Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দাতের মাজন আর ইয়াবার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি হচ্ছে হেরোইন!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৪:৪০ PM
আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:২৩ PM

bdmorning Image Preview


দেশে ভেজাল ও নকল হেরোইনসহ  নানা ধরনের মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। সীমান্ত এলাকা ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্য কারখানার আড়ালে ভেজাল হেরোইন তৈরি করা হচ্ছে। এসব নকল ও ভেজাল হেরোইন সেবনে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মাদকসেবীরা। তাদের মাধ্যমে সমাজে ছড়াচ্ছে নানা রোগ।

২০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের একটি বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ভেজাল হেরোইন তৈরির সঙ্গে জড়িত মোশাররফ হোসেন (৪২) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।

রসুলপুরের ৪৩ নম্বর বাড়িতে দাঁতের মাজন কারখানার আড়ালে মোশাররফ ভেজাল হেরোইন তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। নিজ বাসায় তিনি বিভিন্ন কেমিকেল দিয়ে ভেজাল হেরোইন তৈরি করতেন।

র‌্যাব কর্মকর্তাদের মোশাররফ জানান, দাঁতের মাজন তৈরির কেমিকেল ও ইয়াবা গুঁড়ো করে তা হেরোইনের সঙ্গে মিশিয়ে ভেজাল হেরোইন তৈরি করতেন। এরপর দালালদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে তিনি তা তুলে দিতেন। দীর্ঘদিন তিনি এ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।

তার দাবি, কয়েকজন পুলিশ সদস্যও তার কাছ থেকে এসব ভেজাল হেরোইন নিতেন। র‌্যাব-২-এর সিপিসি-৩-এর অধিনায়ক মহিউদ্দিন ফারুকী যুগান্তরকে বলেন, দাঁতের মাজন কারখানার আড়ালে মোশাররফ ভেজাল হেরোইন তৈরি করতেন। এ ধরনের কারখানার আড়ালে আর কেউ মাদক তৈরির কাজে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হেরোইনসেবী আকরাম আলী বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় তিনি হেরোইন নিচ্ছেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে তিনি প্রায়ই হেরোইনের স্বাদ পাচ্ছেন না, নেশাও হচ্ছে না। পাশাপাশি সেবনের পর শরীরে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। তার ধারণা, অধিক লাভের আশায় মাদক কারবারিরা হেরোইনে অন্য কিছু মেশায়।

জানা গেছে, শুধু হেরোইন নয়, ইয়াবা ও ফেনসিডিলও ভেজাল হচ্ছে। ভেজালের কারণে মাদকগুলো বিষাক্ত হয়ে পড়ছে। এসব মাদক সেবন করে মাদকাসক্ত নারী-পুরুষ ও শিশু নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অধিক লাভের আশায় মাদক কারবারিরা ফেনসিডিলে ভেজাল মেশাচ্ছে।

মেথাঅ্যামফেটামিন, সুডোএফিড্রিন ও ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে ইয়াবা তৈরি করছে। কোনো কোনো ইয়াবা ট্যাবলেটে ৯৫ শতাংশ ক্যাফেইন, স্বল্প পরিমাণে মেথাঅ্যামফেটামিন ও সুডোএফিড্রিন থাকে। ইয়াবার ভেজালে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, চকলেট বা কফির সুগন্ধি, ব্যাটারির লিথিয়াম, সালফিউরিক ও হাইড্রোক্লোরাইড এসিড ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা যুগান্তরকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে জব্দ অধিকাংশ মাদকই ভেজাল।

দেশে হেরোইনের ৮০ ভাগ আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। মাদক ব্যবসায়ীরা সীমান্তে ভেজাল মিশিয়ে হেরোইনের পরিমাণ দ্বিগুণ করে। ১০০ গ্রাম হেরোইনে ১০০ গ্রাম ভেজাল মেশানো হয়।

গুল, দাঁতের মাজনসহ বিভিন্ন অপদ্রব্য হেরোইনে মেশানো হয়। দেশে যে হেরোইন পাওয়া যায়, তাতে ৩ থেকে ৫ ভাগ হেরোইন থাকে। তিনি বলেন, ইয়াবা ও ফেনসিডিলও ভেজালের উপস্থিতি মিলছে।

জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও মানস সভাপতি প্রফেসর ডা. অরূপ রতন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মাদক এমনিতেই ক্ষতিকর। এর মধ্যে ভেজাল মেশানো হলে তা আরও বেশি ক্ষতিকর।

তিনি বলেন, ভেজাল মাদকে কিডনি, লিভার ও ফুসফুস বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তবাহী শিরার ক্ষতি হওয়ায় রক্ত পরিবহনে সমস্যা হয় এবং মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় স্মৃতিশক্তির সমস্যা হয়। যারা অধিক পরিমাণ হেরোইন সেবন করেন তারা নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েন। হার্ট ও ত্বকে সমস্যা হয়।

হেপাটাইটিস রোগে আক্রান্তের হার বেড়ে যায়। সন্তান জন্মদানে নারীদের অক্ষমতা ও গর্ভপাতের মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, মাদক রুখতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, মাদক এমনিতেই ক্ষতিকর। এর মধ্যে ভেজাল হলে সেটি আরও ক্ষতিকর। তিনি বলেন, মাদকের সমস্যা রুখতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই। সচেতনতাই পারে মাদককে রুখে দিতে।

জানা গেছে, ভারত থেকে আসা ফেনসিডিল ৯০-এর দশকে মাদকসেবীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তখন ৪০-৬০ টাকায় এক বোতল ফেনসিডিল বিক্রি হলেও এখন ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview