Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিপ্রা হত্যা মামলার নেই কোন অগ্রগতি, প্রধান আসামি ধরা ছোঁয়ার বাইরে

অমর ডি কস্তা, নাটোর প্রতিনিধিঃ 
প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:২২ AM
আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:৩৭ AM

bdmorning Image Preview


নাটোরের বড়াইগ্রামের গৃহবধূ শিপ্রা কস্তার ওপর বর্বর নির্যাতন, নগ্ন ছবি তুলে শ্লীলতাহানী ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার দীর্ঘ দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও মামলায় তেমন কোন অগ্রগতি নেই। মূল আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। 

এদিকে মামলার এজাহারে শিপ্রা ধর্ষণ হয়েছিলো বলে উল্লেখ না থাকলেও স্থানীয়রা খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর অনেকেই বলছেন ওই রাতে তিন বখাটে কর্তৃক শিপ্রা গণধর্ষণেরও শিকার হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে ও দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিপ্রা তা প্রকাশ করেনি।

তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সেখানে এবং মামলার তদন্তে ধর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট হয় নি।

উপজেলার জোনাইল সরাবাড়িয়া গ্রামের ডমিনিক রোজারিওর স্ত্রী দুই সন্তানের জননী শিপ্রা কস্তা (৩০) তার উপর বর্বরোচিত নির্যাতন সইতে না পেরে গত ৭ আগস্ট গলায় দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।

এর ২১ দিন আগে ১৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে স্থানীয় তিন বখাটে একই এলাকার রমজান ফকিরের ছেলে আলম ফকির (২৮), মান্নান আলীর ছেলে সবুজ সরকার (৩৩) ও আনার কুলির ছেলে আবু হানিফ (৩৫) গৃহবধূ শিপ্রার বাড়িতে প্রবেশ করে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে তাকে নগ্ন করে ছবি তুলে ও শ্লীলতাহানী করে। তবে ওই রাতে শিপ্রা ওই তিন বখাটে দ্বারা গণধর্ষণেরও শিকার হয়েছিল বলে জানা গেছে।

এ ঘটনা ফাঁস হলে দুই সন্তানকে হত্যা করা হবে, স্বামীর সংসার আর কখনও করা হবে না এমন হুমকি ও ভয়ের শিপ্রা ধর্ষণের কথা কাউকে জানায় নি। কিন্তু তারপরেও শিপ্রা ওই তিন বখাটের বিরুদ্ধে শুধু ধর্ষণের কথা উহ্য রেখে শারিরীক নির্যাতন, নগ্ন করে ছবি তোলা ও শ্লীলতাহানী করা হয়েছে মর্মে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।

তবে বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক স্থানীয়ভাবে মিমাংশা করা হবে বলে তা ঝুলিয়ে রাখে। এ দিকে থানায় অভিযোগ দায়ের করায় বখাটেরা শিপ্রাকে পুনরায় হুমকি দিতে শুরু করলে অবশেষে শিপ্রা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

এঘটনার পর স্থানীয় খ্রিস্টান এসোসিয়েশন, যৌন হয়রানি নির্মূল নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন সংগঠন অভিযুক্ত তিন বখাটেকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

শিপ্রার মা শান্তি পালমা জানান, গ্রামের অনেকেই তাকে জানিয়েছে শিপ্রাকে ওই তিন বখাটে ধর্ষণও করেছে।  কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিপ্রা তাকে ধর্ষণের কথা জানায়নি। তবে ঘটনার পর ৬/৭ দিন শিপ্রা মারাত্মকভাবে অসুস্থ ছিল।

শিপ্রার বাবা কুটি পিটার কস্তা জানান, মামলায় প্রধান আসামি আলম ফকির, ২ নং আসামি সবুজ সরকার ও ৩ নং আসামী হিসেবে আবু হানিফের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের এজাহার কপিতে ২ নং আসামী সবুজকে ৪ নং আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং কোন অভিযোগ না দেওয়া সত্বেও শিপ্রার কথিত প্রেমিক স্থানীয় দোকানদার শাহ আলমকে ওই এজাহারে তিন নং আসামি দেখানো হয়েছে। 

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলিপ কুমার দাস জানান, ইতোমধ্যে হানিফ ও সবুজকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রধান আসামি আলম ফকিরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, আলম ফকির গ্রেফতার হওয়ার পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে করলে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানা যাবে। প্রয়োজনে আটককৃত অন্য দুই আসামিকে আবারও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 

Bootstrap Image Preview