Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

কুরআন শরিফ কম ছাপিয়ে ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৫৬ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৬:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


ইসলামিক ফাউন্ডেশনে (ইফা) প্রায় এক লাখ কপি কুরআন শরিফ কম ছাপিয়ে দুই কোটি টাকা আত্মসাতে নানা চাতুর্যের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। মহাপরিচালক (ডিজি) কৌশলে ইফা প্রেসের পরিবর্তে বন্ধুর প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে এ অনিয়মটি করার সুযোগ করে দেন। আর সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কার্যাদেশের চেয়ে কমসংখ্যক ছাপানো হয়।

এই অনিয়ম ও আত্মসাতের বিষয়টি ওঠে আসে সিভিল অডিট অধিদফতরের এক রিপোর্টে। সরকারি এই সংস্থাটি ইফার বর্তমান ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের মেয়াদকাল ২০০৯-১৮ পর্যস্ত বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করে সুনির্দিষ্ট ৯৬টি খাতে মারাত্মক অনিয়মের বিষয় উদঘাটন করে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্যাদেশে উল্লিখিত পরিমাণের চেয়ে কমসংখ্যক কুরআনুল কারিম সরবরাহ নেয়ায় সরকারের এক লাখ ৯৪ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮০ কপি কুরআনুল কারিম সরবরাহের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রেস থেকে পাঁচ লাখ কপি কুরআনুল কারিম সরবরাহ করা হয়।

বাকি ৯৯ হাজার ৬৮০ কপি কুরআনুল কারিম সরবরাহ করা হয়নি। অথচ পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮০ কপি কুরআনুল কারিম মুদ্রণের বিল বাবদ পুরো ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে।

জানা গেছে, সারা দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ৮০ হাজার কেন্দ্রে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে স্কুলব্যাগ, ছাতাসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ দেয়া হতো। এ পুরস্কারের অর্থ প্রতিটি জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হতো। জেলা পর্যায় থেকে তা ক্রয় করে শিশুদের দেয়া হতো।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে হঠাৎ করে এভাবে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রধান কার্যালয় থেকে পুরস্কার হিসেবে কুরআন শরিফ প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়। এরপর ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসে ম্যানেজার হিসেবে ইফা ডিজির এক নিকটাত্মীয়কে বদলি করে নিয়ে আসা হয়।

প্রথমে মহাপরিচালক কুরআন শরিফ ছাপানোর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। এরপর প্রকল্প দলিলে পুরস্কার হিসেবে রাখা ১১ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা প্রেসে স্থানান্তর করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেস কুরআন শরিফ ছাপানোর উদ্যোগ নিলে ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল তা বন্ধ করে দেন।

তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসের পরিবর্তে বাইরের প্রতিষ্ঠানে তা ছাপানোর জন্য প্রেসের পক্ষ থেকে টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডারের মাধ্যমে কৌশলে তার বন্ধুর প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ কপি কম ছাপানো হয় এবং এভাবে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

বিষয়টি ধরা পড়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রিন্টিং প্রেসের স্টক রেজিস্টারের কারণে। রেজিস্টারে দেখা যায় কুরআন শরিফ সরবরাহ করা হয়েছে পাঁচ লাখ। আর কার্যাদেশে রয়েছে পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৬৮০ কপি। অর্থাৎ প্রায় এক লাখ কপি কম ছাপানো হয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নূরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, প্রকল্পের পক্ষ থেকে সরাসরি টেন্ডার করা অথবা টেন্ডার ছাড়া সরাসরি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কাজ দেয়া যায়।

কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কার্যাদেশ দিলে তারা আবার টেন্ডার করবে এবং এভাবে বাইরের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বিধান নেই। তিনি বলেন, আমাদের প্রেসে দক্ষ জনবল ও সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে।

কিন্তু এ জনবলকে বসিয়ে রেখে এবং সরকারি মেশিন ফেলে রেখে বেসরকারি প্রেসে কেন কাজ দেয়া হয়, তা বোধগম্য নয়। নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে জানার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ইফা ডিজির সাথে কথা বলা যায়নি।

এর আগে তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। প্রসঙ্গত, ইফার ২০০৯-১৮ অর্থবছরের ১০ বছরের এই নিরীক্ষায় ৯৬টি খাতে সর্বমোট ৭৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। তার মধ্যে কুরআন শরিফ মুদ্রণসহ পাঁচটি খাতে ১৬ কোটি ৭০ লাখ চার হাজার টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।

প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারিক কর্মকর্তা সামীম মোহাম্মদ আফজাল ২০০৯ সাল থেকে ইফার ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার সর্বশেষ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে।

গত ৯ জুলাই ’১৯ থেকে ১০ অক্টোবর ’১৯ পরিচালিত এ নিরীক্ষার খসড়া রিপোর্টটি গত ২৪ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এগ্রিড মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও অডিট সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিভিল অডিট অধিদফতরের উপপরিচালক এম এম নিয়ামুল পারভেজের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের টিম এ নিরীক্ষা পরিচালনা করে। এতে ইফার ১২টি কার্যালয়ের ২০০৯-১৮ সালের বরাদ্দ ও ব্যয় খতিয়ে দেখা হয়। অডিট টিমের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইফার বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে ফেরত দেয়া অর্থ সমন্বয় করা হয়েছে। আরো কিছু ফেরত পেলে তাও সমন্বয় করা হবে। এগ্রিড মিটিং হয়ে গেছে। ওখানেই খসড়া রিপোর্টটিই চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রিপোর্টে অনিয়মের পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদান এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র: নয়াদিগন্ত

Bootstrap Image Preview