Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সম্পাদকরা রাজপথে এ দায় কার?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৯ PM
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৯ PM

bdmorning Image Preview


গণমাধ্যমকে দেশের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ একটি দেশের গণতন্ত্র, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ কেমন চলছে তার আয়না হচ্ছে গণমাধ্যম। কিন্তু এই গণমাধ্যমের হাত-পা যখন ভেঙে দেয়া হয়, চোখ দুটি ফুটো করে দেয়া হয়। গলা যখন চেপে ধরা হয় তখন দেশের সার্বিক চিত্র সামনে আসে না। ফলে রাষ্ট্রটি ধীরে ধীরে তার প্রকৃত কাজ ছেড়ে গুরুত্বহীন কাজে জড়িয়ে পড়ে। দেশের জনগণ সকল ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

এই গণমাধ্যমগুলোর কর্ণধার হচ্ছেন সম্পাদক মণ্ডলী। তারা যখন নিজেদের কাজ ফেলে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে আত্ম-নিয়োগ করেন তখন সেই সকল সম্পাদকের আর কোন দাম থাকে না। কেউ তাদের পাত্তা দিতে চায় না। সত্যি কথা বলতে কি কেউ পাত্তাও দেয় না। বাংলাদেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা সব সময়ই সকল স্থানে গুরুত্ব পাচ্ছেন। তাদেরকে সম্মান করা হয়। তাদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যায়। তাদের সাক্ষাৎ পাওয়া হাতে চাঁদ পাওয়ার মতই সৌভাগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

তবে কেন হেলায়-ফেলায় এই সম্মান-মর্যাদাকে ধূলায় মেশানো হচ্ছে? 'ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন' নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদক মণ্ডলীরা ১৫ অক্টোবর মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ইতিপূর্বেও ২৯ সেপ্টেম্বর তারা মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছিল। সেখানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ে নিজে উপস্থিত থেকে ডাক ও টেলি যোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে সম্পাদকদ মণ্ডলী ও সাংবাদিক নেতাদের বৈঠক করেন। সেদিন বিকাল ৩টার বৈঠকে সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮,২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩সহ ৯টি ধারা সংশোধনের আহ্বান জানান।

বৈঠকে উপস্থিত ৩ জন মন্ত্রী নেতৃবৃন্দকে আশ্বাস দেন যে এটি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনা করবেন যথাবিহিত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু এরি মধ্যে ৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিলটিতে স্বাক্ষর করেছেন ফলে তা আইনে পরিণত হয়েছে।

গত ২৯ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া অনুমোদন করেছিল মন্ত্রিসভা। ৯ এপ্রিল বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠায় জাতীয় সংসদ। সাংবাদিকদের তিনটি সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিলটি নিয়ে দুই দফা বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইনে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যে ধারাগুলো নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল, তার কয়েকটিতে কিছু জায়গায় ব্যাখ্যা স্পষ্ট করা, সাজার মেয়াদ কমানো এবং শব্দ ও ভাষাগত কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোললে ২৬ সেপ্টেম্বর সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হয়। এখন এটি আইনে পরিণত হয়েছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সম্পাদক পরিষদ 'কেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করছি' শিরোনামে একটি ব্যাখ্যা প্রতিবেদন গণমাধ্যমগুলোতে পাঠালে দেশের সবগুলো গণমাধ্যম ২৯ সেপ্টেম্বর একযুগে লেখাটি প্রকাশ করে। এমন একজোট আগে কখনো হয়েছে কিনা জানি না তবে সকলের অংশগ্রহণটি ভালো লেগেছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে সম্পাদক মণ্ডলীর উদ্বেগকে রাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর না দেওয়ার কারণ নিশ্চয়ই রাষ্ট্র নয় বরং সম্পাদক মণ্ডলী নিজেই।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করছি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকার গুরুত্ব রয়েছে। গণমাধ্যম সঠিক সংবাদটি তুলে ধরবে এটিই সকলের আশা। তবে যখন প্রধানমন্ত্রী কোন দেশ সফর করে এসে গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন সেখানে সম্পাদকদের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। এমন সম্পাদক আছেন তাদের প্রশ্ন শুনলে হাসির উদ্রেক হয়। গুরুত্বহীন প্রশ্ন বা অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন তারা করে বসেন। এসব সাংবাদিক সম্মেলনে যাওয়া কোনভাবেই সম্পাদকদের শোভা পায় না।

দেশের কোন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা থাকলে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে সম্পাদক মণ্ডলীকে আমন্ত্রণ জানালে সেখানে তারা গিয়ে সেই সমস্যা সমাধানে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখতে পারেন। রাষ্ট্রকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অভিমত দিতে পারেন কিন্তু গণভবনে গিয়ে চা খেয়ে সময় নষ্ট করার সময় সম্পাদক মণ্ডলী কোথায় পান এটাই ভেবে পাই না! বৈদেশিক সম্পর্কযুক্ত থাকলে কূটনৈতিক সাংবাদিক এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলন হলে প্রধানমন্ত্রী বিটের সাংবাদিকরা সেগুলো কাভার করবেন। এখানে সম্পাদকদের গিয়ে কি কোন কল্যাণ আছে? তারা কি এসব সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে সম্পাদকীয় বা কোন কলাম লেখেন? না নিজের উপস্থিতি জানাতে সেখানে যান বোঝা মুশকিল।

একজন সম্পাদকে ১০ জন মন্ত্রীর ক্ষমতা নিয়ে চলা দরকার। আর সমাজ সেটাই মনে করে থাকে। তবে কেন তারা গণভবনে গিয়ে অযথা প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করেন? এতে করে তাদের কি ন্যুনতম সম্মান বাড়ে না কমে তা ভেবে দেখার প্রয়োজন এখন।
সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা সংশোধন করবে এই প্রত্যাশাই রইলাম।

Bootstrap Image Preview