Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

নগরের সবুজহীনতা নামক অসুখের অন্যতম ওষুধ 'বনসাই'

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:১২ PM
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:১২ PM

bdmorning Image Preview
ছবিঃ বিডিমর্নিং


ইটপাথরের দালানের ভিড়ে কিছুটা সবুজ বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই কিছু শিল্পীমহল উদ্যোগ নিয়েছেন বনসাইকে মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার। ছোট্ট পরিসরে বারান্দায় কিংবা কখনো আবার ঘরের মধ্যেও কিভাবে গাছ লাগিয়ে সবুজের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা যায় এটাই তাদের মূল কাজ। সেই স্বপ্ন পূরণের আশা থেকেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি। একটি বিশাল বৃক্ষের সকল স্বকীয়তা বজায় রেখে ছোট পটে ছোট করে রেখে এই যে জীবন্ত শিল্প সৃষ্টি- এ এক অপার বিস্ময়। একইসাথে নগরের সবুজহীনতা নামক অভিশাপের  অন্যতম ওষুধ। 

সজীব-সতেজ-সবুজ বনসাই শহরের মানুষের কাছে তুলে ধরা’ কে মূল লক্ষ্য হিসবে গুরত্ব দিয়ে বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির নিয়মিত বাৎসরিক আয়োজনের একটি আয়োজন ‘২০তম বার্ষিক বনসাই প্রদর্শনী-২০১৮’। যা ধানমন্ডিতে অবস্থিত ওমেন ভোলান্টিয়ারি এসোসিয়েশনের অডিটোরিয়ামে গত তিনদিন ব্যাপী চলছে। আজ তার সর্বশেষ দিন।

তার আগে গত বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এশিয়াটিক এমসিএল এর কর্ণাধার, বিশিষ্ট অভিনেতা, পরিচালক ও লেখক আলী যাকের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

তাছাড়া গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিযুক্ত জাপান দূতাবাসের সাংস্কৃতিক বিভাগের প্রধান মিস মাচিকো ইয়ামামুরা। আর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রশিল্পী ও লেখক আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটির সভাপতি নাজমা শফিক।

নাজমা শফিক বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘নগরগুলো তার সবুজতা হারিয়ে ফেলেছে। বনায়ন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংকটময় অবস্থায় আছি আমরা। তার মূল কারণ লোকসংখ্যা এবং জায়গার অভাব। আর এই জায়গার অভাব মিটাতেই এই বনসাই প্রকল্প। যেহেতু আপনি শহরে বাসার সামনে বিশাল একটা উঠান পাচ্ছেন না কিংবা পর্যাপ্ত জায়গা নেই, সেক্ষেত্রে আপনি ছোট্ট পরিসরে গাছ লাগাতে পারছেন। এতে করে সবুজের ছোয়া যেমন পাচ্ছেন তেমনি অনেক প্রজাতির গাছ হারায় যাওয়া থেকে বেঁচে যেতে পারে।‘

বনসাই প্রকল্পটাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়া কিংবা এর গুরত্ব সম্পর্কে সকল স্তরের মানুষকে জানানোর ক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় কিংবা সেক্ষেত্রে কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমা শফিক আরও বলেন, ‘সবার আগে প্রতিবন্ধকতার কথাটা বলি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণের অর্থের প্রয়োজন। আমরা যেহেতু একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেক্ষেত্রে আমাদের এই সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় নিজস্ব উদ্যোগে। আমরা যদি সরকারীভাবে কোনো সহযোগিতা পেতাম সেক্ষেত্রে আরো বিস্তৃতভাবে বনসাই প্রকল্পটি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হতো।‘

‘বনসাই আবার কি? এমন প্রশ্নও মাঝেমধ্যেই শুনতে হয়।‘ নিজের গড়া বনসাই গাছের পাশে দাঁড়িয়ে এভাবেই হতাশার কথা জানান তিনি।

'আমাদের শহরটা আর গাছের জন্য নয়। অসংখ্য বাক্স-বন্দি মানুষের ভবন আর দুষিত পরিবেশের প্রদর্শনীর শহর এটা। এই প্রতিকূল পরিবেশে আমরা আমরা কিছু মানুষ শহরে চাষ করার উপযোগী কিছু গাছ নিয়ে বনসাই চর্চা করছি।' বলে জানান বিবিএস এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিসুল হক। 

দশ আঙ্গুলের পরিচর্যায় ছোট ছোট চারাগুলোকে বৃক্ষে রুপান্তর করা অনেকটা সন্তান লালনের মতোই। তাই নিজেদের গড়া গাছ নিয়ে প্রশ্ন করলে আবেগে গল্পের ছলেই উত্তর দেন বনসাই শিল্পীরা। 

পাহড়ি ঝর্ণা থেকে আনা পাথরের উপর কিভাবে ধাপে ধাপে গাছগুলোকে বসিয়েছেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যান আনিসুল হক। সেই বর্ণনায় যে রুপ তা প্রকৃতিকেও হার মানায়।  

প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে শতাধিক বনসাই। মাত্র দেড় হাজার থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের বনসাইও আনা হয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পাওয়া বনসাইয়ের মধ্যে রয়েছে- বট, চায়না বট, কামিনী, চেরি, পাকুর, অশ্বত্থ, তেঁতুল, হিজল, করমচা, শেওড়া, ফাইকাস, ফুকেনটি, জুনিপার, সাফেলারা, ঝাউ, পাতাবাহার, কাটা মেহেদী, তমাল, ছিটকি, সাফেলরাসহ দেশি-বিদেশি নানা বৃক্ষ।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বনসাই এর প্রচার এবং প্রসারের জন্য ১৯৯৯ সালে কয়েকজন শিল্পী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি (বিবিএস)। বিবিএস নিয়মিত বনসাই প্রদর্শনী আয়োজনের পাশাপাশি বনসাই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং কর্মশালা আয়োজন করে থাকে।

উল্লেখ্য, ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ২০০০ বৎসর পূর্বে চীনে শুরু হয় এ বনসাই চর্চা। এর পর ধাপে ধাপে তা চীনের অন্যান্য অঞ্চল, জাপান, কোরিয়া ও ভিয়েতনামে বিস্তৃতি লাভ করে। দিনে দিনে তা নিয়েছে শিল্পের রূপ। এ শিল্প এখন শুধু চীন বা জাপানের নয়, আমাদেরও। দেশীয় নানা ধরনের বৃক্ষের বনসাই সৃষ্টির মধ্যদিয়ে এটি আমাদেরও নিজস্ব শিল্পের রূপ নিয়েছে। ছড়িয়ে গেছে শহর থেকে শহরে।

Bootstrap Image Preview