ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সদর থেকে পনেরো কিলোমিটার আর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার ভূঁইয়ার বাজার থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে জরাজীর্ণ কয়েকটি ঘর। এ অঞ্চলে এই বাড়িটি ‘বোবাবাড়ি’ নামে পরিচিত। যে বাড়িতে দিনদিন বাড়ছে বাকপ্রতিবন্ধীর সংখ্যা।
একজন থেকে এখন এ সংখ্যা এখন এগারোয় দাঁড়িয়েছে। অভাব যাদের নিত্যসঙ্গী, সরকারিভাবে পুনর্বাসনের নেই কোনো উদ্যোগ।
মৃত নায়েব আলী মুনশীর ছেলে মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, শত বছর পূর্বে মৃত ইসমাইল হোসেন প্রথম বাকপ্রতিবন্ধী এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির জন্ম নেয়া একমাত্র সন্তান মৃত ছমেদ আলী ছিলেন বাকপ্রতিবন্ধী।
ছমেদ আলীর তিন মেয়ে চান বানু (৬৬), তাহের বানু (৫৬), জাহের বানু (৪৭) ও তিন ছেলে মেরাজ মিয়া (৬৪) ও আব্দুস সাত্তার (৫০) হন বাকপ্রতিবন্ধী। একমাত্র সুস্থ্য ছিল তারা মিয়া, তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তাদের মধ্যে তাহের বানুর ছেলে রবি মিয়া সুস্থ্য আর জাহের বানু ছিলেন নিঃসন্তান।
অপরদিকে বাকপ্রতিবন্ধী চান বানু প্রথম বিয়ে করেন খোরশেদ মিয়াকে। তার সন্তান আব্দুল খালেক (২৯) হন বাকপ্রতিবন্ধী। এভাবে একের পর এক বাড়তে বাড়তে সেই সংখ্যা এখন ১১ জনে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিন পলটিপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বোবাদের ওই বাড়িটিতে নারী, পুরুষ ও শিশু মিলে ৩০ জনের বসবাস।
প্রতিবেশী গৃহবধূ জেসমিন আক্তার আর তার স্বামী মো. ইসলাম উদ্দিন দীর্ঘদিন তাদের সঙ্গে বসবাস করায় বাকপ্রতিবন্ধীদের ভাষাও তারা আয়ত্ব করেছেন।
সংবাদকর্মীদের বক্তব্য দোভাষীর ন্যায় বাকপ্রতিবন্ধীদের মাঝে তুলে ধরেন। আকার-ইঙ্গিতে প্রতিবন্ধীরাও তারা তাদের দুঃখের বর্ণনা তুলে ধরেন।
প্রতিবেশী জেসমিন আক্তার বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী এই নারীদের বিয়ে হলেও তারা বেশিদিন স্বামীর সংসার করতে পারেননি। শারীরিক সমস্যার কারণে স্বামীরা তাদের বাবার বাড়িতে রেখে চলে গেছেন। ফলে তারা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কর্মসংস্থানের শক্তি ও বুদ্ধি থাকলেও তাদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রতিবেশী আরশেদ আলী।
তিনি বলেন, ওদের চিকিৎসাও প্রয়োজন, দিন দিন প্রতিবন্ধীর সংখ্যা কেন বাড়ছে, এ বিষয়েও এখনই উদ্যোগ নেয়া জরুরি।
এ দিকে তাহের বানু আর চান বানু ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদফতরের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচির তালিকায় তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটি বাড়িতে ১১ জন বাকপ্রতিবন্ধী থাকলেও তাদের অনেকের নেই প্রতিবন্ধী কার্ড।
তবে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন আব্দুস সাত্তার, তাহের বানু ও আব্দুল মালেক। বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা করিম ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের অধীনে চান বানুকে একটি পাকা ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
অপরদিকে সহনাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান জানান, ১১ জনের মধ্যে প্রতিবন্ধী কার্ড হয়েছে তিন জনের। বাকি ৮ জনের প্রতিবন্ধী কার্ডও নেই। ওরা নিয়মিত ভিক্ষা করে না, তাই ভিক্ষুক পুনর্বাসন তালিকায় নাম দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ইউএনওর প্রতিশ্রুতিকৃত ঘরটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে।
বাংলাদেশ সমাজসেবা কর্মচারী কল্যাণ সমিতি ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খান জানান, প্রতিবন্ধীদের জরিপ কাজ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী কার্ড প্রদান প্রক্রিয়াধীন।
ভাতা বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ইসতিয়াক আহম্মেদ ও সহনাটী ইউনিয়নের সমাজকর্মী মো. শফিকুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল দেয়ার পর কল রিসিভ করেননি তিনি।