Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বেকারত্বের হাত থেকে কবে মুক্তি পাবো?

ফারুক আহমাদ আরিফ
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৬ PM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৬ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


আজ সকাল ১০টা ২৯ মিনিটে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিরেক্টর অ্যান্ড আউটরিচের দায়িত্বপ্রাপ্ত অভ্র ভট্টাচার্যকে কল দিলাম বিশ্বের বেকার বা কর্মক্ষম অথচ কর্মহীন এমন যুবকদের কোন রিসার্চ তাদের আছে কিনা। তিনি জানালেন তাদের কাছে নেই, তবে বাংলাদেশের আলোকে তথ্য আছে। অভ্র ভট্টাচার্য জানালেন এটি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন (আইএলও)'র কাছে থাকতে পারে। আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করেন।

সকাল গড়িয়ে বিকাল। বিকালের পর সন্ধ্যা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শোভন সাহার একটি ফেসবুক পোস্টে দেখলাম আইএলও'র প্রতিবেদন 'তরুণ বেকারের হার ৭ বছরে দ্বিগুণ' শিরোনামে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন শেয়ার দিয়েছেন। অনেকেই নানা ধরনের কমেন্ট করছে।

গত ১৬ নভেম্বর-২০১৮, শুক্রবার ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আএলও। তাতে বলা হয়েছে, ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের ২৮টি দেশের বেকারত্ব, তরুণদের কর্মসংস্থান, নিষ্ক্রিয় তরুণের হার, আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান, কর্মসন্তুষ্টি ইত্যাদির তুলনামূলক চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব ২০১০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে ২০১৭ সালে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ওপরে আছে কেবল পাকিস্তান। আইএলও’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেড় যুগ আগে ২০০০ সালে সার্বিক বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৩, ২০১৬ ও ২০১৭ সালের হিসাবে এই হার একই থাকে (৪ দশমিক ৪ শতাংশ)। বাংলাদেশে পুরুষের ক্ষেত্রে বেকারত্ব ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীর ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে বেকার ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার; যা আগের বছরের চেয়ে ৮৭ হাজার বেশি। ওই সময় কমপক্ষে  স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সাড়ে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণী বেকার ছিলেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিক পাস করে বেকার ছিলেন ৬ লাখ ৩৮ হাজার। আর দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৩৫ লাখ।

আইএলও'র ২০১২ সালের মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে এখন কর্মক্ষম তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার প্রায় ১৩ শতাংশ। সেই হিসেবে বিশ্বে সাড়ে ৭ কোটি তরুণ বেকার। অবশ্য আইএলও'র তথ্যমতে সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেও তাকে বেকার বলা হয় না। ২০১০ সালে উত্তর আফ্রিকায় বেকারের হার ছিল ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পূর্ব এশিয়ায় ২ দশমিক ৮ গুণ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতেও প্রতি ৫ জন তরুণের মধ্যে একজন বর্তমানে কাজ খুঁজছে।

বেশ কয়েকটি রিসার্চ তুলে ধরার মূল কথা হচ্ছে দেশের মানুষ বেকার। বিশ্বের কর্মক্ষম মানুষ বেকার। অলস, অচল সময় পার করছে। তাদের হাতে কাজ নেই। সংসারে সম্মানের পরিবর্তে অপমানের স্থান তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে। জিডিপি বাড়ছে। কিন্তু এসব অর্থ যাচ্ছে কোথায়?

দেশে যে পরিমাণ উন্নয়ন হচ্ছে তা কি বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে? এসব অর্থ কাদের পকেটে? কত শত প্রজেক্টের উদ্বোধন হচ্ছে তার কাজ কোথায়?

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নির্বাচনী ইশতিহার ছিল 'দিন বদলের সনদ' ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে কমপক্ষে একজনকে চাকরি দেয়া হবে। সেই আওয়ামী লীগ প্রায় ১০ বছর দেশ পরিচালনা করছে কিন্তু সেখানে কেন ৭ বছরে বেকারের হার দ্বিগুণ হবে? কেন যথাযথ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়নি?

গত ১৪ নভেম্বর-২০১৮, মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটসের পক্ষ থেকে ২০২১ সালে 'স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিটি মানুষের হাতে কাজ চাই' শীর্ষক একটি দাবি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ৪টি দাবিতে বলা হয়

(১) শিক্ষা: বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাজেটের ভিতরে এনে সুপরিকল্পিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তি যেন শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় চলে আসে। যারা শিক্ষার আলো থেকে ঝরেপড়ে তাদেরকে কর্মক্ষম করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার। শুধু দেশ নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যেন শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা যায় সে ধনের সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

(২) খাদ্য: মানুষের খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেননা মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহ আরও সুলভ করা প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভর্তুকিসহ আরো সহজ শর্তে ঋণ, অনুদান দিতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সকলকে পারদর্শি করার যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।

(৩) চিকিৎসা: চিকিৎসাখাতটি এখন অনেকাংশে বেসরকারি হাতে চলে যাচ্ছে। এতে প্রচুর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্যে কষ্টসাধ্য হচ্ছে। কমিউনিটি হাসপাতাল, থানা স্বাস্থ্য কমúেøক্সকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে আরও সম্প্রসারণ করা ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা প্রয়োজন। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলতা আরও বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

(৪) কর্মসংস্থান: প্রতিটি ব্যক্তিকে কর্মস্থানের মধ্যে আনতে হবে। ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিটি মানুষের হাতে কাজ চাই’ এই শ্লোগানে কাউকেই আর শ্রমবিহীন রাখা যাবে না। সবাইকে যোগ্যতা ও স্বামর্থ অনুযায়ী কাজে নিয়োজিত করার যাবতীয় কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি দেশিয় শিল্প-বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্য, কূটিৈনতক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক নিরাপত্তা, তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, খনিজ ও জ্বালানী, প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানো, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের যাবতীয় প্রযুক্তি-প্রশিক্ষণ, শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, ক্রীড়ান্নোয়ন প্রয়োজন।

আশা করি দেশের অভিভাবকগণ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

Bootstrap Image Preview