Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

সুন্দরবনের সুরক্ষা ও পর্যটক বৃদ্ধিতে সমন্বয় প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৩৩ PM
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪০ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: আবু সুফিয়ান


দেশের অন্যতম পর্যটন গন্তব্য হলেও পর্যটক বৃদ্ধি ও সুন্দরবন রক্ষায় কোন সমন্বয় নেই। সুন্দর বনের জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা, পর্যটনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে বন বিভাগের সঙ্গে ট্যুর অপারেটর, পর্যটন বোর্ড ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। একই সঙ্গে পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা, নিরাপত্তা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

আজ শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ট্যুরিজম ফেস্টের এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর উপদেষ্টা ও বেঙ্গল ট্যুরর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন বলেন, ২৫ শতাংশ মানুষ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। সামগ্রিক ভাবে আসা পর্যটকদের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষ সুন্দরবনে রাত্রী যাপন করেন। বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ দিনে এসে সুন্দরবন ঘুরে আবার ফিরে যান।

এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) সাধারণ সম্পাদক আনজিম আনোয়ার বলেন, পর্যটন বিকাশ ও সুরক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। যে কোন উদ্যোগে গণমাধ্যম সব সময় সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে নীতি নির্ধাকদের উচিত গণমাধ্যমকে সহায়তা করা।

প্যাসেফিক এশিয়া ট্রাভেল এসোসিয়েশনের (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, পর্যটক বিকাশ সরকারি বেসরকারি সকল উদ্যোক্তাদের সমন্বয় প্রয়োজন। সমন্বয় না থাকলে কোন উদ্যোগ এককভাবে সফল হবে না।

পুগমার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি শুধু সুন্দরবন নিয়েই কাজ করি। সুন্দরবনে পর্যটক শুধু আমাদের নয়, বন বিভাগেরও আয়ের উৎস। পর্যটক আগমনের ফলে আয় বাড়লে সুন্দরবনে মাছ, মধু, গাছ কাটার অনুমতি দিয়ে আয় বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। সুন্দরবনে পর্যটকদের আগমন তিন মাস বন্ধ করা হলে স্থানীয় কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বেঙ্গল ট্যুরর্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ হোসেন বলেন, পর্যটকদের ৭০ শতাংশই তরুণ। তারাই সুন্দরবনের ভেতরে গিয়ে ঘুরে আসেন, রাত্রী যাপন করেন। এই তরুণরাই সুন্দরবনের জন্য ঝুঁকির্পূণ। কারণ এ বয়সীরা সহজে নিয়ম মানতে চান না। সুন্দরবনের সুরক্ষার জন্য পর্যটকদের সচেতন করা জরুরি। সুন্দরবন এলাকায় অনেক মৌসুমি ট্যুর অপারেটর রয়েছে, যারা সুন্দরবন নিয়ে ভাবেন না, উপার্জন তাদের মূল উদ্দেশ্য। এসব ট্যুর অপারেটরদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

বন বিভাগের সমালোচনা করে মাসুদ হোসেন বলেন,সুন্দরবনের জন্য শুধু পর্যটকরা দায়ী নয়।‍ সুন্দরবনের সুরক্ষার দায়িত্ব বন বিভাগের, কিন্তু তাদের জনবলের সংকট রয়েছে। সুন্দরবনে গাছ কেটে, মাটি ভরাট করে র‌্যাব, কোস্ট গার্ডের আউট পোস্ট বানানো হয়েছে, বন বিভাগ এসব বন্ধ করতে পারেনি। সুন্দরবনের ভেতরে মালবাহী জাহাজ যায়, নদী ভরাট হয় এসবও বন্ধ হয়নি।

ট্যুরিস্ট গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুল ইসলাম বুলু বলেন, বনবিভাগ সুন্দরবনের পর্যযটন নিয়ে নীতিমালা করছে। অথচ এই নীতিমালা প্রণয়ণের সঙ্গে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। প্রজনন মৌসুম বলে তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটক আগমন বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অথচ বন বিভাগের কাছে প্রাণীর কোন সময়ে প্রজনন মৌসুম সেই তথ্য নেই। সুন্দরবন সুরক্ষা ও পর্যটন দ’টো বিষয়ের জন্যই সমন্বয় প্রয়োজন।

বন অধিদফতরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, সচেতনার অভাব একটি বড় সমস্যা। সবাই সচেতন থাকলে সুন্দরবন সুরক্ষা সহজ হতো। সরকারি-বেসরকারি সকল সংস্থার কাজের মধ্য সমন্বয়হীনতা কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা নিয়ে আগাই, কিন্তু পরিল্পনাগুলো শেষ পর্যন্ত পর্যটন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে গিয়ে কাটছাট হয়ে যায়। তাই আলোচনার মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়কেও যুক্ত করতে হবে। তাদেরও উপলব্ধি করতে হবে সমস্যা সমাধানে কি প্রয়োজন। সমস্যা সমাধান এতো সহজ নয়, তবে আমরা সমাধানের পথে এগুতে পারি।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ট্যুরজমের জন্য আমরা মাস্টার প্ল্যান প্রনয়ণের উদ্যোগ নিচ্ছি। সকল সংস্থা, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করেই এই মাস্টার প্লান করা হবে। আমাদের পর্যটক যেমন দরকার তেমনি সুন্দরবন সুরক্ষাও প্রয়োজন। ট্যুর অপারেটরা পর্যটকদের সচেতন করলে কাজটি সহজ হয়। তারা যদি নজর রাখে তবে সুন্দরবনে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা সম্ভব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, পাটা বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কোষাধক্ষ্য সৈয়দ জি. কাদির , টোয়াবের পরিচালক মো. তসলিম আমিন শোভন, এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (এটিজেএফবি) সভাপতি নাদিরা কিরণ প্রমুখ।

Bootstrap Image Preview