পরিবারের বাইরেও আমাদের জীবনে অনেক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যেই সম্পর্কগুলো মাঝে মধ্যে পরিবারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবারের সম্পর্ক সমাজে স্বীকৃত, বাস্তবসম্মত এবং অটুট। কখনও কখনও সম্পর্কের টানাপড়েন এই অটুট বন্ধনেও শিথিলতা নিয়ে আসে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কারও কারও জীবনে আবার সম্পর্ক ঠিক আগের জায়গায় ফিরে যায়, কারওটা আবার অপ্রত্যাশিতভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। কারও জীবনে সম্পর্ক আবার নতুন মাত্রা নিয়ে আসে। জীবন বৈচিত্র্যময় আর এই বৈচিত্র্যময় জীবনে সম্পর্কের বিচিত্রতাও আমাদের কম ভাবিত করে না। পরিবারের বাইরের অচেনা যে কেউ বিশ্বস্ততা দেখিয়ে আপনার কাছে আপন হয়ে উঠতে পারে। আবার পরিবারের একান্ত প্রিয় মানুষটিও হয়তো অবিশ্বাসের চোখ রাঙানি দিয়ে আপনাকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।
সমাজে এমন অনেক সম্পর্ক আছে, যার কোনো নাম নেই। অথচ এসব সম্পর্কের গভীরতাকে কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। এসব সম্পর্কে বিশ্বাস বিশাল জায়গা দখল করে আছে। এই বিশ্বাস হতে পারে পরিবারের বিশেষ কারও ওপর অথবা বাইরের কোনো তৃতীয় ব্যক্তির ওপর। তবে সব সম্পর্কের মধ্যেই প্রথমে বিশ্বাসটা স্থাপন করতে পারলে সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পায়। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকের মধ্যেই বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে সম্পর্ক অনেক মধুময় হয়ে ওঠে। সেখানে বিশ্বাস আর ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত হতে খুব বেশি কাঠখড় পোড়াতে হয় না।
পৃথিবীর যে কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, সে বন্ধুর মধ্যে কোন গুণটি বেশি খোঁজে, তাহলে সবাই এক কথায় বলবে, 'বিশ্বাস'। এই বিশ্বাসের আঁধারেই একজন বন্ধু তখনও আপনার পাশে থাকে, যখন আপনার স্টেজ পারফরম্যান্সটি খারাপ হয়; আবার তখনও পাশে থাকে, যখন আপনি পরীক্ষায় দুর্দান্ত রেজাল্ট করো কিংবা যখন আপনার মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার মতো ভয়ানক অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত আসে আপনার জীবনে।
যদি ঠিকানা পরিবর্তন করেন কিংবা কোনো কারণে যোগাযোগ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু সে পুরোপুরি চেষ্টা করবে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখার। একজন ভালো বন্ধু হয়তো আপনাকে তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের ব্যাপারে জানানোর সুযোগ পাবে না। তবে সে আপনাকে যতটুকুই বলবে, সেটুকু হবে পুরোটাই সত্য। এর মানে সে চেষ্টা করবে, সে আসলেই কেমন মানুষ_ সেটি আপনাকে বোঝানোর। এমন বন্ধু তার জীবনে ঘটে যাওয়া বিশেষ ঘটনাগুলোর সম্পর্কে আপনাকে অভিহিত করতে চাইবে। যদি খারাপ কিছু ঘটে তার জীবনে, তাহলে তার সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে আপনাকেও সতর্ক করে দেবে।
আপনি হয়তো জানেনই না যে, আপনার জীবনের লক্ষ্য কী? কিন্তু একজন বিশ্বস্ত বন্ধু ঠিকই জানে যে আপনি কী পছন্দ করেন, জীবন গড়তে আপনার কোন পথে হাঁটা উচিত। আর সেই পথেই আপনাকে যেতে সে অনুপ্রাণিত করবে। আপনি যেমন, ঠিক তেমনটাই সে দেখতে চাইবে আপনাকে। জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রেই, যে কোনো অবস্থানেই সে কখনোই চাইবে না আপনার লক্ষ্যচ্যুতি ঘটাতে। কিংবা কখনও এমন কোনো ঘটনার সৃষ্টি করবে না, যার ফলে আপনার কোনো ক্ষতি হয়।
জীবন চলার পথে পাওয়া মানুষগুলো একেকজন একেকভাবে প্রকাশ করতে চাইবে যে, সে আপনাকে কেয়ার করে বা খেয়াল রাখে। একজন হয়তো দেখা হলেই আপনাকে জড়িয়ে ধরে, আরেকজন হয়তো ভালোবেসে ভেংচি কেটে দেয়! সে আপনার খেয়াল রাখে কি-না, এটি বোঝার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো_ যখন দেখবেন সে আপনার জীবনের প্রতি আগ্রহী এবং সে জানে কখন আপনার মুড কেমন থাকে আর সে অনুযায়ী আপনার সঙ্গে কথা বলে। এভাবেই বিশ্বস্ত সঙ্গীরা আপনাকে ছায়া দিয়ে বেড়াবে প্রতিনিয়ত।
গাড়ির চাকার মতো প্রতিনিয়ত ঘোরে বিশ্বাসের চাকা। তবে পেছনের দিকে নয়; সামনের দিকে। বাতাস মাঝে মাঝে তার নিজের গতি পাল্টায়। পাহাড় বা দালানের গায়ে ধাক্কা খেয়ে ঘুরে যায়। কিন্তু তারুণ্যের চাকা কখনও গতি পাল্টায় না। পেছনেও ছোটে না। বিশ্বাসের চাকার মতো শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যায়। বিশ্বাসে ভর করে আপনি পৃথিবী জয় করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এক শ্রেণীর বিশ্বাস ভঙ্গকারী তা মানতে নারাজ। তারা নিজেরা যেমন লেজ গুটিয়ে থাকে, তেমনি অন্যদেরও লেজ গুটিয়ে থাকতে উৎসাহ দিয়ে যায়। কিন্তু বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর বিশ্বাসীরা তা মানবে কোন দুঃখে? কেনইবা উদঘাটন করবে না বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অজানা রহস্য। কেনইবা এভারেস্টের মাথায় রাখবে না তাদের বিশ্বস্ত পদচিহ্ন?
যেভাবে কাটিয়ে উঠতে পারেন অবিশ্বাসের ধকল।
বাথটাব কিংবা পুকুরের পানিতে ঠাণ্ডা মাথায় সময় নিয়ে গোসল সেরে নিতে পারেন।,একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন অথবা জিমে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে যেতে পারেন কিংবা বাইরে থেকে হেঁটেও আসতে পারেন,প্রিয় সিনেমা নিয়ে বসতে পারেন, পড়তে পারেন বই। শুনতে পারেন প্রিয় শিল্পী কিংবা পছন্দের গান। মনোনিবেশ করতে পারেন খেলাধুলায়।
এসবের মাধ্যমে আপনি অনেকটাই অবিশ্বাসের ধকল সামলে উঠতে পারবেন। ভুলে থাকতে পারবেন প্রিয় মানুষের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টগুলো।
সকালের সূর্য সোনা রঙ নিয়ে পৃথিবীর পথে নামে। আস্তে আস্তে রাঙিয়ে যায় সব রঙ। মানুষের মনের রঙে লাগিয়ে দেয় নতুন দোলা। তারুণ্যকে দিয়ে যায় নভোযানের গতি। তবু সেই যৌবন নামধারী বৃদ্ধরা রোদের পাড়ে দাঁড়িয়ে তারুণ্যের কান্না শুনে যান! বলি, মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবেন না এই রোদেলা দিনে। পড়ে থাকবেন না শিকড় কাটা লাউয়ের ডগার মতো। এতে পিছিয়ে পড়বেন। অবিশ্বাসের গায়ে শুধু শুধু তেল মালিশ করে কেন তাকে সারিয়ে তুলতে চাইবেন? ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ভাবুন। বিশ্বাসের নতুন পথ খুঁজুন। এতে যদি একান্ত আপন মানুষটিও বিশ্বাস ঘাতকতা করে তবু তার ওপর থেকে মুখ তুলে নিন। কারণ, আপনি জানেন শেকসপিয়রের সেই অমর বাণী, 'যে আপনাকে ভালোবাসে, তাকে আপনি তার মতো করে ছেড়ে দিন। সে যদি সত্যিই আপনাকে ভালোবাসে তবে ফিরে আসবেই।' কথাটায় বিশ্বাস রাখুন। আবার ফিরে পাবেন বিশ্বাসের সবুজ সংকেত।
নিঃস্বার্থভাবে বিপদে যে বিশ্বস্ততা নিয়ে পাশে থাকে, সেই প্রকৃত বন্ধু। হোক সে ছেলে, হোক মেয়ে। আরও সহজ করে বলতে গেলে বলা যায়_ বিশ্বস্ততাই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুর রূপ। এখানে ছেলে আর মেয়েকে তফাৎ করে দেখার কিছু নেই। তবুও হয়তো প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা বোঝার সুবিধার্থে অনেকে এর নানা রূপ দেয়। কিন্তু এটা যেন কখনও মানদণ্ডের কাতারে না পড়ে। তা ছাড়া ভালো এবং বিশ্বস্ত বন্ধু থাকলে আয়নার প্রয়োজন হয় না। বন্ধুর বিশ্বস্ত মুখই আয়না হয়ে ধরা দেয়। হ