Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফাঁদে পরে ভারতের যৌনবাজারে আফ্রিকার মেয়েরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:২৩ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:২৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


আফ্রিকার দেশ থেকে ভারতে নারী পাচারের চক্র গড়ে ওঠেছে। কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আফ্রিকার নানা দেশ থেকে নারীদের ভারতে নিয়ে আসা হচ্ছে। কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে দিল্লিতে আসা নারীরা নিজেরা যখন এই চক্রের কাছে অর্থের জন্য আটকে পড়েন, তখন তারা হয়ে ওঠেন যৌনকর্মী। ধীরে ধীরে এক পর্যায়ে তারাও হয়ে ওঠেন ম্যাডাম, যারা অন্য নারীদের যৌনকর্মী হিসেবে কাজে লাগান।

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটি পোস্ট দেখেছিলেন গ্রেস নামের অফ্রিকার এক নারী। ভারতে কাজের সুযোগ সম্পর্কে লেখা ছিল সেই পোস্টে। তিনি বলেন, ‘আমার নাম গ্রেস। আমি একজন সঙ্গীত শিল্পী, নৃত্যশিল্পী এবং অভিনেত্রী। আমি একদিন অনেক নাম করবো। খুব সুন্দর একটা জীবন হবে আমার। একদিন শুনলাম যে ভালো অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে ভারতে। তো আমি সুযোগটা নিতে চাইলাম।’ কিন্তু দিল্লি এসে পৌঁছনোর পর গ্রেস বুঝতে পারলো যে একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে বন্দি হয়ে পরেছেন তিনি।

গ্রেস ভারতে এসে পৌঁছানোর পর তাকে একটি যৌন পল্লীতে নিয়ে যাওয়া হলো। গোল্ডি নামের একজন নারী সেখানে তার পাসপোর্ট কেড়ে নিল। এই নারী ভারতে আসার জন্য তার খরচ বহন করেছে। গ্রেসকে জানালো হলো তাকে ভারতে আনতে গোল্ডির খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার মার্কিন ডলার, ভারতে আসার প্লেন টিকিটের যে খরচ তার চেয়ে সাতগুণ বেশি। এখন গোল্ডিকে এই অর্থ পরিশোধ করার জন্য গ্রেসের সামনে একটাই পথ খোলা ছিল। তিনি জানান, পতিতাবৃত্তি আমার কাছে এমন একটা কাজ, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বলতাম, এটা যেন কাজ হিসেবে আমার সামনে পৃথিবীর শেষ বিকল্প হয়।

পাঁচ মাস ধরে গ্রেস আরো চারজন পাচারের শিকার নারীর সাথে একটা ছোট ঘরে থাকতে বাধ্য হন। বিবিসির এক প্রতিবেদনের জন্য গ্রেস শরীরে একটি লুকানো ক্যামেরা পরতে রাজি হয়েছিল। তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন দিল্লিতে আফ্রিকান এক চক্রের গোপন ঘাঁটিতে। ওই জায়গাটি ছিল এই নারী পাচার ও যৌন ব্যবসার কেন্দ্র। এখান থেকে পাচার করে নিয়ে আসা মেয়েদের খদ্দের নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হতো কিছু স্থানীয় অবৈধ বারে। যেখানে সাধারণত দিল্লিতে কর্মরত আফ্রিকান পুরুষরা যেতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, প্রথম দিন যেদিন সেখানে আমি গিয়েছিলাম, দেখলাম সেখানে অনেক, অনেকগুলো মেয়ে.....অনেক মেয়ে। আমাদের কাজ ছিল, একটা যায়গায় বসতে হবে, তারপর একজন পুরুষ এসে আমাকে পছন্দ করে নিয়ে যাবে।

দিল্লির দক্ষিণ অংশে 'দ্যা কিচেন' নামে পরিচিত এরকম অন্তত ১৫ টি অবৈধ বার খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে অসংখ্য আফ্রিকান নারীরা যৌন ব্যবসায় যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে দিল্লির এই যৌন ব্যবসার মূল হোতার দেখা মিলল। এডি নামে তার পরিচয়। খোঁজ পাওয়া যায়, গোপন এই আস্তানায় কেনিয়ার এক নারীকে পাচার করে এনে গ্রেসের অধীনে কাজ করতে দেওয়ার ব্যাপারে আলাপ হচ্ছিলো। আর তাতে আগ্রহ দেখানোর ভান করছিলো গ্রেস। কিভাবে কেনিয়া থেকে এই নারীকে আনা হবে, কার মাধ্যমে আনা হবে, তাতে কত টাকা লাগবে এসব নিয়ে আলাপ হচ্ছিলো। ধীরে ধীরে এভাবেই চলে এই চক্রের কর্মকাণ্ড। এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে দিল্লিতে আসা নারীরা নিজেরা যখন এই চক্রের কাছে অর্থের জন্য আটকে পড়েন, তখন তারা হয়ে ওঠেন যৌনকর্মী। ধীরে ধীরে একপর্যায়ে তারাও হয়ে ওঠেন ম্যাডাম, যারা অন্য নারীদের যৌনকর্মী হিসেবে কাজে লাগান।

তবে এডি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। অন্যদিকে গোল্ডি নামের সেই নারী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোন জবাবই দেননি।

Bootstrap Image Preview