Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ভারত সীমান্তে লাখো মানুষ; দেখে হাসি, ছুঁতে না পারায় কান্নার রোল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৫ PM
আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:২৫ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


রক্তের সম্পর্ক আলাদা করতে পারেনি কাঁটাতার। স্বজনদের এক পলক দেখতে কয়েক শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্তে ছুটে এসেছেন লাখো মানুষ। প্রথম দেখাতেই হাসলেন স্বজনরা, তাদের মধ্যে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। পরে কেঁদে ভাসিয়েছেন বুক। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা কান্না-হাসিতে ভরে উঠেছিল ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাপসা ও রাণীশংকৈল উপজেলার কোচল সীমান্ত এলাকা। 

প্রতিবারের মতো এবারও শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুই বাংলার সীমান্তের মাঝামাঝি কুলিক নদীর তীরে পাথরকালী মেলা উপলক্ষে লাখো মানুষের সমাগমে মিলন মেলায় পরিণত হয় সীমান্ত এলাকা।

স্বজনদের প্রতি বছর এক পলক দেখার সুযোগ করে দেয় দুদেশের দায়িত্বে থাকা সীমান্তে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে স্বজনদের এক পলক দেখার সুযোগ হলেও একটু বুকে জড়িয়ে ধরার খায়েস পূরণ করতে দেয়নি সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। 

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার অখিল চন্দ্র পাল জানান, ভারতের রায়গঞ্জে তার বড় ভাই শিশির চন্দ্রের বাড়ি। দেশ স্বাধীনের আগে বড় ভাই ভারতে চলে যায়। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা এবং সে ভিসা পাসপোর্ট ছাড়া যাতায়াত করতে পারে না। তাই ভাই ও ভাইয়ের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে প্রতিবছর এই মেলায় আসেন তারা।

রসুলপুরের মুর্তজা বলেন, ‘মোর ভাগিনা আশরাফ ইন্ডিয়ার মালদার কালিয়াচোখ থানাত থাকে, ওইঠে মোর বোনটাকেও বেহা দিছি। পাসপোর্ট, ভিসার ঝামেলাত যাবা পারুনি কোনোদিন বোনডার শ্বশুড়বাড়িত। মেলাত ওমারে সঙ দেখা করিবা অসিজু।’
 
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে আসা রওশন এলাহী জানান, চাচা ভারতে থাকেন দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তার সঙ্গে কোনো দেখা না হওয়ায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।

বগুড়ার গাবতলী থেকে ভাগ্নির সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন রানুপাল। তিনি জানান, অনেকদিন পর আজ ভাগ্নি ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাই অনেকটাই আনন্দিত। তারাও আমাদের বিভিন্ন উপহার দিয়েছে আমরাও তাদের এ দেশের শাড়ি কাপড় দিয়েছি।

মেলা কমিটির সভাপতি নগেন কুমার পাল জানান, প্রতি বছর দুই দেশের মিলন মেলার জন্যই পাথরকালী মেলার আয়োজন করা হয়। দেশ বিভাগের পূর্বে এ এলাকা ছিল ভারতবর্ষের আওতায়। পরবর্তীতে দেশ ভাগ হলে এখানে বসবাসরত বাসিন্দাদের অনেকেই ভারতে পড়ে যায়। আর পাথরকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর ডিসেম্বরের ১ম শুক্রবার। এই এলাকার বাসিন্দারা আত্বীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে বছর জুড়ে।

এ দিকে মেলাকে কেন্দ্র করে বিজিবি ও বিএসএফের পতাকা বৈঠক হয়েছে। দুদেশের সীমান্তের বিভিন্ন কাজে সহায়তা আশ্বাস প্রদান করেছেন দুই দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী। 

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি ছিল না। আমরা প্রতি বছরই চেষ্টা করি দুই বাংলার স্বজনদের এক পলক দেখা ও কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ার। 

Bootstrap Image Preview