ধর্ষণ বন্ধ হবে কবে অথবা কী করলে ধর্ষণ বন্ধ হবে? এই প্রশ্নটির সবচেয়ে ভালো উত্তর, ‘যে দিন পুরুষ ধর্ষণ করা বন্ধ করবে, সে দিনই বন্ধ হবে ধর্ষণ’। কবে কখন বন্ধ করবে, সে সম্পূর্ণই পুরুষের ব্যাপার। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিক যে এই দিন থেকে বা এই সপ্তাহ থেকে বা এই মাস থেকে বা এই বছর থেকে নিজের প্রজাতির ওপর ভয়াবহ বীভৎস এসব নির্যাতন তারা আর করবে না।
দিল্লির বাসে গণধর্ষণের ঘটনা শুধু ভারতবর্ষেরই নয়, পৃথিবীর বহু দেশের মানুষকে কাঁদিয়েছে। ধর্ষকদের ফাঁসি হলো, কিন্তু ধর্ষণের সংখ্যা সমাজে সংসারে মোটেও কমেনি। মানুষ আর কত রাস্তায় নামবে প্ল্যাকার্ড পোস্টার হাতে, কতদিন আর চিৎকার করবে, চিৎকার করবে এবং যথারীতি কেউ শুনবে না। যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিক, যারা ভারত ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক, তাদের বিশেষ করে মেয়েদের সাবধান করে দিয়েছে যে ভারতে ধর্ষণ, খুন প্রচন্ড বেড়েছে, পর্যটক মেয়েদেরও ছাড় দিচ্ছে না, সুতরাং ভারত ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই ভালো।
ভারতের হায়দারাবাদে প্রিয়াংকা রেড্ডি নামের এক পশুর ডাক্তারকে গণধর্ষণ করার পর পুড়িয়ে মেরে ফেলেছে কিছু লোক। গ্রেফতার করা হয়েছে চার ধর্ষককে। তাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, এমনকি ফাঁসিও দেওয়া হচ্ছে, তারপরও কিন্তু ধর্ষণ মোটেও কমছে না। ধর্ষকেরা ফাঁসিকে ভয় পায় কে বলেছে?
অপরাধীরা অপরাধ করার সময় এ কথাটা গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে তারা ধরা পড়বে না। হায়দারাবাদের ধর্ষকরাও তা মনে করেছে। তাই পুড়িয়ে এমনভাবে ছাই করে ফেলেছে প্রিয়াংকাকে, যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে। তাকে চিনতে না পারলেই, তাদের বিশ্বাস, তারা দিব্যি বেঁচে যাবে। প্রশ্ন হলো, কেন তারা মনে করে তারা ধরা পড়বে না! মনে করে, কারণ এমন ঘটনা অহরহই ঘটে যে অপরাধীরা ধরা পড়ে না। জনতার ভিড়ে অপরাধীরা মিশে যায়। প্রমাণ ছাই করে দিয়ে অর্থাৎ নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে হায়দারাবাদের ধর্ষকরাও দিব্যি বেঁচে থাকতে চেয়েছিল।
তনুর কথা মনে আছে? তনু নামের একটি উনিশ বছরের মেয়েকে কুমিল্লায় গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল। তনুর হিজাব তনুকে ধর্ষণ থেকে বা খুন হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেনি। পুরুষ যখন মেয়েদের নির্যাতন করে, তারা মেয়েদের পোশাক দেখে করে না। তারা মনে করে নির্যাতন করার অধিকার তাদের আছে, সে কারণেই করে নির্যাতন।
শৈশব থেকে মানুষকে শিক্ষিত করা হয় মেয়েরা মানুষ, মেয়েরা যৌনবস্তু নয়, তাহলে দেখা যায় সেই সমাজে মেয়েদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখলেও পুরুষ মনে করে না, তাদের কোনও রকম অশালীন মন্তব্য করার বা তাদের স্পর্শ করার অধিকার কোন পুরুষের আছে। অসভ্য সমাজে পুরুষেরা, নারী যে পোশাকই পরুক না কেন, নারীকে যৌন হেনস্তা করে। সভ্য সমাজে পুরুষরা, নারী যে পোশাকই পরুক না কেন, নারীকে যৌন হেনস্তা করে না।