Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরাজয় এড়াতে ‘অপারেশন চেঙ্গিস খান’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:১৪ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০১:১৪ PM

bdmorning Image Preview


১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত দিয়ে ভারতে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন চেঙ্গিস খান’। একটি ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধাভিযানের এমন নাম বেছে নেয়া অদ্ভুতই বটে।

১১৬২-১২২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন মুসলিম দেশে নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালান মোঙ্গল শাসক চেঙ্গিস খান।

‘অপারেশন চেঙ্গিস খান’ নামে এ অভিযানের শুরুতেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী (পিএএফ) একসঙ্গে পূর্ব পাঞ্জাব ও ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বেশকিছু বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ চালায়।

একই সময় স্থলেও অভিযান পরিচালনা করে। তবে তেমন কোনো লাভ হয়নি তাতে। মূলত ভারতে এ আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইয়াহিয়া খানের উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা।

এর বিপরীতে ভারতীয় সেনারা দ্রুত পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করে ঢাকার দিকে অগ্রসর হয়। ফলে উল্টো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। আত্মসমর্পণের পুরো অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয় ভারত ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলে

। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বন্দি করা হয় ৯৩ হাজার পাকিস্তানিকে, যার মধ্যে অনেক বেসামরিক লোকও ছিল। এর ফল হলো, পাকিস্তানের সম্পূর্ণ পরাজয় ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ।

এ শোচনীয় পরাজয়ের জন্য ইয়াহিয়া খান যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রতি মারাত্মক ক্ষুব্ধ হন। কারণ তার আশা ছিল, এ দুই দেশ তাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসবে। এ বিষয়ে ব্রায়ান ক্লাওলে অভিমত প্রকাশ করেন, ‘চীন কোনো পদক্ষেপ নিলে ভারতের মনোযোগ চলে যেত দেশটির উত্তর সীমান্তের দিকে, যা পাকিস্তানের জন্য খুবই সুবিধাজনক হতো।

 কিন্তু চীন কিছু না করে সীমান্তে নিষ্ক্রিয় বসে ছিল।’ (ক্লাওলে ২০০: ২৩৭)। অন্যদিকে নিক্সন বঙ্গোপসাগরে বিমানবাহী একটি রণতরী পাঠালেও কিসিঞ্জারের মতানুসারে সেটি ছিল মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর যাতে কোনো হামলা না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য।

এদিকে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন হিসেবে জাতিসংঘে দেশটির সদস্যপদ স্বীকৃত হয় ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর। দেশটির প্রতিনিধি জাতিসংঘে আসেন এবং নিরাপত্তা পরিষদে একটি সভায় অংশ নেন ওই বছরের ২৩ নভেম্বর। এটা সম্ভব হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের মধ্যে সমঝোতার সম্পর্ক স্থাপনের কারণে।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চীনের এ প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে আর কোনো আপত্তি তোলেনি। তাছাড়া কিসিঞ্জারও চীনের সহযোগিতা চাচ্ছিলেন, যাতে ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে পাল্টা আক্রমণে নিরুৎসাহিত হয়।

এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রক্রিয়া শুরুর পদক্ষেপ নেয়। এজন্য দেশটি ফের চীনের সহযোগিতা কামনা করে এবং তা লাভও করে।

এদিকে চীন প্রকাশ্যে পাকিস্তানের অখণ্ডতার প্রতি সমর্থন বজায় রাখলেও দেশটির কাছে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে পাকিস্তানের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মোটকথা, দুই পাকিস্তানের ভাঙন যেন তখন প্রধান সব পরাশক্তিই অবধারিত বলে মেনে নেয়।

পশ্চিম পাকিস্তানের পরাজয় দেশটির সেনাবাহিনীর অহমে মারাত্মক আঘাত করে, যা ঢাকতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিজেদের বীরত্বসূচক নানা কল্পকাহিনী ছড়াতে থাকে। প্রচার করা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দারুণ সব জয়ের গল্প। ঠিক যেমন প্রচারণা চালানো হয়েছিল দেশ দুটির মধ্যে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণের পর নিক্সনের পরামর্শ অনুযায়ী ইয়াহিয়া ও পাকিস্তানের হাইকমান্ড ইন্দিরা গান্ধীর প্রস্তাবিত একতরফা অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হতে আরো দুদিন সময় নেয়। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় তীব্র চাপ সৃষ্টি করছিল, যা পাকিস্তান সরকারকে অবিলম্বে সমাধান করতে হতো। এর একটি হলো, শোচনীয় পরাজয় নিয়ে পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অপমানবোধ ও বিরক্তি। তারা খারিয়ন ক্যান্টনমেন্টে অস্ত্র উঁচিয়ে কিছু একটা করার জন্য মুখিয়ে ছিল।

অন্য সব স্থানেও তাদের মধ্যে একই ঘৃণা ও ক্রোধ বিরাজ করছিল। এ পরিস্থিতিতে ইয়াহিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা, জেনারেল হামিদ রাওয়ালপিন্ডির আইয়ুব হলে ২০ ডিসেম্বর অফিসারদের সামনে বক্তব্য রাখেন। তিনি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সামলাতে সব ধরনের রাজনৈতিক চেষ্টা করেছে। কিন্তু উপস্থিত অফিসাররা তার এ বক্তব্যকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। আর হামিদ বাহ্যত হতাশ হয়ে আইয়ুব হল ত্যাগ করেন।

কিন্তু ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকির মতে, এর পুরোটাই ছিল হামিদের ছল। আসলে তিনি এখানে এসেছিলেন ইয়াহিয়া আর ক্ষমতায় টিকতে পারবেন কিনা, তা বোঝার জন্য। কারণ সবাই চলে যাওয়ার পর পরই রেডিও পাকিস্তান থেকে ঘোষণা দেয়া হলো ইয়াহিয়া খান পদত্যাগ করেছেন। এর পরই জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান জেনারেল গুল হাসান খান ও এয়ার মার্শাল রহিম খান।

Bootstrap Image Preview