ঘরের মধ্যে রক্তমাখা ছুরি। পাশে পড়ে আছে নূপুর। দুই টুকরা মাংস ওএকটি জবাই করা রাজহাঁস। কিন্তু হদিস ছিল না নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তারের (১৫)। হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে বলে অভিযাগও জানিয়েছিল পরিবার। অবশেষে সেই মরিয়মকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পটুয়াখালীর কুয়াকাটার খানাবাদ কলেজ সংলগ্ন বাড়িতে ‘হত্যার পর মরদেহ গুমের নাটক’ সাজানোর ১৫ দিনের মাথায় ঢাকার মুগদা থেকে তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার রাতে মুগদা থানার মদিনা বাগের খালপাড় রোডস্থ রুনা ফ্যাশন নামের একটি গার্মেন্ট থেকে তাকে উদ্ধারের পর শনিবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন করেছেন পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মইনুল হাসান।
মহিপুর হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাতের খাবার খেয়ে মায়ের পাশে ঘুমায়। সকালে তার মা নুরজাহান বেগম মেয়েকে না দেখে খুঁজতে বের হতেই ঘরের মেঝেতে বিভিন্ন আলামত দেখতে পান। ঘরে রক্ত, পায়ের নূপুর, দুই টুকরা মাংস ও রক্তমাখা দুটি ছুরি পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়।
সবাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন মরিয়মকে হত্যার পর মরদেহ গুম করা হয়েছে। এ ঘটনার পরদিন মরিয়মের মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ ঘটনায় রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশের একাধিক টিম। সর্বশেষ মরিয়মকে উদ্ধারের মধ্য দিয়ে বের হয় এ ঘটনার আসল রহস্য।
এ ব্যাপারে প্রেস ব্রিফিংয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার বলেন, শুক্রবার রাতে ঢাকার মুগদা থানার মদিনা বাগের খালপাড় রোডস্থ রুনা ফ্যাশন গার্মেন্টে কর্মরত অবস্থায় মরিয়মকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
মইনুল হাসান আরও বলেন, ঘটনার রাতে একটি রাজহাঁস জবাই করে বুকের দুই টুকরা মাংস ও রক্ত ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এবং পায়ের নূপুর ও অন্যান্য আলামত ঘরের মেঝেতে রেখেই পালিয়ে যায় মরিয়ম। সবার অজান্তে ১৯ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে এমন পরিকল্পনা করে পালিয়ে যায় সে। সকালে কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজ সংলগ্ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আলীপুর হয়ে বাসযোগে প্রথমে কলাপাড়া পৌঁছায় মরিয়ম। ওইদিন সকাল ৮টায় কলাপাড়া থেকে ঈগল পরিবহনযোগে ঢাকায় গিয়ে নিজেই গার্মেন্টে কাজ খুঁজে নেয়।
উদ্ধার হওয়া মরিয়মকে আদালতে সোপর্দ করার কথা জানিয়ে পুলিশ সুপার মইনুল হাসান বলেন, মরিয়ম এতই ধূর্ত যে কারও সহায়তা ছাড়াই এমন চাঞ্চল্যকর এবং দুঃসাহসিক পরিকল্পনা একাই সম্পন্ন করে সবাইকে বোকা বানিয়েছে। তার উধাও হওয়ার নাটকে সবাই হতভম্ব।
তিনি আরও জানান, মরিয়মের পরিবার খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার আয়োজন করায় নিজেকে রক্ষা করতে এমন নাটক সাজায় মরিয়ম।