গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় টানা দুই দিনে এক কিশোরী ও এক শিশু ধর্ষণ আতঙ্কের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে এলাকাবাসীর জন্য। ঘর থেকে একা বাহির হতে সাহস পাচ্ছেনা নারীরা। পৃথক দুটি মামলা হওয়ার পরও ঘটনার তিন-চার দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বিশ্বাসপাড়া এলাকাটি সন্ত্রাসীদের আতুর ঘর হিসেবে পরিচিত। উপজেলার বহিরাগত লোক এসে সরকারি বনের জমি দখল করে গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসীদের সাম্রাজ্য।
সন্ত্রাসীদের গড ফাদার মুচি জসিম সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর তার সহচরেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। এসব হয়ে উঠেছে তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
সন্ত্রাসীদের ভয়ে এলাকার সাধারণ জনগণ কথা বলতে সাহস পায়না। এমনকি অপরাধ সহ্য করে অনেকে আইনের সহায়তা নিতেও যায় না।
সোমবার (৮ অক্টোবর) সন্ধায় জোর পূর্বক ঘরে ঢুকে ১২ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে ওই এলাকার বেলু মিয়ার ছেলে এবং রাসেল (১৯)। এছাড়া তাকে সহযোগিতা করে আরিফ নামের ছেলে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজন।
জানা যায়, আরিফের সাথে শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার বেশ উঠাবসা রয়েছে। এ নিয়ে ওই কিশোরীর বাবা কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা (২১/৪৯২) করেন। ওসি ওই মামলার তদন্ত ভার দেয় এস আই কামাল হোসেনকে। কিন্তু প্রভাবশালী হওয়ায় ওই ব্যক্তিদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
তারপর দিন বিকাল তিনটার দিকে ওই একই এলাকা বিশ্বাসপাড়ায় পাঁচ বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয় জসিম (৩৫) নামে এক যুবকের দ্বারা।
জসিম বরিশালের মেদিগঞ্জ উপজেলার বাহাদুর গ্রামের সালামের ছেলে। সে মুচি জসিমের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল বলে দাবি করে এলাকাবাসী। বনের জমি দখল করে ঘর ও দোকান নির্মানের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
মুচি জসিমের মৃত্যুর পর নিজেই ওই এলাকায় মাদক ও জুয়ার অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে। মুদি দোকানের সাইনবোর্ড সাটিয়ে তার অন্তরালে করছে এসব অবৈধ ব্যবসা। এলাকাবাসী তার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়না।
জসিমের বিরুদ্ধে ওই শিশুর বাবা মামলা করেন এবং ওই মামলার তদন্তভার দেয় এস আই রাজা মিয়াকে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন জানায় জসিম তার বাহিনী নিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এছাড়াও উপজেলার সিনাবহ এলাকায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ওই এলাকার জুয়েল মাষ্টারের ছেলে উদ্যম (২৭) এর দ্বারা ধর্ষনের স্বীকার হয়।
এ ব্যপারে কালিয়াকৈর থানা পুলিশের এক এসআই তদন্ত করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেলেও থানায় কোন মামলা হয়নি।
পরে স্থানীয় মান্নান মেম্বার দালালী করে ঘরোয়া শালিশের মাধ্যমে ওই ঘটনার সমাধান করে দেয়।
বিশ্বাসপাড়ার সামগ্রিক পরিবেশ ও দুটি ধর্ষণের ঘটনা এলাকাবাসীর মনে আরও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে। কোন নারী একা বের হতে সাহস পাচ্ছেনা। প্রতিদিনের ছিন্তাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পরেছে।
এ ব্যপারে মনোয়ারা নামের এক জৈনক গারমেন্টস কর্মী বলেন, ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরতে রাত হয়। একা বাড়ি ফিরতে ভয় করে। বৃদ্ধ বাবাকে বলি এগিয়ে নিয়ে আসতে। তারপরও বখাটেরা রাস্তায় নানা কথা বলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক লোক বলেন, বিশ্বাসপাড়া, পলানপাড়া ও হাবিবপুর এসব এলাকায় বন জঙ্গল থাকায় ডিউটিরত পুলিশ বেশি ভিতরে যায় না। সে জন্য অপরাধ বেশি হয়। মাদক ব্যবসা তো শুরু হয় সন্ধের পর থেকেই।
ধর্ষণের ব্যপারে এস আই কামাল বলেন, ধর্ষনের মামলাটি তদন্তাধীন। আসামী পলাতক রয়েছে তবে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে।
শিশু ধর্ষনের ব্যপারে এস আই রাজা বলেন, আসামী ধরা সম্ভব হয়নি। পরে অন্য প্রশ্ন করার আগেই তরিঘড়ি করে বলেন সরাসরি আপনি থানায় আসেন আপনার সাথে চা খাই আর এ বিষয়ে কথা বলি। এটা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
পরে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন মুজুমদার বলেন, আসামী ধরার সর্বাত্বক চেষ্টা চলছে। আসামীরা পলাতক রয়েছে।
আর সিনাবহ এলাকায় বাদী পক্ষকে মামলা দিতে বলেছিলাম কিন্তু ওরা মামলা দেবেনা। এখন আমরা আর কি করতে পারি? জোর করে তো ধরে এনে মামলা করাতে পারিনা।
এ ব্যাপারে এসপি (সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম বলেন, আসামীদের গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। যেহেতু আসামী এখনো গ্রেফতার হয়নি বাদী পক্ষ এমনটি দাবী করতেই পারে। আগে কেমন ছিল জানি না, তবে শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে এমন অবস্থা এখন গাজীপুরে নাই।