Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সাতক্ষীরার তালায় মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ঝুঁকিতে দেড় লখ মানুষ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:৫২ PM
আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:০৭ PM

bdmorning Image Preview


এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার তালায় সুপেয় পানির সংকট ও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন উপজেলার দেড় লখ মানুষ। আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ বছরে একই পরিবারের ৪ জনসহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৃষ্ণকাটি গ্রামের জালাল মোড়ল সম্প্রতি আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। এক পর্যায়ে তা ক্যানসারে রূপ নিয়েছে। তার পরিবারের ৪ সদস্যসহ গত ১৭ বছরে অনন্ত ১৩ জন আর্সেনিকের কারণে মারা গেছেন।পরিবারটির অন্য সদস্যসহ ঐ গ্রামের তিন শতাধিক মানুষও কম-বেশি আর্সেনিকে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকায় নলকূপের পানিতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। আর সুপেয় পানি সংকটের কারণে আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছেন দেড় লক্ষাধিক মানুষ।

উপজেলা সদরে তালা সরকারি কলেজ চত্বরের ১টি টিউবওয়েল ও উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের বাড়ির পাশ্বে ১টি টিউবওয়েলে আর্সেনিক না থাকায় তালা সদর, মোবারাকপুর, রহিমাবাদ, বারুইহাটি, মহল্লাপাড়া বসবাসকারী সাধারণ মানুষেরা পানির জন্য কাকডাকা ভোর থেকে পানি সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নামতে হয়।

এ ছাড়া উপজেলার অধিকাংশ হোটেল, চায়ের দোকান ও মিষ্টির দোকানে আর্সিনিকমুক্ত পানি ব্যবহার না করায় আর্সিনিকজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দিনদিন বেড়েই চলেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জনস্বাস্থ্য বিভাগ দীর্ঘদিন নলকূপের পানি পরীক্ষা করেনি। সংশ্লিষ্ট এই দফতরের কেউ এলাকায়ও যাননি। ইতিমধ্যে উপ-সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কৃতক গ্রহীত কোন প্রকল্পের আলোর মুখও দেখেনি তারা। সরকার কতৃক আর্সিনিকমুক্ত পানি সরবরাহের বিভিন্ন  প্রকল্প হাতে নিলেও অত্র দফতরের তদারকি ও গাফিলতির কারণে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ হলেও আর্সিনিকমুক্ত পানি সরবারহের কোন প্রকার সুফল পাইনি।

আর্সিনিকের অবস্থা এই ভয়াবহ রুপ নিলেও স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কোন মাথাব্যাথা নেই। মাঝেমধ্যে এনজিওকর্মীরা এলাকা পরিদর্শন ও জরিপ করলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয়নি।

উপজেলার মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তালা সদর, খলিলনগর, খেশরা, খলিশখালী, জালালপুর  ও মাগুরা ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

আর্সেনিক আক্রান্ত হয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্য জালাল মোড়ল জানান, বর্তমানে তিনি আর্সেনিক থেকে মারণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাকে নিয়মিত কেমোথেরাপি নিতে হয়। তার ফুফু সরবানু বিবি, বাবা আনসার মোড়ল, বড় ভাই আলাউদ্দীন মোড়ল, ভাই সালাউদ্দীন মোড়ল আর্সেনিক দূষণে মারা গেছেন। পরিবারটির অন্য সদস্যও এই আর্সেনিকের কারণে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন।

প্রতিবেশী সাজেদা বেগম জানান, তিনিও আর্সেনিকে আক্রান্ত। বিয়ের পর তার স্বামীর পরিবার যখন জানতে পারেন তিনি আর্সেনিক আক্রান্ত, তখন তাকে বাপের বাড়িতে রেখে যান। আর্সেনিকের কারণে বিগত কয়েক বছর আগে মারা গেছেন সালাউদ্দিন, মুনছুর রহমান মোড়ল, শাহানারা বেগম, স্বরূপজান বিবি, সোনাভান বিবি, সোহরাব মোড়ল, ইয়াছিন মোড়ল, সরবানু বিবি, ছবেদ মোড়ল, ফকির মোড়ল এবং জবেদ আলী মোড়ল। আর্সেনিকের ভয়াবহতার কারণে তাদের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনও আসেন না। তারাও স্বজনদের বাড়িতে যেতে পারেন না।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিদুল হক লিটু জানান, কৃষ্ণকাটি গ্রামে একই পরিবারের চারজনসহ অনেকেই মারা গেছেন মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করায়। টিউবওয়েলগুলোর পানি পরীক্ষা করার উদ্যোগ নিয়েছি।

তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাজীব সরদার বলেন, আমরা অনেকের চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি আর্সেনিক থেকে রক্ষা পেতে পরামর্শও দিয়েছি। তবে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক কোন মানুষের শরীরে ঢুকলে সারা শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, জেলার সব উপজেলার পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেশি।

এলাকাবাসী এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

Bootstrap Image Preview