রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অংশীজনের ভূমিকার ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তারা বলছে, এ সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে চীন, ভারত ও জাপানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই তিন দেশ বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু বিভিন্ন স্বার্থসম্পর্কিত কারণে তিনটি দেশই মিয়ানমারের পক্ষে ভূমিকা পালন করছে। ফলে এ সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি কার্যত বাধাগ্রস্ত হয়।
বৃহস্পতিবার টিআইবির উদ্যোগে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থান : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এই কাজের গবেষণা উপদেষ্টা ছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতটির মতো সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে-যাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে লাশ গুম করা, ইয়াবা ও মানবপাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়ারও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
পুলিশ, পাসপোর্ট অফিস ও নির্বাচন কমিশনের কিছু অসাধু কর্মচারী এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে কিছু রোহিঙ্গা জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরিসহ মোবাইল সিম কার্ড সংগ্রহ করছে। এ ছাড়া সরকারের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ঘাটতির কারণে ক্যাম্পগুলোয় প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গার হাতে স্মার্টফোন পৌঁছে গেছে। পাশাপাশি ১০টি ইউটিউব চ্যানেলে তারা সক্রিয় রয়েছে। এর ফলে বাাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়াসহ নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা সংকট উৎপত্তির মূল কারণ মিয়ানমার সরকারের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতের ব্যর্থতা। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক দায়-দায়িত্বও মিয়ানমার সরকারের ওপর বর্তায়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ অর্থাৎ উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়নি। এ জন্য রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রত্যাবাসনের প্রতি সৃষ্টি হয়নি আস্থাও। অপরদিকে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অংশীজনের ভূমিকারও ঘাটতি রয়েছে।