সভ্যতার উন্নতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রায়ও উন্নতি এসেছে। মানুষ এখন আগের কালের সব যানবাহন ছেড়ে আধুনিক যানবাহনকে নিত্য সঙ্গী করে নিয়েছে। বিমান-হেলিকপ্টারও ব্যবহার করছে। তবে প্রচুর ব্যয়সাধ্য হওয়ার কারণে এসব বাহন তো আর সবাই ব্যবহার করতে পারে না। কিন্তু এমন একটি গ্রাম আছে, যেখানে সবারই ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার আছে। জনপ্রতি ব্যাংকে আছে কোটি টাকারও বেশি। সত্যিই চোখ কপালে ওঠার মত খবর।
হ্যাঁ, নামের গ্রাম হলেও সেখানে আধুনিকতার কোনো কমতি নেই। বরং অনেক নামিদামি শহরকে পেছনে ফেলেছে এই গ্রামের অবস্থান। বলছিলাম চীনের জিয়াংজু প্রদেশের হুয়াক্সি নামক গ্রামের কথা। দাবি করা হয় এটি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী গ্রাম। এই গ্রামটি ‘সুপার ভিলেজ’ নামে পরিচিত।
শুরুটা হয়েছিল ১৯৬১ সালে। তখন বেড়ে ওঠে হুয়াক্সি গ্রাম। স্থানীয়দের মতে, অন্য আর পাঁচটা গ্রামের মতোই গ্রাম ছিল এটি। সেখানে ছিল ক্ষেতখামার, কাঁচাবাড়ি, রাস্তাঘাট। কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সেক্রেটারি উ রেনবাওয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টার কারণেই মূলত গ্রামটি আধুনিক রূপ পায়।
গ্রামবাসীরাই হুয়াক্সিকে সোশ্যালিস্ট গ্রামের তকমা দিয়েছেন। এক সময় যারা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারাই আজ কোটিপতি। গ্রামের প্রতিটি বাসিন্দার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে কমপক্ষে ১০ লাখ ইউয়ান। বাংলাদেশি অর্থে যা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সবমিলিয়ে এই গ্রামে ২ হাজার মানুষের বাস। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামের প্রত্যেককে বিলাসবহুল ঘর, গাড়ি এবং জীবনযাপনের সব রকম স্বাচ্ছন্দ্য, সুবিধা দেওয়া হয়। আর এই সুবিধার জন্য তাদের কোনো অর্থই খরচ করতে হয় না। তবে যে কেউ এই সুবিধা পান না। কেবল গ্রামের আসল বাসিন্দারা এই সুবিধা ভোগ করেন।
বেশ কয়েকটি বড় শিল্প রয়েছে হুয়াক্সি নামের এই গ্রামে। এসব শিল্পের শেয়ারহোল্ডার গ্রামবাসীরাই। সংস্থার বার্ষিক লাভের এক-পঞ্চমাংশ দেওয়া হয় তাদের।
কী নেই এই গ্রামে? ৭২ তলা বহুতল ভবন, শপিংমল, অত্যাধুনিক থিম পার্ক সব রয়েছে এখানে। এমনকি কেউ চাইলে সহজেই নিতে পারবেন হেলিকপ্টার সেবা। গ্রামের প্রতিটি ঘরের আকার ও নকশা একই রকম। আর তাই হুট করে তাকালে মনে হয় যেন হাজারও হোটেল দাঁড়িয়ে রয়েছে সারি হয়ে।
হুয়াক্সির নিয়মকানুন কিন্তু বেশ কড়া। গ্রামবাসীদের কোনো ছুটি নেই। সপ্তাহে ৭ দিনই কাজ করতে হয় তাদের। জুয়া, মাদক সব নিষিদ্ধ এই গ্রামে। সবচেয়ে মজার নিয়ম হলো, কেউ একবার গ্রাম ছেড়ে গেলে তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয় প্রশাসন।
অবশ্য এত সুযোগ সুবিধা থাকতে কেউ গ্রাম ছাড়তে চাইবেন কেন?