নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালতে দেখতে হাজির করাতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি ছিল। সেই শুনানিতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া আদালতে এ কথা বলেন। শুনানিতে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও নাইকো দুর্নীতি মামলায় আসামি ছিলেন। কাজেই তাকেও এখানে হাজির করা উচিত।
এ সময় বিচারক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মামলার আসামি নন। কাজেই তাকে এখানে হাজির করানোর কোনো প্রশ্ন ওঠে না।’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল আজ। শুনানি শেষে এই আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবির আগামী বুধবার (১৪ অক্টোবর) এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। ঢাকা বিশেষ আদালত-৯ এ এই মামলার বিচারকাজ চলছে।
এরপর এই মামলার অন্যতম আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। প্রথমে মওদুদ আহমদ আজ শুনানি না করার জন্য আদালতে একটি দরখাস্ত করেছিলেন। কিন্তু আদালত সে দরখাস্ত নামঞ্জুর করে তাঁকে শুনানিতে অংশ নিতে নির্দেশ দেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে কারাগারে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতাল থেকে আজই তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে আদালতে আনা হয়। আদালতের কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়াকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছিলেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। আসামিপক্ষ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ জুলাই এ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং রুল দেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক আমিনুল ইসলাম ওই আবেদন মঞ্জুর করেন।
এদিকে, নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি না হলেও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালত। সেদিনই তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে পাঠানো হয়। পরে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে গত ৬ অক্টোবর কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ-এ নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এখানে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে থাকাবস্থাতেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদীপক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে (দুদক) হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এছাড়াও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের পৃথক মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বিশেষ জজ আদালত। তার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলাসহ আরও ৩২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।