Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনের তফসিলের আগেই ৩৫শের প্রজ্ঞাপন চায় শিক্ষার্থীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২০ PM
আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৮, ০৭:২০ PM

bdmorning Image Preview


আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন চান ৩৫-প্রত্যাশীরা৷ চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করার পক্ষে ১৬ দফা যুক্তি তুলে ধরেছেন তারা৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ জনতার মঞ্চ নামের দুটি সংগঠনের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ৩৫-প্রত্যাশীরা এ দাবি জানান৷

দাবি আদায়ে আগামীকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় ছাত্র পরিষদ ও জনতার মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করবে এবং আগামী শনিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ যৌথভাবে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলাম সেলিম৷ লিখিত বক্তব্যে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে ১৬ দফা যুক্তি উত্থাপন করেন সেলিম৷

তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা চাকরি চাই না, শুধু একটা সুযোগ চাই৷ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় বৈষম্য থাকতে পারে না। সোনার বাংলার মানে দেশের কোথাও বৈষম্য থাকবে না৷ সংসদ, কেবিনেট মিটিং শেষ হয়ে গেল৷ আমরা প্রত্যাশায় ছিলাম, এই সংসদ থেকেই একটা ফলপ্রসূ সমাধান পাব৷ দেশ এগোচ্ছে৷ কিন্তু চার কোটি লোক আজ বেকার৷ এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে এই উন্নয়ন কতটা ত্বরান্বিত হবে—এটি একটি প্রশ্ন।’

সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ। সর্বশেষ গত মাসের শেষ সপ্তাহে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান করতে গেলে পুলিশি বাধায় তাঁদের কর্মসূচি পণ্ড হয়৷

ভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ জনতা মঞ্চের আহ্বায়ক আল আমিন রাজু প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে আমরা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার আন্দোলন শুরু করি। ২০১৪ সালের শেষের দিকে আমি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তখনকার সভাপতির সঙ্গে আমার মতবিরোধ ছিল। এর জেরে ১৪ সালের পর সংগঠন বিভক্ত হয়ে যায়৷’

সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি পি কে ইউসুব ইলিয়াস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক ফাতেমা মুন, সাংগঠনিক সম্পাদক শেহজাদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷

চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার পক্ষে উত্থাপিত যুক্তিগুলো হলো:
১. প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হওয়ার ন্যূনতম বয়স ৬ বছর করা হয়েছে৷ ফলে আগে যেখানে একজন ছাত্র ৪-৫ বছর বয়সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৪-১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাস করতে পারত, এখন সেটা ১৬ বছরের আগে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়।
২. স্নাতক ও সম্মান—উভয় ক্ষেত্রে লেখাপড়ার সময় এক বছর করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩ ও ৪ বছর করা হয়েছে।
৩. ডাক্তারদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছিল এই বলে যে তাঁদের সাধারণের চেয়ে ১ বছর বেশি অর্থাৎ ৪ বছর পড়াশোনা করতে হয়৷ পরবর্তী সময়ে সাধারণদের স্নাতক ও সম্মান—উভয় পর্যায়ে সময় ১ বছর বাড়ানো হলেও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হয়নি।
৪. এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স বা ডিগ্রি ও মাস্টার্সের ফলাফল বের হওয়ার মধ্যে প্রায় ২ বছর সময় নষ্ট হয়।
৫. প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ২৩ বছর বয়সে শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সমীকরণটি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। এর প্রমাণ, ২৭-২৮ বছর বয়সের আগে কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া।
৬. যথাসময়ে লেখাপড়া শেষ করতে না পারার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে ২ থেকে ৩ বছর সেশনজট।
৭. রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন থেকে যে সময় নষ্ট হচ্ছে, তার ক্ষতিপূরণ করা প্রয়োজন।
৮. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের যথাসময়ে পরীক্ষা নিতে না পারা (২৭ থেকে ২৮তম বিসিএস পরীক্ষার গ্যাপ ছিল ৩ বছর)।
৯. সরকারি চাকরি থেকে অবসরের মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হয়েছে।
১০. নার্সদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৬ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।
১১. সরকারি নিয়ম অনুসরণ করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকসহ বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও ৩০ বছরের বেশি বয়সী জনবল (অভিজ্ঞতা ছাড়া) নিয়োগ দেয় না৷ ফলে বেসরকারি ক্ষেত্রেও কর্মের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
১২. নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত যোগ্যতার ভিত্তিতে, যোগ্যতার সঙ্গে বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই।
১৩. ৫৭ বছরের মানুষের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু বাড়লে ৩০ বছরের যুবকের কর্মক্ষমতা ও গড় আয়ু কমে না—তা প্রমাণ করতে।
১৪. উন্নত বিশ্ব তাদের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরের ক্ষেত্রে বয়সের কোনো সীমারেখা নির্দিষ্ট করে রাখেনি৷ পার্শ্ববর্তী দেশসহ উন্নত দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি৷ কোনো কোনো দেশে অবসরের আগের দিন পর্যন্ত চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে।
১৫. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সঙ্গে সরকারের কোনো ধরনের আর্থিক সংশ্লেষ নেই৷ কিন্তু সিদ্ধান্তটি হবে জনমুখী৷ এতে উপকৃত হবেন লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী ও তাঁদের পরিবার এবং সর্বোপরি দেশ।
১৬. বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্ববৃহৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও সেশনজটমুক্ত নয়।

Bootstrap Image Preview