Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফের বাড়ছে বিদ্যুতের দাম

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৩৪ PM
আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০১:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পরপরই বিদ্যুতের মূল্যে বড় ধরণের পরিবর্তন আনতে চলেছে সরকার। এবার বিদ্যুতের দাম সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে নির্ধারিত হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানিনির্ভর এবং ব্যয়বহুল উৎস জ্বালানি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ব্যবহার বৃদ্ধি দাম বাড়ার প্রধান কারণ। পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং অপেক্ষাকৃত কম উৎপাদন খরচের কয়লানির্ভর বড়ো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির পাইকারি ও খুচরা মূল্য বৃদ্ধিতেই সমাধান খুঁজছেন তারা।

তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ হলে এবং কিছু বেসরকারি উৎপাদককে অন্যায্য সুবিধা দেওয়া বন্ধ করলেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থেকে কম খরচে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উত্পাদনের বড়ো প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করলে বিদ্যুতের মূল্য বরং কমানো যায়।

খাতটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) জানিয়েছে, দেশে পাইকারি বিদ্যুত্ সরবরাহকারী একমাত্র সংস্থা বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। নিজ বিতরণ এলাকার জন্য খুচরা মূল্যবৃদ্ধিও চায় প্রতিষ্ঠানটি। সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত একমাত্র কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) সঞ্চালন মাশুল বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছে। আর বিতরণকারী অন্য পাঁচটি সংস্থা-কোম্পানি খুচরা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি মাসের ২৮ নভেম্বর পাইকারি এবং সঞ্চালন মূল্যহার পরিবর্তন প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি আয়োজন করেছে বিইআরসি। এরপর ১ ডিসেম্বর পিডিবি ও নেসকোর, ২ ডিসেম্বর ঢাকার দুই বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকোর এবং ৩ ডিসেম্বর ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদের মধ্যে পল্লী বিদ্যুত্ বলেছে, পাইকারি দাম না বাড়লে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

কোম্পানিগুলোর মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, এলএনজি আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিচালন ও জনবল বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি এবং আপগ্রেডেশন খরচ বাড়ায় বিদ্যুতের খুচরা মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছে তারা।

বিইআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৫ পয়সা বা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ায় সরকার। এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল।

গত ১ জুন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বিইআরসি; যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। ঐ মূল্যবৃদ্ধির হার সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল। বিইআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হারও গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়তে পারে। আর বর্ধিত ঐ মূল্যহার আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে।

তবে বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুত্ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানিগুলো বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। আবেদনগুলোর যৌক্তিকতা আমরা মূল্যায়ন করছি। একই সঙ্গে গণশুনানি আয়োজন করা হয়েছে। যৌক্তিকতা প্রমাণিত হলে মূল্যহার সমন্বয় করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বেসরকারি প্ল্যাটফরম কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর পরিচালন ব্যয় ও দুর্নীতি কমানোর অনেকগুলো পথ রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করলে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কৃত্রিমভাবে উত্পাদন খরচ বৃদ্ধি দেখিয়ে খুচরা দাম বাড়নোর চেষ্টা চলছে। এটি অন্যায় ও অন্যায্য। শুনানিতে এ বিষয়ে আমরা যুক্তি তুলে ধরব।’

প্রসঙ্গত, দেশে উত্পাদিত মোট বিদ্যুতের ৪৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ বিদ্যুত্ বিতরণ করে পল্লী বিদ্যুত্ (আরইবি)। এছাড়া পিডিবি ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ডিপিডিসি ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ডেসকো ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, নেসকো ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ওজোপাডিকো ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ বিদ্যুত্ বিতরণ করে।

Bootstrap Image Preview