ছেলাবেলায় শীত মৌসুমে ফুটবল খেলতাম। দাড়িয়াবান্দাসহ নানা ধরনের গ্রামীণ খেলা খেলে কাটিয়েছি। খেলাগুলো বেশিরভাগ হতো নাড়াক্ষেতে অর্থাৎ যে ক্ষেতের ধান কেটে নেয়া হয়েছে। মাঠে খেলতাম না বড় খেলোয়াড়দের জন্যে। কারণ আমাদের প্রাইমারি লেভেলের ছাত্র বা গ্রামের ছেলেদের জন্যে কেউ জায়গা দিত না বিষয়টা এমন না বরং নিজেদের নিরাপত্তা, খোলামেলা পরিবেশের জন্যেই নাড়াক্ষেতে খেলতে হতো। এক সময় দেখা যেত সেখানেও প্রচুর দর্শকের সমাগম। বড়দের খেলা দেখার যেমন দর্শক জুটতো আমাদের তার চেয়ে কম নয়।
সবচেয়ে খুশির কথা হলো আমরা এ পাড়া, ও পাড়া খেলা লাগাতাম। এক সময় আমাদের এই খেলা লাগানো ছোটদের থেকে বড়দের কাছে চলে যেত। অর্থাৎ সেই খেলা আর আমাদের হতো না বড়রা খাশি, গরু, টিভি বা অন্যান্য জিনিস পুরস্কার রেখে সেই খেলার আয়োজন চালাতো। এতে আমাদের ছোটদের বিভিন্ন পাড়ার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক তেমন নষ্ট হতো না। ছোটদের খেলা বড়দের কাছে গিয়ে আরো বড় হয়ে যেত। আমরা যারা শুরু করেছিলাম তারা দূর থেকে খেলা দেখতাম ভালোই লাগতো কখনো মনে কষ্ট হয়নি। কখনো কখনো খলোয়াড়রা আদা, লেবু খাওয়ার সময় আমাদেরও দিত। আমরাও তাদের জন্যে বাড়ি থেকে নিয়ে যেতাম। উপভোগ করতাম।
ফুটবল খেলা কিন্তু আমরা চামড়া দিয়ে নির্মিত বল দিয়েই খেলতাম। তবে শুরুটা পলিথিনে খড় বা কাপড় গোল করে বল বানানোর মাধ্যমে শুরু হতো। এক বছরের বল আরেক বছর পর্যন্ত যেত না। আমার এতো কথা লেখার কারণ হচ্ছে বর্তমান রাজনৈতিক সংলাপের নামে ঐক্যফ্রন্টের 'বল' নিয়ে।
আজ ৭ নভেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেছেন। ইতিপূর্বে ১ নভেম্বরও তারা ৭ দফা দাবি নিয়ে ১৪ দলনেতা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। অনেক অযৌক্তিক দাবিও তারা উত্থাপন করেন। যা বাস্তবসম্মত তা মানা হবে বলে ১৪ দলনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্বাস দেন।
গতকাল ৬ নভেম্বর তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে নানা ধরনের হুমকি-ধামকিও দিয়েছেন। আজ আবার বৈঠকে বসলেন। আজ ৪ দফা প্রস্তাব দেন ড. কামাল। দফাগুলো হলো: '১. বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি ২. প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেওয়া ৩. ১০ সদস্যের নিরদলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ও ৪. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।'
এসব প্রস্তাব উত্থাপন করে সাংবাদিক সম্মেলনে ড. কামাল বলেন, 'আমরা সংলাপের মাধ্যমে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছি। আমরা চেয়েছি শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায় করতে। এখন বল প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। এরপর যা হবে তার দায়-দায়িত্ব সরকারের।' (দৈনিক যুগান্তর)
তিনি যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন 'এখন বল প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে' এসব প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে তার বলটি হচ্ছে আগুনের। সাধারণ কোন বল নয়। এই বল না পারা যাবে হাতে ধরতে, তাতে করে গোলকিপারের হাত পুড়ে যাবে। আর না পারবে খেলোয়াড় পা দিয়ে কিক করতে। তাতে করে খেলোয়াড়ের পা পুড়ে যাবে।
অবাস্তব একটি বল প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে তিনি রেখে এসেছেন। এখন বেইলি রোডের নিজ বাসায় বসে সাংবাদিকদের বলছেন 'বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে'। ড. কামাল সাহেবের এমন কথা শুনে আমার ছেলেবেলার আর একটি গল্প মনে পড়ে গেল।
অনেক সময় নানা কারণে আমাদের খেলায় কথা কাটাকাটি হয়ে খেলা ভেঙ্গে যেত। এতে করে একটি পক্ষ নিজেদের দোষ ঢাকার জন্যে নিজেদের পাড়া বা গ্রামে গিয়ে রটিয়ে দিত সব দোষ তোমাদের। আমরা ধোয়া তুলসিপাতা। এতে করে পারস্পারিক সম্পর্ক অনেক সময় নষ্ট হতো। যদিও বেশিরভাগ ছেলে একই স্কুলে পড়ালেখা করতাম।
ড. কামাল হুমকি দিলেন 'আমরা নিজেদের দাবি জানিয়েছি। কথা না রাখলে খেসারত দিতে প্রধানমন্ত্রীকে। কোন কিছু হলে দায়-দায়িত্ব সব কিছু তাকে নিতে হবে।'
দেশের মানুষ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। নির্বাচন হবে পারস্পারিক প্রতিযোগিতাপূর্ণ কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। এক প্রার্থী অপর প্রার্থীর পোস্টার ছিড়ে ফেলে। তোরণ ভেঙ্গে দেয়। কর্মীদের মারপিট করে। এতে করে হাঙ্গামা লেগে থাকে পরস্পরের মধ্যে হিংসার জন্ম হয়। এ হিংসা বংশ পরম্পরায়ও থাকে।
ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচিত হয়েই বা কি করবে বুঝি না। কারণ যাদের সাথে নিয়ে জোট গঠন তাদের অনেকেই নানা সময় ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলেন। জাতিকে কতটুকু উন্নতির দিকে নিয়ে গেছেন তা চিন্তা করলেই বেরিয়ে আসবে। অযথা লম্ফযম্ফ করে কি লাভ? মানুষের জন্যে কাজ করলে মানুষ কাছে ডাকবে। শুধু ক্ষমতার কাছে গিয়ে আসন দখল করে কোন কল্যাণ হবে না দেশবাসীর।