Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

চিকিৎসকের ভুলে এক পরিবারের ৭ জন প্রতিবন্ধী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৬ PM
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৬ PM

bdmorning Image Preview


স্বামী প্যারালাইজড, চার সন্তান প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী দুই নাতিও। একই পরিবারের এই সাতজন প্রতিবন্ধী নিয়ে অথৈ সাগরে ভাসছেন সরলা বালা। অভাবের সংসারে সাতটি বোঝা নিয়ে কষ্টে আছেন তিনি।

এই সাতজনের মধ্যে দুজন প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা যৎসামান্য। সরলা বালার দাবি, তার এই দুর্দশার জন্য সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা দায়ী। কারণ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেয়ার পরই তার তিন প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম হয়েছে। যশোরের চৌগাছার পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা নিরঞ্জনের স্ত্রী সরলা বালা।

সরলা বালার প্রতিবন্ধী চার সন্তানের মধ্যে বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে মোহন (১৯), যমজ মিলন ও নয়ন (১৫), মেয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অম্বালিকা (৩৫) এবং সেজো মেয়ের দুই ছেলে বিদ্যুৎ (১৪) ও বিধান (১২) বুদ্ধি-শারীরিক প্রতিবন্ধী। ঋষি সম্প্রদায়ের এই পরিবারের আয়ের উৎস ছাগলের প্রজনন করিয়ে অর্জিত টাকা।

সরলা বালা বলেন, বিয়ের পর আমার পরিবার-পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। তোমাদের কাকাও (নিরঞ্জন) এসব নিয়ে ভাবতেন না। এভাবেই আমার একে একে সাত সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে একটি সন্তান শৈশবে মারাও যায়। এরপর চৌগাছা সরকারি হাসপাতালের লোকেরা আমার বাড়িতে আসে। সে সময় হাসপাতালের চিকিৎসকদের আশ্বাসে ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে কি ৯৯ সালে চৌগাছা হাসপাতালে আমার পেট কেটে অপারেশন (লাইগেশন-স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি) করা হয়। কিন্তু তারপরও ৯৯ সালে আমার পেটে সন্তান আসে।

আমি হাসপাতালে গেলে তারা বলেন, সন্তান আসেনি। তোমার পেটে কিছু হয়েছে। ২০০০ সালের ৫ জুন আমার ছেলে মোহনের (বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী) জন্ম হয়। এরপর আমি আবারও হাসপাতালে গেলে আমাকে আবারও অপারেশন করা হয়। এরপর আমি আবারও গর্ভবতী হয়ে পড়ি। এবার আমার যমজ সন্তান পেটে আসে। সন্তান পেটে আসলে আমি আবারও হাসপাতালে যাই। তখনো ডাক্তাররা বলে তোমার পেটে কোনো সন্তান নেই। আমি বলি যমজ সন্তান আছে।

এ নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। তারা জোর দিয়ে বলে, তোমার পেটে সন্তান নেই। আর আমি বলি আছে, যমজ সন্তান আছে। এরপর তারা আমাকে যশোরে পাঠায় পরীক্ষা করতে। সেখানে ডাক্তাররা আমার পেট টিপে ব্যথা করে দেয়। তখন আমি রাগ করে বলি আপনারা আমাকে ছেড়ে দেন। আমার পেটে যমজ সন্তান। আর আপনারা শুধু টিপে ব্যথা করে দিচ্ছেন। পেটের মধ্যে যদি আমার সন্তানরা মারা যায়। আপনারা দায়িত্ব নেবেন? এরপর আমার কি যেন পরীক্ষা করা হয়। ডাক্তাররা নিজেরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন। পরে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

২০০৪ সালে (১ জানুয়ারি) আমার যমজ ছেলে মিলন ও নয়নের (বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী) জন্ম হয়। ওদের জন্মের পর আমাকে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে কিছু টাকা দেয়া হয়। বলা হয় এ নিয়ে তুমি কোনো ঝামেলা করিও না। আমি গরিব মানুষ। আমি কি করব, তোমরাই বলো?

তিনি বলেন, বড় ছেলে মদন স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকে। করিমন ভ্যান চালিয়ে নিজের সংসার চালায়। বড় মেয়ে অম্বালিকা আমার ঘাড়ে। অন্য মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তাদের মতো তারা কোনো রকমে কাজকাম করে চলে। সেজো মেয়ের দু’ছেলে। তারাও বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের কোনো জমি নেই। তারা এখানেই থাকে। বড়মেয়ে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। আর স্বামীর একটা কার্ড করে দিয়েছে কাউন্সিলর।

স্থানীয় কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান বলেন, ওই পরিবারের বড় মেয়ে ও তার বাবাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড অপ্রতুল হওয়ায় তাদের সবার ভাতা দেয়া যায় না। শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা হলেই কেবল সবাইকে ভাতার আওতায় আনা যেত।

চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি কর্মকার বলেন, বর্তমানে কোনো পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ২০১৬ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি আছে, দেশের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হবে। সেটি হলেই কেবল ওই পরিবারের সবাইকে ভাতা দেয়া সম্ভব হবে।

যশোর জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিন বলেন, একই পরিবারের প্রতিবন্ধী সাত সদস্যের পাশে দাঁড়ানো উচিত। সরকারিভাবে উপকরণ ও আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসনের সুযোগ আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সহায়তার ব্যবস্থা করা করা হবে।

Bootstrap Image Preview