Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফুটপাতে খাবার বিক্রেতা এখন সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রপতি

নারী ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৬ AM
আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৯:০২ AM

bdmorning Image Preview


'জন্মসূত্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও বাবা মুসলিম আর মা মালয়। ১৯৫৪ সালে জন্ম নেয়া তার বয়স যখন আট তখন তার বাবা মারা যায়। বাবার মৃত্যুর পর অসহায় মায়ের সাথে ফুটপাথে খাবার বিক্রি করতেন তিনি। সেইসাথে পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন পড়াশোনাটাও। রোজ স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তার দায়িত্ব ছিলো দোকান পরিষ্কার করার, বাসনপত্র ধুয়ে দেয়ার এবং টেবিল পরিষ্কার করা। তাছাড়া ক্রেতাদের মধ্যে  খাবার পরিবেশন ছাড়াও আরো অনেক কাজে মা'কে সহযোগীতা করা।'

বলছিলাম সিঙ্গাপুরের বর্তমান রাষ্ট্রপতি হালিমা ইয়াকুবের কথা। পুরো নাম হালিমা বিনতে ইয়াকুব। 

পরিবারের পাঁচ ভাইবোনসহ দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে একসময় পড়াশোনা শেষও করেন। এরপর শুরু করেন আইনজীবী হিসেবে তার শখের আর স্বপ্নের পেশা।

এসব কিছুই হয়তো আমাদের চারপাশের অহরহ ঘটনার একটা। কতজনকেই আমরা এরচেয়েও খারাপভাবে জীবন যাপন করতে দেখে থাকি, কঠোর পরিশ্রম করে জীবনে উন্নতি করতে দেখি। কিন্তু অন্য সবার চেয়ে ব্যতিক্রম হালিমা। 

ভারতীয় মুসলমান বাবা এবং মালয়েশিয়ান মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া কন্যা সন্তান হালিমা ইয়াকুব। আর মুসলিমরা যেহেতু বাবা বা পিতার বংশের হিসেবে বংশ পরম্পরা বিবেচনা করে সেহেতু হালিমা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী। কুইন স্ট্রিটে ১৯৫৪ সালের ২৩ আগস্ট তার জন্ম। পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ হালিমা। তার বাবা ইয়াকুব ছিলেন একজন পাহারাদার এবং বহু বছর ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন।  ১৯৬২ সালে তার বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর সংসার সামলাতে তার মাকে অমানবিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তার মা রাস্তার পাশের একটি খাবারের দোকানে কাজ করতো। প্রতিদিন সকাল ৪টায় যেতো আর বাড়ি ফিরতো রাত ১০টায়। হালিমা মায়ের সাথে সেই দোকানেই কাজ করতো। 

এভাবেই জীবনযুদ্ধে শক্ত মনোবল ধরে রেখে ১৯৭০ সালে তানজং ক্যানটং গার্লস স্কুল মাধ্যমিকের পড়াশোনা শেষ করেন। পরে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি সম্পন্ন করেন হালিমা। নানা কষ্ট এবং সমস্যা আর ভোগান্তিকে নিত্যসঙ্গী করে হালিমার এই সময়গুলো কেটেছে।

হালিমা তার এক বক্তৃতায় বলেছেন, ‘জীবনের এই মারাত্মক খারাপ সময়গুলোতে অনেকবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু যখন ভেবেছি যে আমি একজন মুসলিম তখন আবার ফিরে এসেছি সে সিদ্ধান্ত থেকে। আবার নতুন করে জীবন সাজাতে শুরু করেছি’।

১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসে (এনটিইউসি) একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুর হয় ক্ষমতাসীন দল পিপলস অ্যাকশন পার্টির কর্মী হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক টংয়ের অনুরোধে রাজনীতিতে আসেন হালিমা। এরপর ধারাবাহিকভাবে ৪টি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন তিনি। ২০১১ সালে সামাজিক উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের সংসদে প্রথম নারী স্পিকার নিযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন এবং পরিচিতি অর্জন করেন।

২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার জন্য স্পিকার পদ থেকে ইস্তফা দেন। প্রার্থী হওয়ার বিধান অনুসারে পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে হালিমার অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি সরাসরি বৈধ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন।রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের একমাত্র বৈধ প্রার্থী হওয়ায় তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন দেশটির প্রধান নির্বাচনী কর্মকর্তা।

মালয় সম্প্রদায় থেকে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হওয়া শেষ ব্যক্তি ছিলেন ইউসুফ ইসহাক। সিঙ্গাপুরের ব্যাংক নোটগুলোতে তার ছবি আছে। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

দীর্ঘদিন যাবত সিঙ্গাপুরে অবস্থানকারী এবং সিঙ্গাপুরের রাজনীতির সাথে বহুকাল ধরে জড়িত এই নারীকে নিয়ে কূটনৈতিকপাড়াসহ বিশ্বমোঘলদের টেবিল ছিলো আলোচনামূখর। প্রশ্ন একটাই- কে এই হিজাবি মুসলিম নারী হালিমা? কী তার নেপথ্য পরিচয়? এবং কীভাবেই বা আজকের এই অবস্থানে অধিষ্ঠিত তিনি?

প্রশ্নকারীরাসহ মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষ হালিমা ইয়াকুবের জীবনীতথ্য জানা প্রয়োজন। শিক্ষণীয় এবং উৎসাহ জাগানিয়া অনেক তথ্য রয়েছে তার জীবন ধারায়। সামান্য একটি দরিদ্র পরিবার থেকে একটি দেশের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে অধিষ্ঠিত হওয়ার নানা নেপথ্য কথন রয়েছে এই জীবনে। রয়েছে ঘাত-প্রতিঘাত আর সমস্যা সঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে চলা অটল অস্তিত্বের অধিকারীনী একজন নারীর পরিচয়।

কর্মময় জীবনের কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি স্বরুপ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন হালিমা ইয়াকুব। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো- ২০০১ সালে তিনি the Berita Harian/McDonald’s Achiever পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৩ সালে Her World Woman of the Year Award অর্জন করেন। এছাড়া ২০১১ সালে প্রাপ্ত হন The AWARE Heroine Award।

Bootstrap Image Preview