Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

আমাকে গালাগাল না করে আয়নায় নিজেকে দেখুন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।।
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১২ AM
আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:১২ AM

bdmorning Image Preview


আমার জীবনটাই যেন কেমন! ছেলেবেলায় বড় বেশি রোগা-পটকা ছিলাম। তার মধ্যে আবার ছয়-সাত বছর বয়সে হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হই। আমি যে বড় হব, কৈশোর-যৌবন পাব অনেকের আশাই ছিল না। কত রাত মা শিয়রে জাগতেন, আল্লাহর কাছে কাঁদতেন, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে ভালো করে দাও। যদি ওর রোগ আমাকে দিয়ে হয় তবু ওকে ভালো করে দাও।’ মায়ের চোখের কত পানি আমার চোখেমুখে কপালে ঝরেছে। মা হয়তো জানতেন না, তার চোখের পানিতে আমার চোখ-মুখ-বুক ভেসেছে। জানি না, আমার প্রতি আল্লাহর দয়া হয়েছিল কিনা, ১০-১১ বছর থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলাম আর মা হাঁপানিতে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। সুস্থ হলেও এত রোগা-পটকা ছিলাম এত দীর্ঘ জীবন পাব কেউ কল্পনা করেনি। বুঝতে পারি না বেঁচে থাকা ভালো-না নানাজনের ধারণামতো অপ্রাপ্ত বয়সে চলে গেলে ভালো হতো। রাস্তাঘাটে মানুষের ভালোবাসা সব সময় পেয়েছি, এখনো পাই। কোথাও বেরোলে কত মানুষ সাড়া দেয়। গাড়ির গতি কমলে লোকজন ছুটে এসে হাত চেপে ধরে, কতজন কত মন্তব্য করে বুক জুড়িয়ে যায়। খারাপ বলি না, খারাপ কথা খুব বেশি শুনিও না। কেন যেন কখনো প্রচারমাধ্যমে প্রিয় হতে পারিনি। ইচ্ছা করে নাকি অভিজ্ঞতার অভাবে অনেক সময় যা বলি সাংবাদিক বন্ধুরা তা লেখেন না বা লিখতে পারেন না। অনেক পত্রিকায় আমার বরাত দিয়ে লিখেছে, আমি নাকি ওবায়দুল কাদেরের নামে কটূক্তি করেছি। আমি কেন কটূক্তি করতে যাব? জনাব ওবায়দুল কাদেরকে সব সময় ভাইয়ের মতো দেখি। তার মা যখন হাসপাতালে ছিলেন তাকে দেখতে গেছি, নিজের মায়ের মতোই সম্মান করেছি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসার জন্য যখন দিল্লির এ্যাপোলোতে ছিলেন তখন আমিও সেখানে ছিলাম। হাসপাতালের বেডে হাত চেপে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই! আমরা কি মরে যাব?’ তার সেদিনের সেই স্পর্শ আজও আমায় নাড়া দেয়। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, আমি যা বলিনি তা আমার কণ্ঠে চালিয়ে দেওয়া হলো।

ঠিক অমন ঘটনা সেদিন রাজশাহী সভা থেকে ফেরার পথে ঘটেছে। আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ছাত্রলীগের এক ছেলে উš§াদের মতো গালাগাল করছিল। সভ্যসমাজে অমন গালাগাল কোনো প্রশংসার নয়। তার ওপর ভাষার অযোগ্য গালাগাল তো নয়ই। আমি জানি, জননেত্রী শেখ হাসিনার দলের লোকজন গালাগাল ছাড়া অন্য কিছু জানে না। তারা গালাগালিতে সেরা। নেত্রী তার সূর্যসন্তানদের ফেরাতে পারেননি বলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনতে গিয়েও খুনাখুনি করেছে। মনোনয়নপত্র দিতে যে কী হবে আল্লাহই জানেন। আমাদের গাড়িগুলো চমৎকারভাবে চলছিল। রাস্তা ছিল ফাঁকা। রাজশাহী শহরে ঢোকার পথে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে ১০-১২ জন বসে ছিল। আমাদের পেছনে মাইক ছিল। ১০-১২ জনের মধ্যে আমাকে দেখে পাঁচ-সাত জন হাত তুলেছিল। বঙ্গবন্ধু, মওলানা ভাসানী ও অন্য নেতাদের সঙ্গে ঘুরেছি। তাই মানুষ হাত তুললে থাকতে পারি না। আমিও সাড়া দিয়েছি। ফেরার পথে আওয়ামী লীগ অফিসের উল্টো দিকে কে একজন গালাগাল করছিল। তাকে দেখতে গাড়ি থেকে নেমেছিলাম। আমি নামতেই সে উল্টো দিক থেকে আওয়ামী লীগ অফিসের দিকে চলে যায়। বেশ কয়েকটা গাড়িতে শতাধিক কর্মী ছিল। তারাও ততক্ষণে নেমে পড়েছিল। যে গালাগাল করছিল তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনার অভিযোগ কী? হয়তো ওপরের হুকুম গালাগাল করতে হবে করছিল। তাই কোনো কারণ ছিল না। তবু কেন যেন ছেলেটি বলছিল, ‘আপনি বঙ্গবন্ধু আর জিয়াউর রহমানকে এক করে ফেললেন!’

রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে ঐক্যফ্রন্টের সভা ছিল অভাবনীয়, অসাধারণ। দুই দিন আগে থেকে রাজশাহীমুখী সব রাস্তা সব গাড়ি বন্ধ। জনসভার দিন রাজশাহীর প্রায় ৫০ মাইলের মধ্যে সব রাস্তায় পুলিশি চেকপোস্ট। ছোটখাটো টেম্পো, তিন চাকার গাড়ি যা দু-চারটা ঢুকতে পেরেছে তাদের সঙ্গে পুলিশ খুব একটা ভালো ব্যবহার করেনি। আমাকেও ঘুরপথ দেখিয়ে দিয়েছিল। পুলিশের আচরণে আমার তেমন খারাপ লাগেনি। কারণ আমি সব সময় পুলিশের ও রকম আচরণ দেখে এসেছি কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। এখন আইন-কানুন, ন্যায়নীতি নেই। সব সরকারি দলের ক্যাডার। তা ছাড়া আওয়ামী সরকারের আমলে যারা কনস্টেবলে ভর্তি হয়েছে তাদের ১০ লাখের বেশি গাঁটের কড়ি গুনতে হয়েছে। পুলিশের কনস্টেবলে যারা ভর্তি হয় তারা দিনরাত রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে। তারা কোনো বড় লোকের সন্তান নয়। তারা একেবারে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষের সন্তান। অত টাকা ঘুষ দিয়ে পুলিশে ভর্তি হলে তাদের কাছে সততা আশা করা যায় না। বাড়ি বেচা, জমি বেচা টাকা কী করে ওঠাবে সেদিকেই তাদের মন পড়ে থাকে বেশি। আর এখন কোনো পুলিশকেই ভদ্র ব্যবহার শেখানো হয় না। কেউ জানে না তারা মানুষের সেবক। মানুষের ভালোবাসা অর্জনে জনগণের সেবা করাই তাদের কাজ। অনেক কষ্টে ১০-১২ জায়গায় থেমে ঘুরপথে রাজশাহী গিয়েছিলাম। ওয়ারিশান হোটেলে তোলা হয়েছিল। সেটা বেশ ধনী মানুষের হোটেল। রাজশাহী করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং বুলবুলকে খুবই স্নেহ করি, ভালোবাসি। মিনুর স্ত্রী একটা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। আমাকে আপন ভাইয়ের মতো জানে। মিনু ছিল রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠের ঐতিহাসিক জনসভার সভাপতি। চেষ্টার ত্রুটি করেনি। আশপাশের কোনো জেলা থেকে কেউ আসতে না পারলেও কোথাও কোনো জায়গা ছিল না। এমনকি মাঠের বাইরে আধা কিলোমিটার লোক দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। বন্যার পানি যেমন বালির বাঁধ দিয়ে ফেরানো যায় না, তেমনি অপকর্ম বা অপকৌশল করে মানুষের ইচ্ছা যে ঠেকিয়ে রাখা যায় না রাজশাহী জনসভা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন অসুস্থ ছিলেন। তাই তিনি যেতে পারেননি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তৃতার মাঝে টেলিফোনে তাঁর বাণী শোনানো হয়। ভালো শোনা যাচ্ছিল না, তাও মাঠ উদ্বেল হয়েছিল। পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার বক্তৃতার সময় সারা মাঠ খলবল করছিল। আমি লম্বাচওড়া মানুষ। আমার কথা কী বলব। বলেছিলাম, স্বাধীনতাবিরোধী বা রাজাকারের গাড়িতে বিএনপি পতাকা তোলেনি, প্রথম পতাকা তুলেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ।

সত্য বললে কেন যেন অনেকের গা জ্বালা করে। সেদিন কিছু ছাত্রছাত্রী এসেছিল। তারা অনেক বছর চাকরির বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫-এ উন্নীত করার দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে। তাদেরই একজন বিসিএস দেওয়া ছাত্র বলছিল, বেগম মতিয়া চৌধুরী দাঁত কেলিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গালাগাল, চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানো এসবের কিছুই জানতাম না। আসলে শিক্ষার মান পড়ে গেছে। পাসের হার বাড়িয়ে সরকার দেশে এক মেধাশূন্যতার সৃষ্টি করছে। আগে পাস করা মুশকিল ছিল, এখন ফেল করা মুশকিল। আগে জাতীয় গড় আয়ু ছিল ৪৫-৫০, এখন গড় আয়ু ৭২-৭৩। তাই ছেলেমেয়েদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫-এর দাবি মোটেই অন্যায্য নয়। পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৪০, অন্যান্য প্রদেশে দু-এক বছর কম। শ্রীলঙ্কা-৪৫, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, ফ্রান্স, ফিলিপাইন সব জায়গায় ৩০-এর অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল গভর্নমেন্ট উভয় ক্ষেত্রে পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে। এখানে আমাদের দেশে এত কাড়াকাড়ি কেন? বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় যে পরীক্ষাজট হয়েছিল তা বিবেচনায় এনে অনতিবিলম্বে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, স্পিকার সবাই বয়সসীমা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছেন। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হয়নি। এভাবেই চলছে দেশ। কেউ কোনো দিকে তাকায় না, ভেবে দেখে না।

রাজশাহীর জনসভায় বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে বুকে লালন করে রাজনীতিতে এসেছি। তাঁকে বুকে লালন-পালন-ধারণ করেই এপার থেকে ওপারে যেতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করে যারা দেশকে লুটেপুটে খাচ্ছে আল্লাহ যদি সুযোগ দেন তাহলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীরউত্তম জিয়াউর রহমানের বিভক্তি দূর করে দেশে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেব। ছাত্রলীগের ওই বন্ধুর ক্ষোভের কারণ আমি বুঝি। নানা কলা-কৌশলে লুটেপুটে খেতে নানা বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। সেটা না থাকলে তারা থাকে না তা বুঝি। তাই বিভাজনের মাধ্যমে যাদের রুটি-রুজি তারা এই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে আমাকে গালি দিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকে গালি দেওয়া হয়, কমবেশি তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও দেওয়া হয়। যাক ওসব কথা। দেশ কখনো কারও জন্য বসে থাকে না। আমরা অনেক বিচার-বিবেচনা করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছি। আমরা অবাধ-নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কেউ কেউ বলছেন ২০১৪ সালের মতো সরকারি দলের লোকজন জোর করে ভোট নিয়ে নেবেন কথাটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সবাই নির্বাচন করলে ২০১৪ সালেও সরকার খুব বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত না। শক্তিশালী সংসদ থাকলে প্রশাসন এত অন্ধ বা দায়িত্বহীন হতে পারত না। আমার তো মনে হয় জনগণকে ভোট কেন্দ্রে যেতে কারও কিছু করতে হবে না। জনগণ নিজেরাই নিজেদের ভোট দিতে এবং তা রক্ষা করতে যথেষ্ট। বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভোট দিতে ভুল করেনি। তারা রণক্ষেত্রে নেমে পিছপা হয়নি। তাদের প্রতি অপার বিশ্বাস রাখা দরকার। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে ঘোষণা দিয়ে জনগণকে তাদের মেধা, মনন ও শুভশক্তি প্রদর্শনের একটা সুযোগ করে দিয়েছে।

পাকিস্তানের সর্বশেষ নির্বাচন ছিল সত্তরের ৭ ডিসেম্বর। গোয়েন্দাদের খবর ছিল আওয়ামী লীগ ৮০-১২০-১২৫ আসন পাবে। ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগ ১২০-১২৫ আসন পেলে কী আসে-যায়। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সরকার আর পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ উত্তাল আন্দোলনের লেঠা ওখানেই চুকে যায়। সেই ভরসাতেই ইয়াহিয়া খান শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে গিয়েছিল। তার কাছে আরও খবর ছিল বাঙালিরা কখনো এক হতে শেখেনি। বাঙালিরা একজন আরেকজনের পেছনে সব সময় লেগে থাকে এটাই তাদের স্বভাব। উত্তাল আন্দোলনকে ধামাচাপা দিতে সাধারণ নির্বাচনের কোনো বিকল্প ছিল না। তাই ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে ‘লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে বলতে গেলে হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পরও জনগণের ওপর গভীর আস্থা ছিল বলে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে গিয়েছিলেন এবং সেই নির্বাচনের ফল পাকিস্তানিরা না মানার পরিণতি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। নিষ্কলুষ একটি নির্বাচন জনগণের প্রাণের দাবি। এতে যে বাধার কারণ হবে, সে যত বড়ই হোক তুলার মতো উড়ে যাবে। জনগণকে উপেক্ষা করে আমাদের দেশে অনেক নেতা অনেক দল এতদিন যা খুশি তাই করেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়েছিলেন। তার সঙ্গেই আঁতাত করে বা জোট বেঁধে জননেত্রী ক্ষমতায় বা সরকারে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। এক দিনের জন্যও এরশাদ তার দায়িত্ব পালন করেননি। বরং বলছেন, সবাই নির্বাচনে এলে তারা আগের মতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করবেন। আর না এলে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকার গঠন করবেন। মনে হয় এ যেন মামার বাড়ির আবদার ছেলের হাতের মোয়া যা খুশি চাইলেই পাওয়া যায়! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব মানুষকে অবজ্ঞা করছেন। আমাদের ছেলেমেয়েরা কোটা সংস্কার চেয়েছিল। তাদের সঙ্গে কী নির্দয় আচরণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিকে কোনো মূল্যই দেওয়া হয়নি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রাস্তায় নেমেছিল। আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে দেশের জন্য কী করা দরকার। তাদের সঙ্গেও প্রতারণা করা হয়েছে। সবাই মনে করছে কোনো কিছুর কোনো জবাবদিহিতা নেই। ভাঙা রেকর্ডের মতো উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়নের কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। রাস্তাঘাট, দালান-কোঠা নিশ্চয়ই হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু তার হিসাব কোথায়? উন্নয়নের টাকা কারও পৈতৃক নয়, দেশের জনগণের মাথা বন্ধক দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বা অন্যান্য অর্থলগ্নি সংস্থার কাছ থেকে এনে লুটপাট করা হচ্ছে। ঋণ করে ঘি খাওয়া উন্নতির লক্ষণ নয়। এর আগে কখনো এত আর্থিক অনিয়ম কেউ দেখেনি। প্রতি জনের মাথাপিছু ঋণ ৭০-৮০ হাজার টাকা। আমার সঙ্গে তো বর্তমান সরকারের কোনো বিল নেই। আওয়ামী লীগ সরকার আওয়ামী লীগের লোকদের ঋণী করবে নাকি বিক্রি করবে তা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমাদের নামে ঋণ কেন? যে কোনো সরকারই জনগণকে জিম্মি করে অথবা মর্টগেজ দিয়ে বিদেশি ঋণ নেওয়ার একটা পদ্ধতি তৈরি হওয়ায় কাউকে কোনো কথা না বলে কোনো জবাবদিহিতা না করে দেদার বিদেশি ঋণ এনে ফুর্তি করছে। আজ হোক কাল হোক একদিন না একদিন অবশ্য অবশ্যই এসবের জবাব দিতে হবে।

আমরা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন চাই। তাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে দুলাভাই এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাড়ি গিয়েছিলাম। তাকে বলেছি, এখনো ’৭১-এর মতো একটি ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে জনতার বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গায়ের জোর খাটানো ঠিক হবে না। শিডিউল ঘোষণার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অবশ্যই একটি বৈঠক করা উচিত ছিল। তা তারা করেনি। কোনোরকম বুদ্ধি থাকলে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন ঠিক করা হতো না। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন। এক সপ্তাহ আগে ও পরে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবী বন্ধ থাকে। আমরা কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বাস করি না। পৃথিবীর গণমানুষের সঙ্গে আমাদের মিলেমিশে বাস করতে হয়। কেন এমন না-বুঝের মতো যা খুশি তাই করা হবে? যে রাজনৈতিক দল নিয়ে কারবার তাদের এত উপেক্ষা-অবজ্ঞা কেন? আর এত তাড়াহুড়ার দরকার কী?

লেখক : রাজনীতিক

Bootstrap Image Preview