাক বাক্সটি। তবে সুসামির এই ডাক বাক্সটিই বিশ্বের একমাত্র ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’ নয়।
উল্লেখ্য, পর্যটক টানতে প্রশান্ত মহাসাগরের ভানুয়াতো দ্বীপরাষ্ট্রে প্রথম শুরু হয় আন্ডারওয়াটার পোস্ট বক্স। তারই অনুকরণে জাপানের সুসামিতে তৈরি হয় এই ‘আন্ডার ওয়াটার পোস্টবক্স’।