সৌন্দর্য,নির্মল পরিবেশ এবং প্রাণভরা বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণের জন্য সুপরিচিত স্থান ধানমন্ডি লেক। ইট-কাঠের দেয়ালে আবদ্ধ শহুরে মানুষগুলো লেকে আসে কিছুটা প্রশান্তি পাওয়ার জন্য। নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি হাটাচলার জন্য এখানে আসে প্রায় সব বয়সী মানুষ। কিন্তু দিন দিন লেক ব্যবস্থাপণার খামখেয়ালিতে এবং মানুষের অসচেতনতার কারণে দূষতি হয়ে পড়ছে লেক এলাকার পরিবেশ।
আজ সোমবার দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে ধানমন্ডি লেকের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, পুরো লেকের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট বড় ময়লার স্তুপ।
লেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের অসচেতনতার কারণেও দিন দিন অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে লেকের নির্মল সৌন্দর্য। প্রায় প্রতিদিনই লেকে বেড়াতে আসেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাদের হাতে আছে চিপস, পানি, বাদাম ও কোমল পানীয়র বোতল। যা তারা খাওয়া শেষে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে যত্রতত্র ফেলছেন। এতে করে অপরিষ্কার হয়ে পড়ছে আশেপাশের পরিবেশ।
এ বিষয়ে লেকের দায়িত্বরত গার্ড মরিয়ম বিডিমর্নিংকে বলেন, আমরা সাধারণত প্রতিদিন লেক পরিষ্কারের কাজ করে থাকি। কিন্তু ঈদের পর অনেক পরিছন্নকর্মী বাসায় গিয়ে আর ফিরেনি। যার ফলে লোকসংখ্যা কিছুটা কম। আর নতুন পরিচ্চছন্নকর্মীও আমরা পাচ্ছি না। এজন্য কয়েক জায়গায় ময়লার স্তুপ জমে আছে।
লেকে বসে চা ও চিপস খাচ্ছিলেন অনন্যা ও সাজ্জাত। কিছুক্ষন পর খাওয়া শেষ হলে চিপসের প্যাকেট ও চায়ের ওয়ানটাইম কাপ ফেলে দিলেন উন্মুক্ত পরিবেশে। কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই অপ্রস্তুতভাবে উত্তর দিলেন, 'এখানে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট স্থান থাকলেও উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলা উচিত হয়নি।'
তারা বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল করা থেকে ভিরত থাকবেন এবং অন্যকেও এ ধরনের ভুল করতে দেখলে সচেতন করবেন।
এ বিষয়ে লেকে হাটতে আসা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা রাকায়েত উল্লাহ বিডিমর্নিংকে বলেন, আমরা নিজেরাই সচেতন না। কর্তৃপক্ষের উপর শুধু দোষ চাপিয়ে লাভ হবে না। লেকের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে হলে আগে আমাদের সচেতন হতে হবে।
এ বিষয়ে শাম্মী সুলতানা নামের এক দর্শনার্থী বিডিমর্নিংকে বলেন, 'দায়িত্বরত পরিচ্ছন্নকর্মীদের দায়িত্বে অবেহেলার জন্যই লেকের এই অবস্থা। পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে লেকের চারপাশে ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকতো না।'
তিনি বলেন, পরিচ্ছন্নকর্মীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই এখানে। এটা আমাদের লেক। সুতারাং লেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও আমাদের।'
এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের বিডিমর্নিংকে বলেন, জণস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আমাদের লেকের আশেপাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে ভিরত থাকা উচিত। কেননা এই লেকে অনেক সময় মাছ চাষ করা হয়। আর পরবর্তী সময়ে এই মাছ বিক্রিও করা হয়।
সুতারাং লেকের পানি দূষিত হলে এর মাছও দূষনের শিকার হয়। আর যারা এই মাছ খায় তাদের মধ্যে বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব হয়।
তিনি আরও বলেন, পার্কে বা লেকে মানুষ সাধারণত আসে নির্মল বাতাস গ্রহণের জন্য। কিন্তু এখানকার পরিবেশ যদি নোংরা করে রাখা হয় তাহলে পার্ক বা লেকে আসা দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।