Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইবির চিকিৎসাকেন্দ্রে সব রোগের মহাঔষধ প্যারাসিটামল!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৬ PM
আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:৩১ PM

bdmorning Image Preview
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র


ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে যেকোন রোগের চিকিৎসার জন্যে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল (টামেন) ও এন্টাসিট ট্যাবলেট দেন। সাথে সাথে সন্ধ্যার পরে যে কোন রোগের চিকিৎসায় শুধু ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও ল্যাব থেকে ভুল রিপোর্ট প্রদান, এক মিনিটে রোগী দেখে চিকিৎসা প্রদান, রক্তচাপ ও শরীরের তাপমাত্রা চেক না করে জ্বরের চিকিৎসা প্রদান, কথায় কথায় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও চিকিৎসকদের অফিস ফাঁকির অভিযোগও রয়েছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জুয়েল রানা বলেন, আমি যত দিন চিকিৎসাকেন্দ্রে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গেছি, ততদিন আমাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়েছে। আমার মনে হয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তাররা সকল রোগের মহাঔষধ হিসেবে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিয়েছে।

সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র যান। তাকে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও সেফটিপিন দেয় কর্তব্যরত চিকিৎসক। দুইদিন জ্বর আগের অবস্থায় থাকে। চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলে টাইফয়েট ও জণ্ডিস পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয় চিকিৎসক। ল্যাবের রিপোর্টে জণ্ডিস ধরা পড়ে সে অনুযায়ী চিকিৎসক দিনে দুইটি করে এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দেয় তাকে।

এরপরেও রোগের কোন উন্নতি না হলে ওই শিক্ষার্থী তার বাসা রাজশাহী চলে যায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক তার শরীরে জণ্ডিসের কোন আলামত নেই বলে নিশ্চিত করে। দিনে দুইটা করে এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দেয়াকে অযৌক্তিক দাবি করে তারা। পরে ওই চিকিৎসকের পরামর্শে সাব্বির আহমেদ সুস্থ হয়।

সাব্বির বলেন, আমি যখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকের কাছে জণ্ডিসের জন্যে দিনে দুইটি করে এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের প্রেসক্রিপসন দেখাই তখন ওই চিকিৎসক বলেন, কোন গরুর ডাক্তার এই চিকিৎসা দিয়েছে?

দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মানিয়ারা খাতুন প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র যায়। চিকিৎসক তার চিকেনপক্স হয়েছে বলে নিশ্চিত করে। চিকেনপক্সের চিকিৎসা হিসেবে তাকে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও এ্যান্টাসিট ট্যালেট দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে চিকিৎসক।

মানিয়ারা বলেন, ডাক্তার আমাকে শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও এ্যান্টাসিট ট্যালেট দিয়েছে। চিকেনপক্সের কোন চিকিৎসা দেয়নি।

সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র গেলে দেখা যায়, সকাল ৯টায় ক্যাম্পাস শুরু হলেও চিকিৎসকরা ক্যাম্পাসে আসেন ১১টার বাসে। দুপুরের খাবারের সময় নির্ধারণ না থাকায় অঘোষিত বিরতি চলে দুপুর ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। এছাড়াও সাড়ে ৪টায় ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও ৪টা থেকে উধাও হয়ে যান চিকিৎসকরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থী নাসিম বলেন, অসুস্থতার কারণে আমি প্রায় ক্লাস পরীক্ষা শেষ করে মেডিকেলে যাই, দুপুর ১টার দিকে কোন দিন ডাক্তার পাইনি। জানতে চাইলে বলে নামাজে গেছে অথবা দুপুরের খাবারে চলে গেছে।

আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী মাথিন মীম বলেন, আমি কয়েক দিন আগে প্রচণ্ড ঘাড়ের ব্যথা নিয়ে মেডিকেলে গিয়েছিলাম, সেখানে ডাক্তার আমার রক্তচাপ পরীক্ষা না করেই ঔষুধ লিখে দেন।

এদিকে সন্ধ্যার পরে জরুরি চিকিৎসায় বমি, মাথা ব্যথা, এলার্জি, শর্দি, কাশিসহ ছোটখাটো সব রোগের চিকিৎসায় ইঞ্জিকশন ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাতেমা আন্নি বলেন, গত পরশু রাতে হলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে আমার বান্ধবীরা মেডিকেলে নিয়ে আসলে আমাকে শুধু ইঞ্জিকশন দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে তা সত্যই, এটাতো পূণার্ঙ্গ হাসপাতাল না প্রথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যে ওষুধ-পাতি সেগুলো আমাদের আছে।

সন্ধ্যার পরে ছোটখাটো রোগের চিকিৎসায় ইঞ্জেকশন ব্যবহারের বিষয়ে বলেন, অভিযোগটি আমি আগেও পেয়েছি, সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে যাদের ইঞ্জেকশন দেওয়ার মতো তাদেরকে ইঞ্জেকশন দিবেন।

ল্যাব থেকে ভুল রিপোর্ট প্রদানের বিষয়ে তিনি বলেন, রিপোর্ট ভুল হইতে পারে অস্বীকার করার কিছুই নাই, ভুলের উর্ধ্বে তো মানুষ না। ভুল হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না, বড় ধরণের ভুল হওয়া খারাপ তবে ভুল না করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. হারুন উর রশিদ আশকারী বলেন, বিষয়গুলো আমি খতিয়ে দেখবো এবং অবস্থার উন্নয়নের চেষ্টা করবো অতিশীঘ্রই।

Bootstrap Image Preview