শিক্ষিকাদের দিকে একনাগাড়ে ধেয়ে আসছে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে একদল নারী-পুরুষ। ওই দল থেকে এক যুবক চিৎকার করে বললেন, কাউকে ছাড়ব না। ধর ওদের, শাড়ি ধরে টান দে। তার পরেই এক নারী পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এক শিক্ষিকার ওপর। তার ব্লাউজের একাংশ গেল ছিঁড়ে। পাশের এক নারী বলতে থাকেন, শাড়ি ছিঁড়ে দে ...দের।মঙ্গলবার ভারতের ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের সামনে অভূতপূর্ব এই দৃশ্য দেখে হতবাক এলাকার বাসিন্দারাও।
রাস্তার মধ্যে কেউ ওই শিক্ষিকার কাপড় ধরে টান মারেন। কেউ আবার হাত ধরে টেনে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করতে থাকেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে এলোপাথাড়ি চড়থাপ্পড়। পরে দু’জন ছাত্রী এসে কোনো রকমে ওই শিক্ষিকা শ্যামলী চৌধুরীকে স্কুলের ভেতরে নিয়ে যায়। আতঙ্কে কাঁদতে থাকেন তিনি।
ওই স্কুলে প্রাক প্রাথমিকের এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই অভিভাবকদের একাংশের দাদাগিরির ঘটনা ঘটে। স্কুল থেকে কয়েক হাত দূরে শ্যামলী এবং ঢাকুরিয়া স্টেশনে রূপা ভট্টাচার্য নামে আরেক শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে অভিভাবকদের বিরুদ্ধে।
স্কুলের শিক্ষিকাদের অভিযোগ, গালিগালাজ করা থেকে পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া, এমনকি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন অভিভাবকরা। যদিও স্কুলশিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, বহু বহিরাগত ওই দলে ঢুকে পড়েছিল।
সকাল থেকেই দফায় দফায় স্কুলের সামনে ভিড় জমান অভিভাবকরা। প্রথম দিকে পুলিশকর্মীরা সংখ্যায় কম থাকায় অভিভাবকরা স্কুলের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। কম্পিউটার ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় স্কুলের বাইরে থাকা একটি মোটরবাইকও। পুলিশকে সরিয়ে দিয়ে স্কুলের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন অভিভাবকদের একাংশ।
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, এটা ভাবতেই পারছি না। অভিভাবকদের যদি এই মূল্যবোধ হয়, তা হলে সন্তানেরা কী শিখবে? দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুন্ডুর বক্তব্য, শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়। সমাজের যে কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যেই অসম্ভব আক্রোশ তৈরি হচ্ছে। তারই প্রকাশ ওই স্কুলে দেখা গেছে। এর মধ্যে লুক্কায়িত রয়েছে শ্রেণি-সংগ্রাম। এর বিনাশের রাস্তায় আমরা এখনো পৌঁছায়নি।