Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতি সপ্তাহে ১২ বছরের কিশোরীকে বন্ধুদের কাছে পাঠাতেন বাবা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:০৬ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৮:০৬ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দু বছর ধরে নির্যাতীতা হয়ে আসছিলো কিশোরী মেয়েটি। প্রতি সপ্তাহান্তে মেয়েটিকে নিজের বন্ধুদের কাছে ঠেলে পাঠাতেন বাবা। এ ঘটনায় বাবা ও তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ১২ বছরের ওই কিশোরী।

মেয়েটি পুলিশকে জানায়, ঘটনা শুরু দু বছর আগে। প্রায়ই বন্ধুদের বাসায় মদ খেতে ডাকতেন তার বাবা। মাতাল সেই মানুষগুলো বাবা-মায়ের মেয়েটিকে নিয়ে মজা করতো। তার গয়ের এখানে সেখানে স্পর্শ করতো। এর আগে থেকেই মেয়েটির মাকে নিয়েই ফূর্তি করতো লোকগুলো। অনেক সময় দেখা যেত তাদের কেউ কেউ মাকে নিয়ে তাদের এক রুমের বেডরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিতো। ছোট শিশুটি এটাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করতো। এভাবেই কাটছিল তার বিবর্ণ শৈশব।

এরপর এলো সেই ভয়াবহ দিন। বাবা তার নিজের মেয়েকে একজন পুরুষের সঙ্গে জোর করে ওই ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেন। এরপর পুরুষটি তার চরম সর্বনাশ করে। ফলে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় মেয়েটির শৈশব। কেননা এরপর থেকে নিয়মিতই ঘটতে থাকে ব্যাপারটি। বাবাই ফোনে ফোনে খদ্দের জোগার করতেন। আর অর্থের বিনিময়ে মেয়েকে তাদের সঙ্গে থাকতে বাধ্য করতেন। এরপর থেকে মেয়েটিকে অন্তত ৩০ জন পুরুষ ধর্ষণ করেছে।

অনেক সময় বাবা তাকে নগ্ন ছবি তুলতে বাধ্য করতো এবং সেগুলো নানা ব্যক্তির কাছে পাঠানো হতো। ওই ছবি দেখে খদ্দেররা আসতো তার বাড়িতে। এভাবেই চলছিল গত কয়েক বছর ধরে। এ বছরের শুরুর দিকে তিনমাস ধরে মেয়েটির মাসিক হচ্ছিল না। এতে তার বাবা-মা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তারা তাকে একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।, যিনি একটি আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করাতে বলেন এবং কিছু ওষুধপত্র দেন।

কিন্তু গত ২০শে সেপ্টেম্বর এই চরম শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়। স্কুলের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে শিশুকল্যাণ কর্মকর্তারা মেয়েটির কাছে যায়। তাদের জেরার মুখে মেয়েটি এক পর্যায়ে ভেঙে পড়ে এবং সব বলে দেয়। এরপর তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসে। শিশুকল্যাণ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় মেয়েটি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে।

এই ঘটনায় তার বাবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনসহ একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ মেয়েটির বাবার পরিচিত আরও পাঁচজন ব্যক্তিকে খুঁজছে। পরিবারটির পরিচিত ২৫ জন ব্যক্তির একটি নাম ও ছবি দিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে মেয়েটিকে দেখাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

তবে মেয়েটি কারো চেহারাই ঠিক করে মনে করতে পারছে না। তার কাছে সব চেহারাই ঝাপসা বলে মনে হচ্ছে।

দক্ষিণ ভারতের একটি বর্ধিষ্ণু শহরে বসবাস করতো পরিবারটি । এই শহরটি, উঁচু পাহাড়, পরিষ্কার ঘরবাড়ি আর স্বচ্ছ নদীর জন্য পরিচিত।

বাড়ির দরজায় আঁকা যে ছবি

আশ্রয়কেন্দ্রে আসার পর প্রথম দুইদিন টানা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে কিশোরী মেয়েটি। এরপর সে হিজিবিজি লিখতে শুরু করে দেয়ালে। সে সেখানে লেখে যে, তার আম্মাকে সে কতটা ভালোবাসে। আসলে এটা তার পুরনো অভ্যাস। বাড়িতে থাকতেও সে তাই করতো। মেনর কষ্টগুলো এভাবে দেয়ারৈ লিখে প্রকাশ করার চেষ্টা করতো।

অন্যদিকে তার মা বলেছে, মেয়ে নির্যাতনের গল্প বানিয়ে বানিয়ে বলছে। তার ভাষায়, ‘আমাদের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার পর আমাদের একটা শিক্ষা দিতেই সে এসব কথা বলছে।’

মেয়েটির মা আরো বলেন, একটা সময়ে তাদের অবস্থা এতোটা খারাপ ছিল না। তার স্বামী প্রতিদিন এক হাজার রূপি উপার্জন করতেন। কিন্তু পরে পরিস্থিতি বদলে যায়। এখন তিনি একটি খালি বাড়িতে একা বাস করছেন। মেয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে। আর কারাগারে বিচার শুরু হওয়ার অপেক্ষায় স্বামী।

মেয়েটির বাড়ির দেয়ালে নানা ধরনের ছবি আঁকা রয়েছে। মেয়ের অনুপস্থিতিতে এসব ছবিই যেন তার স্মৃতি ধরে রেখেছে। মা বলেন,‘সে দেয়ালে হিজিবিজি ছবি আঁকতে পছন্দ করতো। সে শুধু এটাই করতো।’

‘বন্ধুরা, আমি যদি মন খুলে অন্তরের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারতাম, তাহলে সেটা নিজের জন্যই একটা অর্জন হতো’। একটি কাগজে এই বাক্যটি লিখে দরজায় সেঁটে রেখেছে মেয়েটি।

কয়েকমাস আগে মা আর মেয়ের মধ্যে একটা ঝগড়া হয়। এরপর স্কুল থেকে ফেরার পথে কিছু নীল রঙের পেন্সিল নিয়ে আসে মেয়েটি। রং দিয়ে একটি পাম গাছ ও চিমনিসহ একটি বাড়ির ছবি আঁকে সে, যার সামনের দরজা দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সম্পূর্ণ কল্পনা থেকেই ছবিটি এঁকেছে সে। এরপর সে তাড়াতাড়ি দরজার নিচে একটা কথা লিখে বেরিয়ে যায়। সেখানে কি লেখা ছিল জানেন? ‘সরি আম্মা’। মেয়েটি যে তার পরিবারকে খুব ভালো বাসতো এটাই তার প্রমাণ। কিন্তু দরিদ্র পরিবারটি তার ভালোবাসার মূল্য দিতে পারেনি। মেয়েটির সর্বস্ব কড়ে নিয়ে তাকে পথে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেছে তার বাবা। এরকম বাবাকে কি মেয়েটি কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবে? আপনারা কি মনে করেন?

Bootstrap Image Preview