আজ আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারও জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এ দিবসটি । ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে ২০০৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করে আসছে।
এ দিবসটি উপলক্ষে গতকাল রবিবার (১৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় নারীনেত্রীরা বলেন, নারীরা পারিবারিক ছাড়াও কৃষি, মৎস্য,বনায়ন,গবাদিপশু পালনসহ নানা ধরনের শ্রমে অবৈতনিকভাবে জড়িত। এসব অদৃশ্য শ্রমের আর্থিক মূল্য না থাকায় তাদের সারাক্ষণ পরিবার ও সমাজে অবমূল্যায়িত হতে হচ্ছে।
পাশাপাশি পারিবারিক আয় কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর মতামতের বিষয়টি থাকছে উপেক্ষিত ও অবহেলিত। তাই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নারীদের কাজের মূল্যায়ন ও আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে।
এদিকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের ৪০টির বেশি জেলায় উদযাপন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। প্রতি বছরের মতো এবারো সারা দেশে শোভাযাত্রা, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজনসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে।
তারা আরও জানান, বাংলাদেশে ২০০০ সাল থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নে গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করে আসছে। তবে ইকুইটিবিডি আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সচিবালয় হিসেবে কাজ করছে।
জাতীয় কমিটির সচিবালয় সমন্বয়কারী ফেরদৌস আরা রুমীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন কমিটির সভাপ্রধান শামীমা আক্তার। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটি সদস্য নাহিদ সুলতানা, গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না, ডিজাবল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা আহমেদ, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সহসভাপতি রেহানা বেগম, সচেতন সমাজ সেবা হিজড়া সংঘের সভানেত্রী ইভান আহমেদ প্রমুখ।
মূল বক্তব্যে শামীমা আক্তার বলেন, গৃহস্থালিতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি কাজ করেন। কিন্তু তাদের এ কাজের কোনো স্বীকৃতি নেই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ৩৪৫ ধারা অনুযায়ী, নারী-পুরুষের সমকাজে সমান মজুরি প্রদানের কথা থাকলেও, বৃক্ষ রোপণ ও ফসল প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে পুরুষদের দৈনিক মজুরি যেখানে ৩০০-৬০০ টাকা, নারীরা সেখানে পায় মাত্র ৩৫০ টাকার মতো। কাজেই আপাতদৃষ্টিতে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পেছনে নারীর ক্ষমতায়নের কথা মনে হলেও এর মূল নেপথ্যে রয়েছে স্বল্প মজুরি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করানোর সুবিধা। তাই এ বৈষম্যের অবসান করতে হবে।
ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, নারীরা গৃহস্থালিসহ অন্যান্য যেমন কৃষি, মত্স্য, গবাদিপশু লালন-পালনের মতো নানা ধরনের কাজে জড়িত। কিন্তু এসব অদৃশ্য শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য না থাকায় পরিবারে তাদের মতপ্রকাশ বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অধিকার নেই। সেজন্য প্রয়োজন নারীর অদৃশ্য শ্রমের আইনি স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন। যা তাকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে নেবে।
পরে জাতীয় কমিটি সদস্য নাহিদ সুলতানা বলেন, নারীরা এখন কৃষি খাতে ব্যাপক অবদান রাখার পরও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে কৃষকদের জন্য গৃহীত সরকারি উদ্যোগের কোনো সুফলই তারা পান না। এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হলে কৃষিতে নারীর অবদান আরো কয়েক গুণ বাড়বে।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর গৃহশ্রমের পাশাপাশি অবৈতনিক শ্রমকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ স্বীকৃতি তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে।