নাটোর প্রতিনিধি:
মাত্র ১০ মিনিট পরে কেন্দ্রে আসায় কেন্দ্র সচিব পরীক্ষাই দিতে দিল না। অনেক অনুনয় বিনয় করে, দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি করলেও মন গলেনি তার। স্কুল গেটের বাইরেই কেটে গেলো জেএসসি’র তিন শিক্ষার্থীর তিন ঘণ্টা সময়। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হলো তারা। অন্ধকারে ডুবে গেলো তাদের মূল্যবান দুই বছর।
নাটোরের বড়াইগ্রামের দেওশীন উচ্চ বিদ্যালয়ের এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থী হিসেবে সুমাইয়া খাতুন, লাবনি খাতুন ও মোহন আলী বনপাড়া পৌর শহরের সেন্ট যোশেফস স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে মাত্র ১০ মিনিট দেরী হয়েছে। আর এতেই গেটের মধ্যে প্রবেশ করতে দেয়নি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব ফাদার লাজারুস রোজারিও।
গত ৫ তারিখের ইংরেজী ২য় বিষয়ে পরীক্ষার্থী ছিল তারা তিন জন। কিন্তু কেন্দ্র সচিবের কারণে তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি।
শনিবার (১০ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে ওই তিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ থাকায় তারা যানবাহন পাননি। প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে আসার পর তারা একটি ভ্যান পেলে তাতে তড়িঘড়ি করে কেন্দ্রে আসে। কিন্তু কেন্দ্র সচিব তাদেরকে ঢুকতে দেননি।
তারা আরও জানায়, গত বছর এক বিষয়ে ফেল করায় এবারে তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল। অনাকাঙ্খিতভাবে মাত্র ১০ মিনিট দেরী হওয়ায় চলতি বছর ও এর আগের এক বছর মিলে তাদের জীবন থেকে অন্ধকারে ডুবে গেলো ২ বছর সময়।
ওই তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা জানান, পরীক্ষা দিতে না পারায় তাদের মনের অবস্থা খুবই খারাপ। বিষন্নতায় ভুগছে তারা। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে না। তাদের নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।
অপরদিকে শুক্রবার (৯ নভেম্বর) সকালে বনপাড়া সরকারি রোকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী ১০ মিনিট দেরী করলে তাদেরকে আধাঘণ্টা পর কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়। একই ঘটনায় দুই রকমের আচরণ করায় কেন্দ্র সচিবের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়ে অভিভাবক ও অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ।
অভিভাবক ও অন্যান্য শিক্ষকগণের মতে, কেন্দ্র সচিব চাইলে তাদেরকে পরীক্ষার সুযোগ দিতে পারতো। কোমলমতি এই শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে উনি অমানবিক আচরণ করেছেন।
এ ব্যাপারে ফাদার লাজারুস রোজারিও'র বলেন, ইউএনও স্যারের পরামর্শে তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আনোয়ার পারভেজ জানান, আমার জানা মতে ওই তিন শিক্ষার্থী এক ঘণ্টা পর কেন্দ্রে এসেছে। তাই তাদেরকে পরীক্ষা দিতে অনুমতি দেয়া হয়নি।
এ ব্যাপরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ শনিবার সকালে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ও বিশেষ বিবেচনায় পুনঃপরীক্ষার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলে তা ইউএনও হস্তক্ষেপে বন্ধ করা হয়।
ইউএনও সাংবাদিকদের জানান, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বিশেষ বিবেচনায় পুনঃপরীক্ষা গ্রহণের আবেদন জানালে আমি তাতে সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেবো। দপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।