বেশ কয়েক বছর হলো তিনি দুই চোখে দেখতে পান না। এ জন্য ঠিকমতো কাজও করতে পারেন না। সকালে বের হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বাড়িতে ফেরেন। অনেক দিন আছে রাতের খাবার জোগাড় হয়, আবার অনেক দিন হয় না। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কলমি শাক তুলতে আসা ৬০ বছরের সন্তোষ কুমার।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের প্রাচীর সংলঘ্ন একটি গর্তে শাক তোলার সময় তার সাথে কথা হয়। সন্তোষ কুমার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সানবান্ধা গ্রামের মৃত রামরুপ বিশ্বাসের পুত্র। বর্তমানে তার বসবাস কালীগঞ্জ শহরে নদীপাড়ায় অন্যের জায়গায়।
অন্ধ সন্তোষ লাঠি হাতে নিয়ে পানিতে নামেন। দুই চোখ অন্ধ হওয়ায় পানি থেকে হাতড়ে কলমিশাক তোলেন। এরপর সেগুলো বিক্রি হলে তার খাবার জুটে। প্রতিদিন এভাবে কলমি তুলে জীবন চলে এই সন্তোষ কুমারের।
সন্তোষ কুমার জানান, কলমি তুলে বিক্রি করবেন, আর এ থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা আয় হবে। এটা দিয়েই তার দুপুর ও রাতের খাবার হয়। সকালে শুধু বিস্কুট আর চা খেয়ে পার করেন। পরের দিন আবার একই নিয়মে তার আহার জুটবে। তার বক্তব্য কারো কাছে হাত পাততে পারেন না, তাই অন্ধ হয়েও কষ্ট করে হলেও কলমি তুলে বিক্রি বেঁচে আছেন।
তার ভাষ্য, এক সময় তার কাজ করার ক্ষমতা ছিল। অন্যের জমিতে কাজ করলেও সংসার ভালোই চলতো। এখন আর গ্রামে কিছুই নেই। ছেলের চিকিৎসায় ভিটাবাড়িও বিক্রি হয়ে গেছে। প্রথম স্ত্রী শেফালী বিশ্বাস অভাবের কারনে তাকে ছেড়ে চলে গেছে। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী কল্পনা বিশ^াসও একই কারনে তাকে ছেড়ে গেছে। তবে, স্ত্রী কল্পনা বিশ^াস কালীগঞ্জ শহরে একটি হোটেলে থালা-বাটি পরিষ্কারের কাজ করেন।
স্বামী সন্তোষ কুমারের দাবি তার কোনো খোজ তিনি রাখেন না। আর বড় ছেলে সঞ্জয় কুমার বিশ্বাসকে সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। ছোট ছেলে সুমন বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। ভীটাবাড়ি যা ছিল ছেলের চিকিৎসার সময় বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের একমাত্র মেয়ে শ্যামলী বিশ্বাসকে বিয়ে দিয়েছেন।
অন্য কোনো কাজ করতে না পেরে তিনি এই কলমি তুলে বিক্রি করার কাজ বেছে নিয়েছেন। নদীপাড়ার বাসা থেকে বের হয়ে লাঠির নিশানায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে নিমতলা বাসষ্টান্ড পেরিয়ে কলেজমোড় এলাকায় চলে যান। সেখানে বেশ কয়েকটি ডোবা রয়েছে। এই ডোবায় কলমি শাক পাওয়া যায়। তিনি সেগুলো হাতড়ে হাতড়ে উঠান। এরপর মাথায় নিয়ে লাঠির নিশানায় শহরে বিক্রি করেন। এভাবে কাটে তার প্রতিটি দিন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা লিয়াকত আলী খাঁন জানান, তিনি প্রায়ই দেখেন অন্ধ মানুষটি তাদের এলাকার ডোবাগুলোতে কলমি তুলছেন। পানির মধ্যে হাতড়াতে দেখে খারাপ লাগে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্না রাণী সাহা জানান, এ জাতীয় মানুষের জন্য সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচি রয়েছে। তিনি যোগাযোগ করলে এই কর্মসুচির মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোগিতা করা হবে।