Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাজু ভাস্কর্যে ‘লড়ুক‘ আখতার হোসেনকে সংবর্ধনা দিবে শিক্ষার্থীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১১:২৫ AM
আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৩ AM

bdmorning Image Preview


আরিফ চৌধুরী শুভ।।

`অন্যায় যে করে অার অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সমদহে'- কথাটি আর বইয়ের প্রবাদে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাঁস হওয়া প্রশ্নের পরীক্ষা বাতিলে প্রশাসনকে বাধ্য করতে লড়ে যাওয়া ঢাবির শিক্ষার্থী আখতার হোসেন খুব কঠিন সময়ে আবারো প্রমাণ করলো। আখতার ঢাবির অাইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার অনশন সফল হতে যাচ্ছে। এই জন্যে তাকে সংবর্ধনা দিবে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফেসবুকে ‘লড়ুক আখতার হোসেন কে সংবর্ধনা’ নামে একটি ইভেন্টও খুলেছে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আগামী পহেলা নভেম্বর বিকাল ৩.৩০ টা তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

অাখতার যে রাজু ভাস্কর্যে মুমূর্ষু অবস্থায় শুরুতে একাই লড়েছেন, সেই রাজু ভাস্কর্যেই তাকে সংবর্ধনা দিতে চায় ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাকে সম্মানের সহিত বরণ করবে।

বড়ই আত্মকেন্দ্রিক আজকের এই সমাজে আখতার হোসেন শিক্ষার্থীদের চোখে অনেক বড় একটি অহিংস উদাহরণ। চারদিকে পাহাড় সমান অন্যায়, বৈষম্য দেখতে দেখতে যেখানে আমাদের চোখ সয়ে গেছে, সেখানে ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসকে নীতির প্রশ্নে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আখতারের। তাই তিনি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অনশণে বসেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি অসাধু চক্র হরিলিলার মতো প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নানা অপ্রীতিকর কাজ করে যাচ্ছে ঢাবি ক্যাম্পাসে। এই সমস্ত কাজের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যেমনি সমালোচনা ও চ্যালেঞ্চের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তেমিন অনেক সময় উত্থাপিত অভিযোগের  দায়সার সমাধান দিয়ে পার পেয়ে গেছে ঢাবি প্রশাসন। কিন্তু এবারই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনকে অভিযোগ আমলে নিতে বাধ্য করেছে শিক্ষার্থীরা। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অাপোষহীন ভূমিকা রাখেন অাইন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অাখতার হোসেন।

গত ১২ অক্টোবর পরীক্ষা নেয়ার পর পর জানা যায়, আগেই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এর মধ্যেও প্রকাশ করা হয় ফলাফল। আর ২৬ শতাংশের বেশি পাসের হার দেখে একে অস্বাভাবিক হিসেবেই দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) ফল বাতিলের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অনশনে বসেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আখতার। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে  অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে একাই অনশণ শুরু করেন তিনি।

উন্মুক্ত রাজু ভাস্কর্যে অনশণ করেছেন আখতার। অনশণের প্রথম দুইদিন প্রশাসনের কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। বরং তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নতিভুক্ত করার অপচেষ্টা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভিন্নমহল। অনশণের তৃতীয় দিনে মুমূর্ষু অবস্থায় অাখতার হোসেন পড়ে ছিলেন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে। তখন ঢাবির কয়েকজন শিক্ষক এসেছিলেন তার কাছে। চরম শারীরিক সংকটাপন্ন অবস্থায়ও অাখতার ঢাবির প্রক্টরকে তার দৃঢ় অবস্থানের কথা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হলে শিক্ষার্থীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অসুস্থ অাখতার এখনও পড়ে অাছেন ঢাকা মেডিকেলের ওয়ার্ডে।

যে দাবি অাখতার শুরু করেছিল একেবারে একা ও নির্ভয়ে, ক্রমশ তাতে সুর মেলাতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজের মধ্যে দাবির যৌক্তিকতা জোরদার হয়ে ওঠে। অালোচনা সমালোচনায় ঢাবি প্রশাসনের বিবেক জাগ্রত হয়। ঘ ইউনিটে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পাশ করা শিক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবি প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আখতারের সংবর্ধনা সম্পর্কে ২৪ অক্টোবর কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী বিডিমর্নিংকে বলেন, কেউ যদি এখন আমাদের জিজ্ঞাসা করে বর্তমান সময়ে দেশ গঠনে ঢাবির ভূমিকা কি? আমরা তার স্রেফ জবাব দিবো, ঢাবি হল সেই প্রতিষ্ঠান, যেখানে অাকতার হোসেনের মত একজন শিক্ষার্থী বেড়ে ওঠে।

আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ মোড়কে বিচরণ করা অসাধারণ এই অাখতার হোসেনকে বরণ করে নেওয়া এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করি। আমরা আরো মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়কেও বরণ করা উচিত এই সজ্জন আখতারকে।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন আখতার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এটি মনে রাখবে এবং ভবিষ্যতে প্রশ্ন যাতে আর ফাঁস না হয় সেজন্য এই সিদ্ধান্তটি বেরিয়ার (বাধা) হিসেবে কাজ করবে’।

বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম শুয়ে আছেন ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে। আখতারের হৃদয় হয়তো অনশনের একাকিত্ব দিনগুলোতে কবির বিদ্রোহী কবিতার নিম্নোক্ত চরণগুলো স্মরণ করেছে...
মহা বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না 
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।

Bootstrap Image Preview