Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

হেরোইন সেবনের টাকার জন্য সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:২৬ PM
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:২৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


হোরোইন সেবনের টাকা জোগাড় করতে ২ বছর ধরে সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি কর্মকতাদের ফোন করে প্রতিবেদন প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আদায় করেছেন দুই প্রতারক।

অবশেষে একটি দৈনিকের সিনিয়র এক্সিকিউটিব এবিএম সিদ্দিকের দায়ের করা এক মামলায় শিবলু (৩৮) এবং সোহাগ (৩৯) নামের ঐ দুই প্রতারক ধরা পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলিস্তান থেকে তাদের গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহাদাত হোসেন সুমার নেতৃত্বাধীন একটি দল।

জানা যায়, এই পর্যন্ত তারা অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করেছেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে ছিল তাদের রমরমা বাণিজ্য।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করে ৩ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানান ডিবির এসআই শামীম আহম্মেদ। শুনানী শেষে আদালত তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিবি কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন।

তাদের হেরোইন ক্যারিয়ারের কাছে নিজেদের বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটি পেমেন্ট করেছেন। ওই পেমেন্টের সূত্র ধরেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রথমে হেরোইনের ক্যারিয়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

এডিসি সুমা জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিকাশ লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাদের দুইটি বিকাশ নম্বর মাসে দুই লক্ষাধিক টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে তারা সর্বনম্নি ৫ হাজার এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার করে টাকা নেয়।

ধরা পড়ার ভয়ে তারা বেশি টাকা দাবি করে না। কারণ বেশি টাকা দাবি করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হতে পারে।

তাদের ছয়জনের একটি গ্রুপ আছে। সবাই একসঙ্গে হোরোইন সেবন করেন। এজন্য দিনে ৫-৭ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়।

আর টার্গেট করা সরকারি ব্যক্তিকে ফোন করলে অযথা ঝামেলা এড়াতে সাধারণ ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে দেন। ফোন করার আগে তারা বিভিন্ন সরকারি দফতরের ওয়েবসাইট থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্র্তাদের নম্বর সংগ্রহ করেন। গ্রেফতারকৃতরা ডিবিকে জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় তাদের ব্যবসা ছিল খুবই ভাল। টার্গেট করে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে ফোন দিলেই তারা টাকা পাঠিয়ে দিতো।

তারা সৎ কর্মকর্তাদের ফোন করেন না। যারা তুলনামূলক অসৎ ও অনেক টাকার মালিক তাদের বিষয়ে খুঁজ-খবর নিয়ে ফোন করেন। ফোন করে 'হাত খরচের' টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেয়া হয়।

এ সংক্রান্ত মামলার বাদী এবিএম সিদ্দিক জানান, প্রতারক শিবলুর বাবার নাম আব্দুস সহিদ রেনু। গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানার রক্ষিত পাড়ায়।

সোহাগের স্থায়ী ঠিকানা জানা যায়নি। তার বাবার নাম আমান উল্লাহ। থাকেন গেণ্ডারিয়ার ৩৪ নম্বর এসকে দাস লেনে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আহম্মেদ জানান, প্রতারণার সময় তারা নিজেদেরকে ক্রাইম রিপোর্টার, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার চিফ রিপোর্টার বা সম্পাদক বলে পরিচয় দেন।

তারা প্রকৌশলী, খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, যুগ্মসচিব, উপসচিব এবং পানিউন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিসহ অনেকের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এরইমধ্যে তাদের কয়েকজনের নাম জানিয়েছেন গ্রেফতারকৃতরা।

তারা হলেন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, লক্ষীপুরের গোডাউন ইনচার্জ রামিম পাঠান, লক্ষীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নান্নু, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আরজুল হক, সিলেট এলজিএডির নির্বাহী প্রকেৌশলী এসএম মহসীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আমিনুল হক, ঢাকা কর অঞ্চল-৯ এর উপ করকমিশনার একেএম আজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

 

Bootstrap Image Preview