Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কোটা বাতিল ও নারীর ক্ষমতায়ন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৩৫ PM
আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


আকরাম হোসেন।।

নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বনির্ভতার জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ১০ শতাংশ নারী কোটা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে নারীদের জন্য ১৫ শতাংশ কোটা, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো। সব শ্রেণির চাকরিতে মেধায় নিয়োগের পর অবশিষ্ট পদের নারী নেয়া হতো। মূলত নারীর ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, নারী শিক্ষা আগ্রহ সৃষ্টি করার জন্য এই কোটার ব্যবস্থা করা হয়।

নারী কোটাসহ অন্যান্য কোটার ফলে বৈষম্যের শিকার হয় সাধারণ শিক্ষার্থী। এই অবস্থা থেকে কোটা সংস্কারের জন্য জোর দাবি তোলে বিভিন্ন মহল। আন্দোলন নামে সারাদেশের শিক্ষার্থী। দীর্ঘ আন্দোলদের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে যাচ্ছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। যদিও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো কোটা সংস্কার চাই, অর্থাৎ কোটা বহাল থেকে ৫৬ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। কিন্তু সরকারি প্রথম ও দ্বিতিয় শ্রেণির চাকরিতে কোন কোটা থাকবে না বলে ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

তৃতীয় শ্রেণি, চতুর্থ শ্রেণি এবং প্রাথমিক শিক্ষায় কোটা বহাল থাকলেও প্রথম আর দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা থাকছে না। অর্থাৎ সরকারে উচ্চ পর্যায়ের চাকরিতে নারীদের জন্য যে সংরক্ষিত আসন ছিল, সেটা থাকছে না। যার ফলে নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে কিছুটা বাধা আসবে। তবে কোটা বাতিলের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করার ক্ষেত্র বেড়েছে। আগে যেখানে ৪৪ শতাংশের জন্য প্রতিযোগিতা হতো এখন সেখানে ১০০ শতাংশের জন্য প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। পথ সংকুচিত হলেও নারীর যোগ্যতা প্রামাণের পথ সৃষ্টি হয়েছে।

এখন নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নারী শিক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। নারী শিক্ষার পথ প্রশার এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আরো বেশি করার প্রযোজন। সহজ সসমিকরণে যেমন মনে হয় ব্যস্তবে নারীদের চলার পথ বা উঠে আসার পথ এখনো অতটা মসৃণ না। অনেক সংগ্রাম করেই আসতে হয়।

নারী শিক্ষার ক্ষেত্র কিছু পরিবর্তন হয়েছে, বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তবে নারীর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের এখনো নারীর অনুকূলে না। শহরে কিছু পরিবর্তন হলেও গ্রামে উল্টো, প্রতিমুহূর্তে তারা নানা প্রতিবন্ধিকতার মধ্যে পড়ছে। হয়রানীর শিকার হচ্ছে। শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, নারীরা শিক্ষায় ঝুঁকছে। অন্যান্য কারণে এর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না।

কিছুদিন আগে এক শিক্ষকের সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন, তুলনামূলকভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীরা ছেলেদের থেকে ভালো করছে, পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাচ্ছে, ক্লাসে ভালো পার্ফম করছে। পড়াশোনায় মনোযোগী ভালো।

এক বন্ধুর মা হাই স্কুলের শিক্ষক। সেও জানালো, পরীক্ষার খাতায় সর্বোচ্চ নাম্বারগুলার অধিকংশই দেখা যাচ্ছে মেয়েদের দখলে। মেয়েরা পড়াশোনায় ভালো করছে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এই মেয়ে শিক্ষার্থীদের সব উচ্চশিক্ষা আসতে পারছে না।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যদি মেনে নেয়, তহলে উচ্চশিক্ষার প্রক্রিয়া হচ্ছে, যে যেখান থেকে পারে এইএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে যেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়া। এখানে এসেই আটকা পরছে নারী শিক্ষার্থীরা।

গ্রামের পরিবারগুলো মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য বড় শহরগুলোতে একা একা আসতে দিতে চায় না। যার ফলে স্থানীয় যে ন্যাশনাল ভার্সিটি ও ডিগ্রি কলেজ আছে সেখানেই পড়াশোনা করছে। ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এক না এটা মানতে হবে। আবার শহরকেন্দ্রিক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও মফস্বলের ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় বা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার মান বা শিক্ষকের কোয়ালিটি এক না, চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য স্বামর্থও এক না, এটা মেনে নিতে হবে।

এই যে গ্রামের পরিবারগুলো মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে আসতে দিতে চাচ্ছে না, এর পিছে কারণও আছে। বাইরে চলাচল করা নারীরা প্রতিমুহূর্তে বিভিন্ন হেরেজম্যান্টের শিকার হচ্ছে। কোথাও নিরাপদ অনুভব করছে না। বরং নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। এমনকি সহপাঠী বা শিক্ষকের দ্বারাও বিভিন্নভাবে অপদস্তের শিকার হচ্ছে, এটাও মানতে হবে। সব বাঁধা মোকাবেলা করে যারা উচ্চশিক্ষায় আসছে তারা সব দিক থেকে ভালো করছে। নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে।

কিন্তু সব বাঁধা মোকাবেলা করে সবাই তো আসতে পারছে না। যারা পারছে তাদের অধিকাংশই শহরকেন্দ্রিক, গ্রামের এই সংখ্যাটা খুবই সীমিত। গ্রামাঞ্চলের নারীর ক্ষমতায়ন হামাগুড়ি দিয়ে এগোচ্ছে।

এখন নারী পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার। তারা যেনও নিশ্চিন্তে ঘরের বাইরে আসতে পারে এবং নিরাপদে ফিরে যায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। এটা কথা বা প্রদশর্নের মাধ্যমে না। মানুষের মনে আস্থা তৈরি করতে হবে। সেটা করার জন্য সরকারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে নারী শিক্ষার জন্য যে সুযোগ দেয়া হচ্ছে তা বেশিদূর এগোতে পারবে না। তবে চাকরির বাজারে পুরুষের সাথে সমান প্রতিযোগিতা করে চাকরি নিক নারী। এতে নারীর সঠিক ক্ষমতায়ন, যোগ্যতার প্রমাণ এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দুটোই হবে।

আকরাম হোসেন, গণমাধ্যমকর্মী

Bootstrap Image Preview