বন্ধুত্ব একটি শক্তিশালী বন্ধনের নাম। একজন বন্ধুই পারে আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে। বন্ধুত্বের প্রথম শর্ত বিশ্বাস। একজন মানুষকে ভালো বন্ধুর তালিকায় নিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই। বন্ধু বলতে বোঝায় সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হতাশ, ভালো লাগা, মন্দ লাগা যার সাথে ভাগাভাগি করা যায়। বন্ধুরা খুবই কাছের মানুষ। জীবনে বন্ধু না থাকলে জীবনটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যেকোন সমস্যা বন্ধুর সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায়। জীবনকে উপভোগ করার জন্য একজন সত্যিকারের বন্ধু প্রয়োজন। বন্ধুত্ব হচ্ছে স্বার্থহীন সামাজিক সম্পর্ক। যে সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি। বন্ধু মানে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আজীবন পথচলার সঙ্গী। সব ধরণের মানবিকতায় বন্ধুত্বের আন্তরিকতায় জীবনের চলার পথে অন্যতম সম্পদ বন্ধু।
ছোটবেলা থেকে কতজনের সাথেই না আমাদের বন্ধুত্ব হয়। আমরা যত বড় হতে থাকি তত আমাদের সম্পর্কগুলো একটা মানে পায়। শুধু একসাথে খেলাধূলা করা বা ঘুরে বেড়ানোই নয়, বন্ধুকে আমরা বলি আমাদের ভালো থাকার কথা, মনখারাপের কথা। আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে কত না স্মৃতি, কত গল্প। তবু কখনো কখনো এই কাছের বন্ধুরাই দূরের হয়ে যায়।
বন্ধু বলতেই হৃদয়ের মণি কোঠায় দক্ষিণের শীতল বাতাসের এক গুচ্ছ পরশ। বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধতা যেন ভালোবাসার সেরা উপমার উৎকৃষ্টতর নিদর্শন। বন্ধুত্বের বন্ধন নিয়ে আসে মরুভূমি সমতুল্য হৃদয়ের মাঝে সবুজ অরণ্যে ঘেরা এক মায়াবন্ধনে সিক্ত আলিঙ্গন। বন্ধুত্বের মাঝে সজীবতার সেরা নিদর্শনে শিক্ষা লাভ করছেন আমাদের অতীতের সেরা ব্যক্তিবর্গদের সিংহভাগ। সেরাদের সেরা যারা তারা সবাই বন্ধুময়। তাঁদের ছিলো সুন্দর সাবলিল বন্ধুময় এক প্রফুল্ল ভালোবাসাময় জীবন।
বন্ধু নির্বাচনে সচেতনতা হোক আজ সময়ের দাবি। একজন বন্ধু যা পারে তা আর কেউ পারে বলে মনে হচ্ছে না আদৌ এই যান্ত্রিক জগতে। এই জন্যই তো মার্গারেট ওয়াকার বন্ধুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, বন্ধুত্ব এবং ভালো ব্যবহার তোমাকে এমন এক জায়গাতে নিয়ে যাবে যেখানে কোন অর্থই তোমাকে নিতে পারবে না। বন্ধুত্ব এবং ভালো ব্যবহার দুটো যেন মুদ্রার এপিট আর ওপিট। এই দুটো জিনিস নির্বাচনে আপনি হতে পারেন সেরাদের সেরা উপমা বিশ্বময় জুড়ে।
বন্ধু নির্বাচনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে তার স্বভাবজাত কর্মকান্ডগুলোকে। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা) বলেছেন, নিরবোধের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি সাধিত হবে। মুর্খ এবং নির্বোধদের বোধদয় একটু কমই থাকে। তাদের দ্বারা সমাজের উচ্চমানের কাজ করা খুবই কষ্টকর হয়। ভালো-মন্দ নির্বাচনে তারা যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে বোকামীর পরিচয় প্রদানে করে থাকে। এই জন্যই বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি (র.) বন্ধু নির্বাচনে পাঁচটা গুণ আবশ্যক করেছেন। তা হলে- বুদ্ধিমত্তা, সৎ স্বভাবওয়ালা হওয়া, পাপাচারী, বেদআতী এবং দুনিয়াসক্ত না হওয়া।
বর্তমানে বন্ধুর সংশ্রবে বন্ধু যতটা পরিবর্তন হয়, পরিবার কেন্দ্রিক তার প্রভাব একেবারেই সামান্য। তাই তো আজ দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ সচেতনমহল তাদের সন্তানের বন্ধু নির্বাচন নিয়ে খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। আমাদের শহরাঞ্চলের পিতা- মাতা কিংবা কাছের আপনজনরা আজ কর্মব্যস্ততায় তাদের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করছেন। সন্তানকে একেবারেই সময় দিতে পারছেন না এই কর্ম ব্যস্ত মানুষগুলো। যে কারণে তারা হয়ে পড়ছে বন্ধুময় এক নব্য জীবন। বন্ধুত্ব নির্বাচনে যদি সামান্য গোলমাল হয়ে যায়, মনে রাখতে হবে জীবনের পরিবর্তনের জন্য এতটুকু গোলমালই যথেষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। তাই বন্ধু নির্বাচন হোক যাচাই-বাচাই এবং ইমাম গাজ্জালীর দেওয়া পাঁচ ফর্মুলায়।
আমাদের সকলের উচিত একজন সৎ-যোগ্য এবং বিশ্বাসী ভালোবাসাময় সঠিক বন্ধু নির্বাচন করা। যে বন্ধুর দ্বারা বন্ধু প্রভাবিত হবে এটাই স্বাভাবিক। কেননা কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘যদি থাকে বন্ধুর মন, গাং পার হইতে কতক্ষণ’। বর্তমানে বন্ধুহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া একেবারেই দষ্কর। শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধেরও দুই- তিন জন বন্ধু আছে বটেই। অতএব বন্ধুময় এই জীবনে বন্ধু নির্বাচনে সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার উদার্ত আহবান জানাচ্ছি।
লেখক : শিক্ষার্থী, অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ।